ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

নিয়োগ পরীক্ষায় পাস করিয়ে দিতে ১০-১৫ লাখ টাকায় চুক্তি!

প্রকাশিত: ২৩:২৭, ২০ মে ২০২২

নিয়োগ পরীক্ষায় পাস করিয়ে দিতে ১০-১৫ লাখ টাকায় চুক্তি!

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ওরা নিয়োগ পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেয়ার নামে পরীক্ষার্থীর সঙ্গে ১০-১৫ লাখ টাকার চুক্তি করত। এজন্য পরীক্ষার আগেই তাদের অগ্রীম দিতে হতো অন্তত ২ লাখ টাকা। এরপর পরীক্ষার্থীকে সরবরাহ করা হতো হিডেন স্পাই ওয়্যারলেস কিট। যার মাধ্যমে বাইরে থেকে সরবরাহ করা হতো প্রশ্নপত্রের সমাধান। সম্প্রতি চলমান প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ঘিরে তৎপর হয়ে ওঠে সংঘবদ্ধ চক্রটি। এই চক্রে শিক্ষক, সরকারী কর্মচারী ও শিক্ষার্থী রয়েছে। এ রকমই নিয়োগ পরীক্ষা জালিয়াতি চক্রের হোতা ইকবাল হোসেনসহ (৪২) চারজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গ্রেফতারকৃত অন্যরা হচ্ছে রমিজ মৃধা (৩০), নজরুল ইসলাম (৫০) ও মোদাচ্ছের হোসেন (৬২)। এদের মধ্যে ইকবাল একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। আর গ্রেফতারকৃত নজরুল আগারগাঁও সমাজসেবা অধিদফতরের কম্পিউটার অপারেটর ও মোদাচ্ছের মুজিবনগর সমাজসেবা কার্যালয়ের সাবেক সমাজকর্মী। এছাড়া রমিজ একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাস করার পর এই চক্রের সঙ্গে জড়িত হয়ে ডিভাইসগুলো পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। বুধবার রাতে রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে বেশকিছু ডিভাইস ও বিভিন্ন আলামত জব্দ করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কাওরানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। র‌্যাব মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন জানান, চক্রটি গত ২২ এপ্রিল প্রাথমিকের নিয়োগ পরীক্ষায় ১৬ জনকে এ ডিভাইস সরবরাহের মাধ্যমে উত্তর সরবরাহ করেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। আগামী ২০ মে অনুষ্ঠিতব্য প্রাথমিকের নিয়োগ পরীক্ষায় আরও ১২-১৪ জনকে ডিভাইসের মাধ্যমে উত্তর সরবরাহের চুক্তি হয়েছিল। তিনি জানান, এই চক্রের সদস্যরা প্রথমে বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী নিয়োগ পরীক্ষা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করত। পরবর্তীতে ওই নিয়োগ পরীক্ষার হল ও পরীক্ষার গার্ড সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে। এরপর তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাকরি প্রত্যাশীদের খুঁজে বের করে চাকরি পাইয়ে দেয়ার নামে ১০-১৫ লাখ টাকার চুক্তি করে। যারা রাজি হতেন তাদের কাছ থেকে অগ্রীম ২ লাখ টাকা নেয়ার পর পরীক্ষার্থীদের ডিজিটাল ডিভাইসগুলো সরবরাহ করা হতো। যেগুলোর একটি অংশ পরীক্ষার্থীদের কানের ভেতর এবং অটোমেটিক কল রিসিভ হওয়া সিম লাগানো অপর অংশটি শরীরের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রেখে হলে প্রবেশ করানো হতো পরীক্ষার্থীদের। পরীক্ষা শুরুর পর কোনভাবে প্রশ্নের ছবি চলে আসত প্রশ্নফাঁস চক্রের হাতে। তাৎক্ষণিকভাবে বাইরে মেধাবীদের একটি টিমের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র সমাধান করে ওই ডিভাইসের মাধ্যমে উত্তর বলে দেয়া হতো। পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, চক্রের হোতা ইকবাল হোসেন ২০০৮ সালে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। ২০১৫ সালে একই এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী আলতাফ হোসেন নামে একজনের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রে এই চক্রে জড়িয়ে যান ইকবাল। ২০২০ সালে করোনায় আলতাফ মারা যাওয়ার পর চক্রটি নিজেই পরিচালনা শুরু করেন ইকবাল। গ্রেফতারকৃত রমিজ এই চক্রের অন্যতম সহযোগী। ২০২০ সালে ইকবালের সঙ্গে পরিচয় সূত্রে এই চক্রে জড়ান। ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস সম্পর্কে তার ভাল অভিজ্ঞতা থাকায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে। পরীক্ষার সময় পরীক্ষার্থীদের ডিজিটাল ডিভাইসগুলোর মাধ্যমে সংযুক্ত করে বাইরে থেকে উত্তর সরবরাহ করত রমিজ। এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের মুখপাত্র জানান, গ্রেফতারকৃত মোদাচ্ছের ও নজরুল মূলত পরীক্ষা কোন হলে অনুষ্ঠিত হবে, গার্ড কে থাকবে খোঁজখবর নিতেন। এরপর পরীক্ষা শুরুর পর পর কারও মাধ্যমে প্রশ্নের ছবি হোয়াটসএ্যাপে তাদের কাছে চলে আসত। আমরা সেসব লোকজনদের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি। আরেক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মঈন জানান, চক্রটি ২০১৫ সাল থেকে চাকরি প্রার্থীদের সঙ্গে চাকরি পাইয়ে দেয়ার বিষয়ে ১০-১৫ লাখ টাকায় চুক্তি করতেন। আনুমানিক ৩০ জনের সঙ্গে চুক্তি করলে ২-৩ জনকে কোনভাবে চাকরি পাইয়ে দেয়ার চেষ্টা করতেন এরা। অনেক সময় স্বাভাবিকভাবেই ৩-৪ জন চাকরি পেয়ে যেতেন। এভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। তিনি জানান, ২০২০ সাল থেকে ডিভাইসের মাধ্যমে নতুন পন্থায় চাকরি নিয়োগ পরীক্ষার এই প্রতারণা শুরু করে চক্রটি।
×