ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ভারতে বাংলাদেশী তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ

টিকটক হৃদয়সহ ৭ বাংলাদেশীর যাবজ্জীবন

প্রকাশিত: ২৩:০৭, ২২ মে ২০২২

টিকটক হৃদয়সহ ৭ বাংলাদেশীর যাবজ্জীবন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভারতে বাংলাদেশী এক তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও যৌন-নিপীড়নের বহুল আলোচিত ঘটনার হোতা মোহাম্মদ রিফাতুল ইসলাম হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়কে যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়েছেন ব্যাঙ্গালুরুর বিশেষ আদালত। এ সময় অন্তত ৯ বাংলাদেশীকে পাঁচ বছর থেকে যাবজ্জীবন পর্যন্ত কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ কর্ণাটকের রাজধানী ব্যাঙ্গালুরুর ওই তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে তাদের এই কারাদণ্ড দেয়া হয়। গত বছরের মে মাসে বহুল আলোচিত যৌন-নিপীড়নের এ ঘটনার একটি ভিডিও দুদেশে ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তোলে। শুক্রবার ব্যাঙ্গালুরুর বিশেষ আদালত-৫৪ অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করে রায় ঘোষণা করেছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে, এ মামলায় যাবজ্জীবন দ-প্রাপ্ত বাংলাদেশীরা হচ্ছে, মোহাম্মদ রিফাতুল ইসলাম হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, চাঁদ মিয়া, মোহাম্মদ আলামিন হোসেন, রকিবুল ইসলাম, মোহাম্মদ বাবু শেখ, মোহাম্মদ ডালিম এবং আজিম হোসেন। এছাড়া তানিয়া খান নামের এক নারীকে ২০ বছর এবং মোহাম্মদ জামাল নামের এক বাংলাদেশী ৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। অন্য দুজনকে ফরেনার্স এ্যাক্টের আওতায় দোষী সাব্যস্ত করে ৯ মাসের কারাদণ্ড এবং এক ভারতীয়কে খালাস দিয়েছেন আদালত। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গত বছরের ২১ মে ব্যাঙ্গালুরুতে বাংলাদেশী তরুণীকে যৌন নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর এ ঘটনা উভয় দেশে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করে। ভিডিওতে দেখা যায়, ২০-২২ বছরের এক তরুণীকে বিবস্ত্র করে ৩-৪ জন যুবক শারীরিক ও বিকৃতভাবে যৌন নির্যাতন করছে। এ নিয়ে বাংলাদেশেও তদন্তে নামে পুলিশ। পরে পুলিশ ভিডিওটির একজনের সঙ্গে বাংলাদেশী এক তরুণের ছবির মিল খুঁজে পায়। পুলিশ নিশ্চিত হয় নির্যাতনকারী ওই যুবকের নাম রিফাতুল ইসলাম হৃদয়। রাজধানীর মগবাজার এলাকার বাসিন্দা। হৃদয়ের পরিচয় তার মা ও মামার কাছ থেকে শনাক্ত করা হয়। এলাকায় সে টিকটক হৃদয় নামে পরিচিত। নির্যাতনের শিকার তরুণীর বাবা ঢাকার হাতিরঝিল থানায় মানব পাচার ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেন। পরে ব্যাঙ্গালুর পুলিশের গ্রেফতার অভিযানের সময় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে অন্তত তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। ব্যাঙ্গালুর পুলিশ সেসময় জানায়, ধর্ষণের শিকার তরুণী বাংলাদেশের একটি মানবপাচার চক্রের মাধ্যমে ভারতে পাচার হয়েছেন। ওই তরুণীকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করে পাচারকারীরা। টাকা নিয়ে বিবাদের কারণে ওই তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ এবং শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে বলে তদন্তে উঠে আসে। এই চক্রটি বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতের অসম, পশ্চিমবঙ্গ, তেলেঙ্গানা এবং কর্নাটকে নারী ও তরুণীদের পাচার করে। গত বছর ওই ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর দেশটির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু এক টুইটে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশকে সহায়তার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। তদন্তে পুলিশ জানতে পায় গণধর্ষণের ওই ঘটনা ব্যাঙ্গালুরু শহরের কানাকা নগরে ঘটেছে। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১২ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। যাদের ১১ জনই বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী এবং একজন স্থানীয় বাসিন্দা। ব্যাঙ্গালুরু“পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (পূর্ব) ভীমশঙ্কর গুলেদ বলেছেন, দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য ডিএনএ বিশ্লেষণ, ইলেকট্রনিক প্রমাণ, মোবাইল ফরেনসিক, আঙুলের ছাপের প্রমাণ, ভয়েস স্যাম্পলিংয়ের মতো সব ধরনের বৈজ্ঞানিক সহায়তা নিয়ে যুদ্ধগতিতে তদন্ত পরিচালনা করা হয়। মামলাটি রেকর্ডের সময় থেকে মাত্র ২৮ দিনের মধ্যে চার্জশীট জমা দেয়া হয়। মামলা পরিচালনার জন্য কর্নাটক সরকার বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর বীরান্না তিগাদি নিযুক্ত করে এবং এসিপি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে বিশেষ ট্রায়াল মনিটরিং টিম গঠন করা হয়। আদালতের বিচারক মোট ৪৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দী নেন। তিন মাসেরও কম সময়ে এ মামলার রায় ঘোষণা করেছেন। দেশে ফিরলেন ভারতে নির্যাতনের শিকার সেই তরুণী ॥ গত বছর ব্যাঙ্গালুরুতে ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় আলোচিত ভুক্তভোগী সেই তরুণীকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করেছে ভারত। শনিবার সন্ধ্যায় বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের একটি দলের কাছে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করে ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হাফিজ আল ফারুক। তিনি বলেন, ভিক্টিমকে আমাদের জিম্মায় দেয়া হয়েছে।
×