ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সহসাই গ্যাস পাচ্ছেন না কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দারা

প্রকাশিত: ১৯:৫৮, ১৯ মে ২০২২

সহসাই গ্যাস পাচ্ছেন না কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দারা

অনলাইন রিপোর্টার ॥ সহসাই ভোগান্তি থেকে মুক্তি মিলছে না রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের মানুষদের। তিতাস সাফ জানিয়ে দিয়েছে— অবৈধ সংযোগের পুরোটা বিচ্ছিন্ন না হওয়ার পাশাপাশি বকেয়ার অর্ধেক আদায় না হলে, কোনও সংযোগ নয়। সঙ্গতকারণে আপাতত কামরঙ্গীরচরের মানুষ গ্যাস পাচ্ছেন না। বৃহস্পতিবার (১৯ মে) কামরঙ্গীরচরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে স্থানীয়দের সঙ্গে বৈঠকে তিতাসের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়। স্থানীয়রা হট্টগোল করলেও শেষ পর্যন্ত কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়েছে। স্থানীয়দের অনেকের অভিযোগ— এখানে তিতাস এবং প্রভাবশালীদের অনেকেরই অবৈধ গ্যাসের সংযোগ রয়েছে। তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লাহ অবৈধ সংযোগের সঙ্গে তিতাসের কোনও কর্মী জড়িত থাকলে তার নাম চেয়েছেন। বৈঠকে গ্রাহকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়— ১০ দিন ধরে এলাকায় গ্যাস নেই। কোনও রকম আলোচনা ছাড়াই গ্যাস বন্ধ করা হয়েছে। তিতাসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা এবং সেইসঙ্গে কিছু ঠিকাদার অবৈধ গ্যাস সংযোগের সঙ্গে জড়িত। যারা এসব অবৈধ সংযোগ দিয়ে প্রতি মাসে বিল নিয়ে থাকেন। বৈঠকের এক পর্যায়ে স্থানীয়রা হট্টগোল করেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘বকেয়ার অর্ধেক পরিশোধ করতে হবে। একইসঙ্গে অবৈধ সংযোগও উচ্ছেদ করতে সহায়তা করতে হবে, না হলে নতুন সংযোগ দেওয়া হবে না।’ ফলে ১০ মে থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকা গ্রাহকদের আরও কতদিন এই ভোগান্তি পোহাতে হবে, তা কেউ জানে না। প্রসঙ্গত, বৈধ সংযোগের চেয়ে ৫ গুণ বেশি অবৈধ সংযোগ, বৈধ গ্রাহকদের কাছে ৬৭ কোটি টাকা বকেয়ার অভিযোগে গত ১০ মে সন্ধ্যা থেকে কামরাঙ্গীরচরে সব গ্যাস লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয় তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। তিতাসের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অবৈধ গ্রাহকদের শায়েস্তা করতে গ্যাসের বাল্ব খুলে নিয়ে আসা হয়েছে। এজন্য বৈধদের গ্যাসও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বর্তমানে আবাসিক, শিল্প এবং বাণিজ্যিক মিলিয়ে কামরাঙ্গীচরে তিতাসের গ্রাহক ১২ হাজারের মতো। এই সংকট সমাধানে বৃহস্পতিবার (১৯ মে) কামরাঙ্গীরচরের রসুলপুরের কামরুল ইসলাম কমিউনিটি সেন্টারে তিতাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা গ্যাস নিয়ে চার জন কাউন্সিলরসহ এলাকাবাসীর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লা, পরিচালক (অপারেশন) সেলিম মিয়া, পরিচালক (অর্থ) ইসরাইল মিয়া, জেনারেল ম্যানেজার (মার্কেটিং, উত্তর) মো. শামসুদ্দিন, জেনারেল ম্যানেজার (মার্কেটিং, দক্ষিণ) সত্তজিৎ ঘোষ, জিএম রেভিনিউ অর্পণা ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট ডিজিএম, ম্যানেজাররা উপস্থিত ছিলেন। তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘আমরা বলেছি, বকেয়া আদায় এবং অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন না হলে, গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে না। তারা রাজি হয়েছেন। আগামী ২৩ মে থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হবে। উচ্ছেদ অভিযান সম্পন্নসহ বকেয়া আদায় করে কবে নাগাদ কামরাঙ্গীরচরের বৈধ ১২ হাজার গ্রাহক গ্যাস পাবেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা বকেয়া কত আছে তা জানি। কিন্তু অবৈধ লাইন কত আছে, তা জানি না। যদি উচ্ছেদ করতে গিয়ে দেখি অনেক বেশি, তাহলে তো সময় লাগবে। আর তা কতদিনে শেষ হবে এখনই বলা সম্ভব নয়। এসব কাজ শেষ হলেই আবার কামরাঙ্গীরচরে গ্যাস দেওয়া হবে। তার আগে নয়।’ এ বিষয়ে কামরাঙ্গীচরের ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাজী নুর আলম বলেন, ‘উনারা উনাদের মতো করে সব বলে গেছেন। আমরা উচ্ছেদ ও বকেয়া আদায়ে সহযোগিতা করবো বলে জানিয়েছি। কিন্তু তারা কিছুতেই এখন গ্যাসের লাইন দেবে না। সব কাজ শেষ করে লাইন দেবে বলে জানিয়েছেন। এলাকাবাসীর ভোগান্তি উনারা বিবেচনায় নিলেন না। এর আগে গত ১৬ মে তিতাসের প্রধান কার্যালয়ে সভা হয়েছে কাউন্সিলরদের সঙ্গে। সেখানেও কোনও সমাধান হয়নি। তিতাস অনড় অবস্থানে রয়েছে।’ এদিকে কামরাঙ্গীচরের বাসিন্দারা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। ১০ দিন ধরে গ্যাস নেই। তারা নানান ধরনের চুলায় রান্না করেন। এই গরমে হোটেলে খেয়ে চরের অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলে জানান বাসিন্দারা।
×