ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান 

প্রকাশিত: ০০:০২, ৩১ মার্চ ২০২৩

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

ঈদ সামনে রেখে আগেভাগেই কেনাকাটা সেরে রাখছেন অনেকে। মগবাজার থেকে তোলা

ঈদের এখনো অনেক বাকি। তাতে কী? উদ্যাপনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। একসময় রোজার একেবারে শেষ পর্যায়ে অথবা মাঝামাঝি সময়ে মানুষজন ঈদের কেনাকাটা করতেন। কিন্তু এখন অত অপেক্ষা করতে দেখা যায় না। রোজার আগেই ঢাকার মার্কেটে শপিংমলে ক্রেতারা ঢুঁ মারতে শুরু করেন। দোকানিরাও পসরা সাজান আগেভাগে। এবারও তা-ই হয়েছে। রমজান আসার আগে বাজারে চলে এসেছিল নতুন নতুন ডিজাইনের জামা কাপড়। আর বর্তমানে বিপুল সম্ভার।

বিচিত্র কেনাকাটা। দুপুরের পর বা বিকেল নাগাদ অনেকেই বাসা থেকে বের হয়ে পড়ছেন। রোজা রাখায় খাবার দাবার নিয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে না। সন্ধ্যায় যেখানে কেনাকাটা সেখানেই ইফতার করা যাচ্ছে। মার্কেট বা শপিংমলের মেঝেতে বসে দিব্যি ইফতার সেরে নিচ্ছেন উৎসবপ্রেমী মানুষ। তার পর আবারও কেনাকাটা। বিশেষ করে নারীরা পছন্দের জামা জুতো খুঁজতে লম্বা সময় ব্যয় করছেন। মায়ের হাত ধরে শিশু সন্তানও বিভিন্ন শোরুম ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছোট বড় সবার চোখে মুখে আনন্দ। উৎসবের অপেক্ষা।

নিউমার্কেট, গাউসিয়া থেকে শুরু করে বসুন্ধরা সিটি শপিংমল- সব খানেই প্রাক উৎসবের ছবি দৃশ্যমান হচ্ছে। বসুন্ধরা সিটি শপিংমলে বৃহস্পতিবার কেনাকাটা করতে এসেছিলেন  সোনিয়া ও তার ননদ শায়লা। আগে আগে শপিং শুরুর কারণ ব্যাখ্যা করে সোনিয়া বললেন, ক’দিন পর মার্কেটে ভিড় অনেক বেড়ে যাবে। এত ভিড় ঠেলে পারা যায় না। তাই স্বস্তির কথা চিন্তা করে আগেভাগে চলে এসেছি। নিজের জন্য পছন্দ করে কেনাকাটা করব। তার চেয়ে বড় কথা, বাড়ির বউ হিসেবে দায়িত্ব আছে। আমাদের পরিবারে লোকসংখ্যা অনেক।

একটু একটু করে কেনাটা সেরে না রাখলে পরে ঝামেলায় পড়তে হবে। তাছাড়া ঈদ ঘিরে বাসায়ও অনেক কাজ জমা হচ্ছে। তাই বাইরের কাজটা আগে সেরে রাখছেন বলে জানান তিনি। অন্যদিকে দোকানিরা বলছেন, এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে বেশিরভাগ সরকারি-বেসরকারি অফিসে বেতন হয়ে যাবে। বেতন হাতে পেয়ে বহু মানুষ শপিং করতে আসবেন। তখন আর দম ফেলার সুযোগ থাকবে না। দোকানের বিক্রয়কর্মীরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।

এ প্রসঙ্গে দেশীয় ফ্যাশন হাউস ‘সাদাকালোর’ কর্ণধার আজহারুল হক আজাদ বললেন, দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় এবার কিছুটা টেনশনে আমরা ছিলাম। তবে এখন মনে হচ্ছে বাঙালির উৎসব আনন্দের কাছে আর সব নস্যি। ক্রমেই বাড়ছে ক্রেতা। ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে ততই ভিড় বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
খলিফাকে হারানোর শোক ॥ আরও এক খলিফা বিদায় নিলেন। মুজিবের ছিল চার খলিফা। দুজন আগেই বিদায় নিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার চলে গেলেন তৃতীয় জন- নূরে আলম সিদ্দিকী। সত্তর দশকের তুখোড় ছাত্রনেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এই ঢাকা শহরে বেড়ে ওঠেছিলেন। মৃত্যুও এখানে। গৌরব করার মতো নাগরিক চলে যাওয়ায় শহর যেন আরও নিঃস্ব হলো। বেদনায় ডুবল নতুন করে।

ইতিহাস সচেতন ব্যক্তি মাত্রই জানেন, শেখ মুজিবের স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন ও সংগ্রামকে বিপুল শক্তি সাহসের সঙ্গে এগিয়ে নিতে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিলেন তার চার খলিফা। বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য আব্দুল কুদ্দুস মাখন, শাহজাহান সিরাজ, আসম আব্দুর রব ও নূরে আলম সিদ্দিকীকে একসঙ্গে চার খলিফা বলে ডাকা হতো। সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ে এই ছাত্রনেতাদের ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনে সফল হওয়ার পর থেকে তাদের চার খলিফা বলে ডাকা শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবেও অবদান রাখেন তারা।

স্বাধীন দেশেও চার খলিফা নিয়ে আলোচনা কখনো থেমে ছিল না। জাতীয় দিবসগুলোতে নূরে আলম সিদ্দিকী তার সময়ের ইতিহাস নিজ মুখে বর্ণনা করতেন। টেলিভিশনে তার আবেগঘন কথা শুনে আজকের প্রজন্মের ছেলে মেয়রাও অভিভূত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকে জেনেছে। তার মতো করে আর কে শুনাবে বঙ্গবন্ধুর কথা? বড় ক্ষতি হয়ে গেল। গোটা দেশের। শহর ঢাকারও।

×