ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

আহমেদ ফেরদৌস

নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ডের সাফল্য

প্রকাশিত: ২১:০৪, ১১ মার্চ ২০২২

নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ডের সাফল্য

ইংরেজ শাসনামলে ১৯২২ সালে নারায়ণগঞ্জের সোনাকান্দা নামক স্থানে বাংলাদেশের প্রথম ডকইয়ার্ড স্থাপনের ইতিহাস ঘাটতে গিয়ে দেখলাম, সেই সময় এই বন্দরে আগত জাহাজের টুকিটাকি মেরামতের জন্য কলকাতা ও সিঙ্গাপুর বন্দরে পাঠানো হতো। এই অসুবিধা দূরীকরণের উদ্দেশ্যে গঠিত এই ডকইয়ার্ডটি দেশবিভাগের পর পাকিস্তান সরকারের আমলে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ছিল। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটি জন্মের শুরু হতে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত একটি লাভজনক ও অমিত সম্ভাবনাময় প্রতিষ্ঠান হিসেবে আশার আলো দেখাচ্ছিল। কিন্তু এরপরই শুরু হয় পতন। সীমাহীন দুর্নীতি, অযোগ্য প্রশাসন, দলাদলি, অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও তদারকীর অভাবে অতিদ্রুত এই প্রতিষ্ঠান লাভজনক অবস্থান হতে লোকসানী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। ২০০২ সালে কয়েকশ’ কোটি টাকা দেনা নিয়ে সরকার ডকইয়ার্ডটিকে লে-অফ ঘোষণা করে। অতঃপর ৪ বছর পর ২০০৬ সালের ৭ ডিসেম্বর বিধ্বস্ত, রুগ্ন, কঙ্কালসার ডকইয়ার্ডটি বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে পরিচালনার জন্য হস্তান্তর করে। শুরু হয় এক নতুন অধ্যায় এবং সোনালী যুগের আগমন, যার স্বার্থকতা অথবা ব্যর্থতা নির্ধারণের দায়িত্ব পাঠকগণের ওপরই ছেড়ে দিতে চাই। ২০০৭ সালে লোকসানী প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হাতে আসার পর নৌবাহিনীর সুযোগ্য প্রশাসনিক মেধাসম্পন্ন দক্ষ পরিচালনায় এই সুন্দর প্রতিষ্ঠানটি ধীরে ধীরে তার কর্মপরিধি ও ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি করে। আপনারা হয়ত জানেন যে, বাংলাদেশ জাহাজ নির্মাণের জন্য বিশ্বে আস্থা অর্জন করেছে। এর পথিকৃৎ কিন্তু এই নারায়ণগঞ্জের উঊড প্রতিষ্ঠান। আজ তাদের হাতে রয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অনেক জবংপঁব ইড়ধঃ যা তারা ধাপে ধাপে গুণগত মান নিশ্চিত করে যথাসময়ে গ্রাহককে সরবরাহ করে বাজারে বেশ সুনাম অর্জন করেছে। সঙ্গে সঙ্গে নিশ্চিত করেছে শত শত কোটি টাকার নিট মুনাফা। সরকারকে প্রতিবছর রাজস্ব, ভ্যাট বাবদ দিচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এই জবংপঁব ইড়ধঃ গুলোকে আমরা করোনার মাঝে দু’দুটি ঘূর্ণিঝড়ে অসহায় মানুষকে উদ্ধার করতে দেখেছি। কোস্টগার্ড, চট্টগ্রাম, মোংলা পোর্ট, কিছু কিছু বাণিজ্যিক শিপিং কোম্পানির জাহাজ প্রস্তুত করার সফলতা দেখাল উঊড। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কিছু যুদ্ধজাহাজ এই প্রথম এই ডকইয়ার্ডে তৈরি হচ্ছে। পাঠকগণের বিচার-বিশ্লেষণের জন্য উপস্থাপন করছি গত ৫ অর্থবছরের কিছু তথ্য যা বিশ্লেষণ করত আপনারা মতামত দেবেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় লোকসানী এই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের জনগণের সশস্ত্র বাহিনীর দ্বারা পরিচালনের সরকারী সিদ্ধান্তটি কি ভুল ছিল নাকি সঠিক ছিল। * টার্নওভার (কোটি টাকায়) : ২০১৬-২০১৭ - ৫২৫ কোটি, ২০১৭-২০১৮ - ৯৩৮ কোটি, ২০১৮-২০১৯- ১,৬০৭ কোটি, ২০১৯-২০২০- ১,৬১১.৩২ কোটি, ২০২০-২০২১ - ১,৩১৩ কোটি (করোনার প্রভাব)। * ভ্যাট ও ট্যাক্স বাবদ সরকারী কোষাগারে জমাকৃত অর্থ (কোটি টাকায়) : ২০১৬-২০১৭- ৫৫.৩১ কোটি, ২০১৭-২০১৮- ৮৯.৭৮ কোটি, ২০১৮-২০১৯- ২১৫.১২ কোটি, ২০১৯-২০২০- ২১৫.৫৩ কোটি, ২০২০-২০২১- ১৭১.৯৩ কোটি। * নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালনাকালে সংঘটিত দুর্ঘটনার বিবরণ : জাহাজ মেরামত একটি ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান এবং এখানে দুর্ঘটনায় মৃত্যু নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এমন চিত্র যখন স্বাভাবিক, তখন চলুন জেনে নেই গত ৫ বছরে ডকইয়ার্ডটিতে দুর্ঘটনার খতিয়ান। জুলাই ২০১৭ সালে একজন শ্রমিকের আংশিক অঙ্গহানি (চোখ) ঘটে। ডকইয়ার্ড কর্তৃক সম্পূর্ণ চিকিৎসা নিশ্চিতের পর সেই শ্রমিকটি বর্তমানে চাকরিরত। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আরেক শ্রমিকের আংশিক অঙ্গহানি (পা) ঘটার পর ডকইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ তার সম্পূর্ণ চিকিৎসার দায়দায়িত্ব নেয়। বর্তমানে শ্রমিক ভাইটি ডকইয়ার্ডে কর্মরত এবং অঙ্গহানির জন্য নিয়ম মোতাবেক আর্থিক অনুদান পেয়েছে। এবার আসুন দেখে নেই এই ডকইয়ার্ডের বর্তমান প্রশাসনের কর্মদক্ষতা যে কারণে প্রতিষ্ঠানটি গত অর্থবছরে প্রফিট বোনাস, রাজস্ব ও সব খরচের পরও একশ’ কোটি টাকা নিট মুনাফা অর্জন করেছে। এই ডকইয়ার্ডটি তার স্বকীয়তা ও উদ্ভাবনী, সৃজনশীল ও সুযোগ্য নেতৃত্ব দ্বারা ইতোমধ্যেই এই ইন্ডাস্ট্রিতে একটি প্রফেশনাল বিজনেস ইউনিট হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থার মাত্রায় যোগ করেছে আরেকটি সফলতার পালক। পরিশেষে এই প্রতিষ্ঠান ও এর সকল স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শুভ কামনা জানিয়ে আজকের এই প্রথম পর্বের ইতি টানছি। লেখক : সাবেক সেনা কর্মকর্তা [email protected]
×