ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৩ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

সংস্কৃতি সংবাদ

শম্ভু আচার্যের পটচিত্রে লোকজ বাংলার প্রতিচ্ছবি

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:২৩, ১৩ মে ২০২৫

শম্ভু আচার্যের পটচিত্রে লোকজ বাংলার প্রতিচ্ছবি

উত্তরায় গ্যালারী কায়ায় চলমান শম্ভু আচার্যের পটচিত্র প্রদর্শনীর ছবি দেখছেন অতিথিরা

বাংলার চারুকলার ভুবনে পটচিত্রের রয়েছে বিশেষ আবেদন। আর  সাড়ে চারশ’ বছর ধরে পটচিত্রের গৌরবময় ঐতিহ্যকে টিকিয়ে  রেখেছে মুন্সীগঞ্জের কালিন্দীপাড়ার ঠাকুরবাড়ির আচার্য পরিবার। আর বংশপরম্পরায় এই ধারার শিল্পচর্চায় নিমগ্ন থাকা নবম প্রজন্মের  শিল্পী শম্ভু আচার্য। গত দুই বছর ধরে এই চিত্রকর ৩১টি পটচিত্র এঁকেছেন।  

সেসব ছবি নিয়ে রাজধানীর উত্তর গ্যালারি কায়ায় চলছে প্রদর্শনী। শম্ভু আচার্য্যরে এসব ক্যানভাসে যেন উদ্ভাসিত হয়েছে লোকজ বাংলার মুখচ্ছবি। নদীর ঘাটে কলসি কাঁখে পল্লীবধূদের জল আহরণ,  ঢেঁকিতে পাড় দেওয়া, গরুর গাড়িতে চড়ে মেঠোপথে বিচরণ কিংবা নদীর পার ধরে বেদেনীর হেঁটে চলাÑলোকজ বাংলার প্রতিচ্ছবিময় চিত্রকর্মসমূহ ঠাঁই পেয়েছে এই শিল্পায়োজনে।  

আখ্যানধর্মী লোকচিত্রকলার এই বিশেষ ধারার ছবিগুলো শিল্পী এঁকেছেন ইটের গুঁড়া, তেঁতুলবীজ, বেলের কষ, মাটি, নীল, সিঁদুর, ডিমের কুসুমের মতো বহু রকম প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি রং দিয়ে। প্রদর্শনীতে শম্ভু আচার্য্যরে স্বাক্ষর করা একটি ফোলিও প্রকাশ করা হয়েছে। আগ্রহীরা চাইলে সেটিও সংগ্রহ করতে পারছেন।
সংস্কৃত পট্ট (কাপড়) শব্দ থেকে পট শব্দের উৎপত্তি। পটে অঙ্কিত বিভিন্ন চিত্রই পটচিত্র। প্রাচীন বাংলায় যখন কোনো দরবারি শিল্পের ধারা গড়ে ওঠেনি তখন পটচিত্রই ছিল বাংলার গৌরবময় ঐতিহ্যের ধারক। এই চিত্র যারা অঙ্কন করেন তাদের বলা হয় পটুয়া। এই ধরনের ছবিতে কোনো বিশেষ একটি ঘটনার খ- খ- চিত্র আঁকা হয়। এসব চিত্র সামনে রেখে সুর দিয়ে গাওয়া হয় আখ্যান বা পটের গান। শম্ভু আচার্য্যরে রয়েছে নয় পুরুষের পটচিত্র আঁকার পারিবারিক ঐতিহ্য। 
প্রদর্শনীতে গাজীর পট, চাঁদ সওদাগর, সিতার বনবাস, বৈষ্ণব ও বৈষ্ণবী, মনসা মঙ্গল, কামধেনু, কুষ্টিচিত্র, পৌষ-পার্বণ, নবান্ন, কৃষক ও কৃষাণী, নদী ও নারী, বউ চলেছে বাপের বাড়ি, পানশীতে যায় গাঁয়ের বঁধু, সূর্য¯œান, কেশবিন্যাস, কলাবতী বউ প্রভৃতি পটচিত্র জায়গা পেয়েছে। 
প্রদর্শনীটি প্রসঙ্গে গ্যালারি কায়ার পরিচালক চিত্রশিল্পী গৌতম চক্রবর্তী বলেন, গাজীরপট শুধু প্রাকৃতিক রঙের বর্ণিল উপস্থাপনই নয়, এর মধ্যে আছে নানা গল্প। পুরাণের গল্প, সমাজের গল্প, সময়ের গল্প। আর এর ইতিহাস বলে সম্প্রীতির কথা। ধর্মে ধর্মে বিভেদ ভুলে একজন আঁকতেন, একদল তা গান গেয়ে বর্ণনা করতেন। মুন্সীগঞ্জের আচার্য্য পরিবারের পট শিল্পের নবম পুরুষ শম্ভু আচার্য্য।

শম্ভু তার বাবা সুধীর আচার্য্যের কাছ থেকে যে শিল্পরীতির শিক্ষা পেয়েছিলেন, সেই শিল্পমাধ্যমে প্রতি তার রয়েছে একগ্রতা, নিষ্ঠা এবং আমাদের ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান। গাজীরপট শুধু শ¤ু¢ আচার্য্যের রংশপরম্পরার অহংকারই নয়, গাজীরপট আমাদের ভূখ-ের, আমাদের দেশের ঐতিহ্য এবং অহংকার।
এই প্রদর্শনী চলবে ১৫ মে পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা সাড়া ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

×