ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অশুভের বিরুদ্ধে জেগে ওঠার প্রত্যয়ে শহীদ মিনারে গণসংগীত

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:৫৩, ২৯ জানুয়ারি ২০২৩

অশুভের বিরুদ্ধে জেগে ওঠার প্রত্যয়ে শহীদ মিনারে গণসংগীত

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গণসংগীত পরিবেশন করছেন গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের শিল্পীরা

গানে গানে উচ্চারিত হলো মানুষের অধিকারের কথা। সুরের আশ্রয়ে  ব্যক্ত হলো বঞ্চিত মানুষের ন্যায্যতার দাবি। ধিক্কার জানানো শোষকের প্রতি। সেই সমান্তরালে বিকেল থেকে রাত অবধি গাওয়া হলো সাম্যের গান। স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে সুরাশ্রিত পঙ্্ক্তিমালায় পরিবেশিত হলো মানবতার জয়গান। এভাবেই মানবতার বাণীকে ধারণ করে অশুভের বিরুদ্ধে জেগে ওঠার প্রত্যয়ে রবিবার থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুরু হলো গণসংগীত অনুষ্ঠান।

দলীয় ও একক কণ্ঠে পরিবেশনায় সজ্জিত দুই দিনব্যাপী এই সংগীতাসরের আয়োজক  বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ। দেশব্যাপী উগ্রবাদের উত্থান ও ধর্মীয় অপশক্তির বিস্তারের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক জাগরণ ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত   কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় এই প্রতিবাদী গণসংগীত পরিবেশনার আয়োজন করা হয়েছে।  
অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী পর্বে আলোচনায় অংশ নেন স্বনামধন্য সাংবাদিক আবেদ খান ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। স্বাগত বক্তব্য দেন গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, যখন আমরা  বিমর্ষ কিংবা হতাশ হই তখন গণসংগীত আমাদের উদ্দীপ্ত করে। মননে যোগায় আশার আলো। সব মিলিয়ে বিশাল শক্তির এক আধার গণসংগীত। সেই সুবাদে মুক্তিযুদ্ধকালেও আমাদের প্রেরণা জুগিয়েছে গণসংগীত। একইভাবে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনেও সাংস্কৃতিক শক্তির উৎস হয়ে ধরা দিয়েছে গণসংগীত। তাই সাংস্কৃতিক সংগ্রামের এক অনন্য হাতিয়ার গণসংগীত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশকে টিকিয়ে রাখতে সংগীতের এই ধারাটিকে ছড়িয়ে দিতে হবে দেশের প্রতিটি প্রান্তে।  দেশবিরোধী মৌলবাদী শক্তিকে প্রতিহত করতেও  গণসংগীতের আশ্রয় নিতে হবে।

সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেই লড়াইয়ে শিল্পের এই ধারাটিকে যথার্থভাবে উপস্থাপন করতে হবে। শহুরে নাগরিক থেকে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মানবিক বোধ জাগ্রত করতে হবে। পাশাপাশি সোনার বাংলাদেশে শিল্প-সংস্কৃতির সকল শাখার সমন্বয়ে সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে শাণিত করতে হবে। সেজন্য সংস্কৃতি খাতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা বাড়াতে হবে। প্রতিটি জেলার পাশাপাশি উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামগঞ্জে সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ বাড়াতে হবে।    
প্রথম দিনের আয়োজনে দলীয় সংগীত পরিবেশন করে ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী। তারা গেয়ে শোনান ‘মানুষের মাঝে বসবাস করি’ ও ‘ভয় নাই কোন ভয়, জয় বাংলার জয়’। সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা পরিবেশন করেন ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ ও ‘আয়রে ও ভাইরে রাম রহিমের বাছা’ শীর্ষক সংগীত। উঠোন সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর শিল্পীরা গেয়ে শোনান ‘আমায় একজন সাদা মানুষ দাও’ ও  ‘ধনধান্য পুষ্পে ভরা’। ক্রান্তি পরিবেশন করে ‘নতুন দিনে নতুন ভোরে ডাক দিয়ে যায়’ ও ‘এদেশ আমার এদেশ তোমার এদেশ সবার’। সপ্তরেখা শিল্পীগোষ্ঠীর পরিবেশিত গণসংগীতের শিরোনাম ছিল ‘মোরা সাম্যের গান গাই’ ও ‘আমরা নতুন যৌবনের দূত’।
অনুষ্ঠানে একক সংগীত পরিবেশনায় সমর বড়ুয়া গেয়ে শোনান ‘মাগো ভাবনা কেন’। আবিদা রহমান সেতু পরিবেশন করেন ‘নোঙ্গর তোলো তোলো’।  শ্রাবণী গুহ রায় শুনিয়েছেন ‘সীমান্ত থেকে আজ সীমান্ত অবধি’। অলক দাস গুপ্ত গেয়েছেন ‘এই পৃথিবীকে ঐ আকাশ বড়’। আসিফ ইকবাল সৌরভ পরিবেশন করেন ‘আজ জীবন খুঁজে পাবি তোরা’। পল্লব গমেজ গেয়ে শোনান ‘দোলা দোলা হে দোলা’। প্রথম দিনের অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঝর্ণা আলমগীর।
আজ সোমবার বিকেল সাড়ে চারটায় শুরু হবে দ্বিতীয় দিনের পরিবেশনা পর্ব। এদিন দলীয় সংগীত পরিবেশন করবে বহ্নিশিখা, ভিন্নধারা, বিরহী, ভাস্কর, সুরতাল ও রবিরশ্মির শিল্পীরা। একক সংগীত পরিবেশন করবেন মহাদেব ঘোষ, প্রলয় সাহা ও  ফয়েজুল বারী ইমু।

 

×