ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২৩:২৮, ২৩ মার্চ ২০২৩

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

পহেলা বৈশাখে বর্ণিল বর্ষবরণ উৎসব সামনে রেখে রাজধানীর ফুটপাতে বিক্রি হচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্যের হাতপাখা

বাংলা সনের শেষ মাসটি চলছে। এখন চৈত্র। তার পরই বৈশাখ। ঐতিহ্য মেনে আগামী পহেলা বৈশাখ নতুন বছরকে বরণ করে নেবে বাঙালি। সে লক্ষ্যে প্রস্তুত হচ্ছে গোটা দেশ। তবে, মূল দৃষ্টি থাকবে ঢাকার দিকেই। রাজধানী শহর প্রতিবারের মতো এবারও বড় উৎসবের প্রস্তুতি নিচ্ছে। রমনায় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের প্রাথমিক পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে ছায়ানট। বৃক্ষশোভিত মঞ্চ থেকে গান, কবিতা, কথনে বাঙালিত্বের মূল ধারণা ব্যাখ্যা করা হবে। শেকড়ের সংস্কৃতির প্রতি নত হওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করা হবে।

ছায়ানটের সঙ্গে বছরের প্রথম দিনটি শুরু করতে অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে রাজধানীবাসীও। সাধারণ মানুষের এই আগ্রহের কথা মাথায় রেখে বর্তমানে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। জানা গেছে, প্রভাতী অনুষ্ঠানে যে গানগুলো এবার গাওয়া হতে পারে তা মোটামুটি বাছাই করা হয়ে গেছে। এখন চলছে রিহার্সাল। এদিকে, পহেলা বৈশাখের বর্ণিল আয়োজন যে মঙ্গল শোভাযাত্রা, সেটির প্রস্তুতিও থেমে নেই।

প্রতিবারের মতো এবারও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ শোভাযাত্রার আয়োজন করছে। গত রবিবার ছবি এঁকে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী রনবী। তার পর থেকে চারুকলা অনুষদের আঙিনায় দিন-রাত চলছে ছবি আঁকা। কেউ ক্যানভাসে কাজ করছেন। কেউবা মাটির সরায়। পাখি, পুতুল ইত্যাদিও তৈরি হচ্ছে। এগুলো বিক্রি করে পাওয়া অর্থে অয়োজন করা হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাধারণ শিল্পপ্রেমী মানুষ প্রতিদিনই চারুকলায় ভিড় করছেন।

কৌতূহল নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাজ দেখছেন। আর মনে মনে অপেক্ষা করছেন পহেলা বৈশাখের। ঢাকার ফুটপাতেও দৃশ্যমান হচ্ছে প্রাক-বৈশাখ। বর্ষবরণ উৎসব সামনে রেখে লোকঐতিহ্যের পসরা সাজাচ্ছেন দোকানিরা। মগবাজার এলাকার একটি ফুটপাতে বৃহস্পতিবার চোখে পড়ল গ্রামীণ সংস্কৃতির বিস্মৃতপ্রায় অনুসঙ্গ, হাতপাখা। তালপাতার তৈরি চিত্রিত হাতপাখা দেখে অনেকেরই মনে পড়ে যাচ্ছিল ফেলে আসা দিনের কথা। এক সময় বিদ্যুৎ এত সহজলভ্য ছিল না। দেশের অধিকাংশ গ্রাম ছিল অন্ধকারে। একই কারণে ছিল না বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবস্থা। তখন হাতপাখাই ছিল একমাত্র ভরসা।

সেই স্মৃতিই যেন মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন কুষ্টিয়ার বিক্রেতা আব্দুল জলিল। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলছিলেন, গ্রাম থেকে আরও অনেক কিছুর মতো হাতপাখাও হারিয়ে যাচ্ছে। তালগাছে ওঠা কষ্ট। পাখাও তেমন বিক্রি হয় না। তবে এখন চৈত্র মাস। কিছুটা গরম পড়ছে। বস্তিটস্তিতে গেলে বিক্রি হয়। তবে সামনে পহেলা বৈশাখ। পহেলা বৈশাখে এ জিনিসগুলো শহুরে মানুষ কিনতে আগ্রহী হন। আপাতত এ আশাতেই ঢাকার রাস্তায় হাতপাখা নিয়ে বের হয়েছেন বলে জানান প্রবীণ বিক্রেতা। 
সংযমের শিক্ষা নিয়ে এসেছে রমজান ॥ রোজা শুরু হয়ে গেল। আর রোজা শুরু মানেই বদলে যাওয়া রুটিন। সারাদেশের মতো ঢাকার জনজীবনেও এসেছে বড় পরিবর্তন। এখন আর আগের মতো দেরি করে ঘুম থেকে উঠলে চলছে না। বরং স্বাভাবিক সময়ের অনেক আগে। অর্থাৎ, ভোর রাতে বিছানা ছাড়তে হচ্ছে। তার পর চোখ কচলাতে কচলাতে বেসিনের সামনে দাঁড়ানো। দাঁত ব্রাশ। খেতে বসা। সেহরি শেষে কেউ কিছুটা ঘুমিয়ে নিচ্ছেন। কেউ সরাসরি ঢুকে পড়ছেন কাজে। হ্যাঁ, সকালে নাস্তার টেবিলে বসার ব্যাপার নেই। মধ্যাহ্নভোজ উধাও।

সারাদিন পানাহার থেকে বিরত থাকছেন মুমিন মুসলমানরা। কিচ্ছুটি না খেয়ে দিব্যি একটা দিন কাটিয়ে দিচ্ছেন তারা। সন্ধ্যায় ইফতারের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে রোজা পালন। রোজার কারণে সরকারি অফিস- আদালতের সময়ও ইতোমধ্যে বদলে গেছে। এখন একটু দেরি করে শুরু হচ্ছে অফিস। শেষও হচ্ছে আগে আগে। বাসায় গিয়ে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ইফতার করতে সেই চেনা ছোটাছুটি দেখা যাচ্ছে রাস্তায়। বাসায় ফেরার পথে কেউ ইফতারের জন্য মুখরোচক খাবার ঠোংগা ভরে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

কেউবা ঢুকছেন কাঁচাবাজারে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে অনেকদিন ধরেই আলোচনা হচ্ছিল বটে। দাম তবু কমেনি। প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। বেড়ে চলেছে। এর ফলে নি¤œমধ্যবিত্ত ও হত দরিদ্র মানুষ ভীষণ কষ্টের মধ্যে পড়েছেন। তবে দেদার কেনাকাটা করছেন এমন লোকের সংখ্যাও এখন কম নয়। দ্রব্যমূল্য নিয়ে ভাবার সময় নেই যাদের তারা কিনছেন প্রয়োজনের অতিরিক্ত। এ কারণেও কিছু সংকটের সৃষ্টি হচ্ছে। আর অসৎ ব্যবসা, মওজুতদারি, ভেজাল তো আছেই। এ অবস্থায় শুধু রোজা রাখা নয়, দিনভর না খেয়ে থাকা নয়, সংযমের শিক্ষাটা গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। জরুরি এ শিক্ষা আমরা গ্রহণ করব তো? 
একপশলা বৃষ্টি ॥ বহুদিন পর হঠাৎ করেই দেখা মিলেছিল বৃষ্টির। চৈত্রের বৃষ্টি দারুণ উপভোগ করেছেন রাজধানীবাসী। শহরটা ধুলায় ঢাকা পড়েছিল যেন। সেখান থেকে কিছুটা মুক্তি মিলেছে। বৃষ্টির ফলে ধুলা ওড়া কমেছে। কমেছে দূষণও। রাস্তা সংলগ্ন গাছের পাতা এখন আর কালো নয়, সবুজ! বেশ লাগছে দেখতে। দেখছেন তো প্রকৃতিটা এখন?

×