ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নজরুলজয়ন্তীতে বড় প্রস্তুতি

স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলোতে দুই বছর পর ফিরছেন বিদ্রোহী কবি

প্রকাশিত: ২৩:১২, ২৪ মে ২০২২

স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলোতে দুই বছর পর ফিরছেন বিদ্রোহী কবি

মোরসালিন মিজান ॥ স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলোতে ফিরছেন নজরুল। দ্রোহ, প্রেম ও সাম্যের কবির কত স্মৃতি দেশজুড়ে ছড়িয়ে আছে। সেইসব স্থানে তিনি ফিরছেন। না, শারীরিক উপস্থিতি কথা হচ্ছে না। নিজ সৃষ্টির আলোয় নতুন করে উদ্ভাসিত হবেন তিনি। হ্যাঁ, আগামীকাল ১১ জ্যৈষ্ঠ কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী। মূলত এ উপলক্ষে আবারও মুখরিত হয়ে উঠবে তাঁর স্মৃতিধন্য স্থানগুলো। নজরুলজয়ন্তীতে প্রতি বছরই জাতীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়। মূল আয়োজন থাকে কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রামসহ কয়েকটি জেলায়। কিন্তু করোনাকাল চলায় গত দু’বছর বড় পরিসরে নজরুলজয়ন্তী বা মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠান আয়োজন সম্ভব হয়নি। এবার পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় পূর্বের মতোই এসব স্থানে উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। কবিতা গানসহ নানা আয়োজনে প্রতিভাত করা হবে কাজী নজরুল ইসলামকে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঢাকাসহ জাতীয় কবির স্মৃতিবিজড়িত ময়মনসিংহের ত্রিশাল, কুমিল্লার দৌলতপুর, মানিকগঞ্জের তেওতা, চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গা এবং চট্টগ্রামে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন করা হবে। এ উপলক্ষে নজরুল মেলা, নজরুল বিষয়ক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে স্থানীয় প্রশাসন। জাতীয় কর্মসূচী অনুযায়ী, নজরুলজয়ন্তীর মূল অনুষ্ঠানটি হবে কুমিল্লায়। গবেষকদের দেয়া তথ্য মতে, ১৯২১ সালের এপ্রিলে প্রথমবারের মতো কুমিল্লায় আসেন কবি। এর পর নিয়মিত বিরতিতে যাওয়া আসার ঘটনা ঘটেছে। ১৯২৪ সাল পর্যন্ত মোট পাঁচবার কুমিল্লায় আসেন তিনি। এখানে অবস্থানকালে কবির জীবনে একাধিক প্রেম যেমন আসে, তেমনি বিয়ে বন্ধনেও আবদ্ধ হন। বন্ধু আলী আকবর খানের দৌলতপুরের বাসভবনে অতিথি হয়েছিলেন তিনি। ভবনটি এখনও কবির স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কুমিল্লা থেকে দু’দফায় গ্রেফতারও হন কবি। আর সাহিত্য চর্চা, সে তো ছিলই। গুরুত্বপূর্ণ অনেক লেখালেখি কুমিল্লায় বসে করেছেন তিনি। ধর্মসাগরের পশ্চিম পাড়, ঝাউতলা, বসন্ত স্মৃতি পাঠাগার, নানুয়া দীঘির পাড়, দারোগা বাড়িসহ অনেক ভবন পথ ঘাট কবির স্মৃতি বহন করেছে। এসবের অনেক কিছুই এখন আর নেই। তবে স্মৃতি নানাভাবে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। একই উদ্দেশ্যে কুমিল্লায় নজরুলজয়ন্তীর মূল অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, টাউন হলে সকাল ১১টায় শুরু হবে অনুষ্ঠান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন (রিমি)। স্মারক বক্তৃতা করবেন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও নজরুল গবেষক শান্তিরঞ্জন ভৌমিক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিল্পকলা একাডেমির পরিবেশনায় নৃত্যনাট্যসহ থাকবে ৩০ মিনিটের বিশেষ আয়োজন। এর বাইরেও নানা অনুষ্ঠানমালা চলমান থাকবে। নজরুলের আরেকটি খুব উল্লেখযোগ্য স্মৃতিবিজড়িত স্থান ময়মনসিংহ। জেলার একাধিক স্থানে কবির স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে। যতদূর তথ্য, কাজী রফিজ উল্লাহ্ দারোগা ১৯১৪ সালে আসানসোলের রুটির দোকান থেকে কিশোর কবিকে ত্রিশালে নিয়ে আসেন। দরিরামপুর হাইস্কুলে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেন নজরুল। ভবনটি বর্তমানে নজরুল একাডেমি নামে পরিচিত। ত্রিশাল কাজীর শিমলা মোড় থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার পশ্চিমে দারোগা বাড়ি। এখানেও রয়েছে দুই তলা বিশিষ্ট নজরুল পাঠাগার ভবন। নতুন নতুন আরও অনেক উদ্যোগের মাধ্যমে ময়মনসিংহে কবির স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। প্রতি বছর এখানে বড় পরিসরে নজরুলজয়ন্তী উদ্যাপন করা হয়। দিবসটি ঘিরে স্থানীয়রা এক ধরনের উৎসবে মাতেন। করোনায় দু’বছর বন্ধ থাকার পর এবার আবারও নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। বুধবার থেকে ত্রিশালে শুরু হবে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। অন্যান্য আয়োজনের পাশাপাশি দরিরামপুর সরকারী নজরুল একাডেমি মাঠে চলবে তিনদিনের নজরুল মেলা। ঢাকাসহ অন্যান্য স্থানেও থাকবে উৎসব অনুষ্ঠান। নজরুল ইনস্টিটিউট কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণিকা ও পোস্টার প্রকাশ করবে। কবি নজরুল ইনস্টিটিউটসহ সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সকল দফতর ও সংস্থাসমূহ এ উপলক্ষে বিশেষ আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করবে। তাছাড়া কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালকের তত্ত্বাবধানে ঢাকার রবীন্দ্র সরোবরে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, রচনা ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হবে। সব মিলিয়ে নিজ নজরুল সৃষ্টির আলোয় ফিরবেন কাজী নজরুল ইসলাম। স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলো মুখরিত হয়ে উঠবে। মুখরিত হয়ে উঠবে গোটা দেশ। এ প্রসঙ্গে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদও বলছিলেন, নজরুল আমাদের শক্তি। আমাদের প্রেরণা। তাই কবির কাছে বার বার ফিরে যাওয়া। গত দু’বছর জাতীয়ভাবে আমরা নজরুলজয়ন্তী উদ্যাপন করতে পারিনি। এবার বিপুল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। উদ্যাপনের ক্ষেত্রে কবি স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলোকেই বিশেষ প্রাধান্য দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কবির স্মৃতি খোঁজার মধ্যে একটা রোমাঞ্চ আছে। সেটি মাথায় রেখেই তার স্মৃতিধন্য স্থানে যাচ্ছি আমরা। অন্যান্য স্থানেও একই রকম অনুষ্ঠানমালা থাকবে। সবাইকে এসব অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ারও আমন্ত্রণ জানান প্রতিমন্ত্রী।
×