ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

রাজশাহীতে সেলিব্রেটি গ্যালারি

মাদাম তুসোর আদলে জাদুঘর, ভাস্কর্যে বিখ্যাতদের উপস্থাপন

প্রকাশিত: ২৩:১৪, ১৭ মে ২০২২

মাদাম তুসোর আদলে জাদুঘর, ভাস্কর্যে বিখ্যাতদের উপস্থাপন

মামুন-অর-রশিদ ॥ লন্ডনে অবস্থিত বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ও বিখ্যাত ব্যক্তিদের নিয়ে গড়ে তোলা মাদাম তুসো মিউজিয়ামের আদলে এবার বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে গড়ে তোলা হয়েছে ‘সেলিব্রেটি গ্যালারি।’ রাজশাহীর সন্তান প্রখ্যাত ভাস্কর মৃণাল হকের তৈরি অন্তত ৪০টি ভাস্কর্য রয়েছে এখানে। শিল্পী মৃণাল হকের মৃত্যুর প্রায় দুবছর পর তার তৈরি ভাস্কর্যগুলো রাজশাহীতে প্রদর্শনের জন্য এই গ্যালারি চালুর উদ্যোগ নিয়েছে পরিবার। ইতোমধ্যে সব আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষা। এটি শীঘ্রই উদ্বোধনের পর জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হবে। তবে এরই মধ্যে এ গ্যালারিতে দর্শনার্থীদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। এটি দেখে অনেকে উচ্ছ্বসিত হচ্ছেন। মাদাম তুসো জাদুঘরের কথা জানেন অনেকেই। সেই জাদুঘরের আদলেই রাজশাহী নগরীর উপশহরের তিন নম্বর সেক্টরের একটি সৃদৃশ্য বাড়িতে সেলিব্রেটি গ্যালারি গড়ে তোলা হচ্ছে। এখানে এক ছাদের নিচে মিলবে সব কিংবদন্তিদের। গ্যালারিতে ঢুকে কয়েক মুহূর্তের জন্য চমকে উঠতে হবে সবাইকে। কারণ সামনে দাঁড়ানো কিংবা বসা অবয়বগুলো নিছকই ফাইবার প্লাসে তৈরি মূর্তি তবুও রক্তে মাংসে গড়া ‘মানুষ’ ভেবে ভুল ভাবার অবকাশ রয়েই যায়। এতটাই নিখুঁতভাবে এ কাজগুলো করা হয়েছে। ভাস্কর্য নির্মাণে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতিসম্পন্ন ভাস্কর মৃণাল হকের হাতে তৈরি অন্তত ৪০ জন দেশ-বিদেশের কিংবদন্তি ব্যক্তিদের ভাস্কর্য নিয়ে নির্মিত হয়েছে এই ‘সেলিব্রেটি গ্যালারি।’ সোমবার সকালে সেখানে সরেজমিন গিয়ে একেকটি কক্ষে প্রবেশ করতেই চোখ আটকে যাওয়ার মতো অবস্থা। মনে হলো- দুনিয়া কাঁপানো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও বিশ্বের নামীদামী তারকারা দাঁড়িয়ে আছেন ঠিক সামনেই। যেন অপেক্ষাতেই রয়েছেন তারা। কিন্তু ঘোর কাটতেই বোঝা যাবে, তারা ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন ঠিকই, তবে জীবন্ত নয়, শিল্পীর ভাস্কর্য হয়ে। রাজশাহীতে এই প্রথম বাংলাদেশ-ভারতসহ আন্তর্জাতিক ব্যক্তিদের নিয়ে স্থাপন করা হয়েছে সেলিব্রেটি গ্যালারি। বাংলাশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় চার নেতা সৈয়দ তাজউদ্দীন আহমেদ, ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামারুজ্জামান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, মহাত্মা গান্ধী, মাদার তেরেসা, বিপ্লবী চে গুয়েভারা, ডোনাল্ড ট্রাম্প, প্রিন্সেস ডায়ানা, মাইকেল জ্যাকসন, পপ তারকা শাকিরা, বিখ্যাত কমেডি সিরিজ থ্রি স্টুজেস-এর তিন মূল চরিত্র, বব মার্লে, এ্যাভাটারসহ অনেকেরই ভাস্কর্য রয়েছে এই সেলিব্রিটি গ্যালারিতে। শিল্পীর তৈরি হয়ে সবাই যেন চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে ধরা দিয়েছেন দর্শকদের মনে। এখানে এলে প্রিয় ব্যক্তিত্ব ও কিংবদন্তি তারকাদের যেন জীবন্তই কাছে পাবেন ভক্তরা। তাই এখনই যারা দেখতে আসছেন তারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। রাজশাহী নগরীর কুমারপাড়া এলাকা থেকে এ গ্যালারি দেখতে আসা রঞ্জিত বলেন, এমন গ্যালারি রাজশাহীর ভাবমূর্তি আরও বৃদ্ধি করবে। তিনি বলেন, এক ভবনে এক ছাদের নিচে এসে বিশ্বখ্যাত সব কিংবদন্তিদের দেখা যাবে এখানে। এমন আয়োজন রাজশাহীর জন্য বিরল। তবুও রাজশাহীতে প্রতিষ্ঠা হয়েছে জেনে তিনি উচ্ছ্বসিত। এরই মধ্যে অনেকে আসছেন এ গ্যালারি দেখতে। সেলফি তুলছেন দেশ-বিদেশের বিখ্যাত কিংবদন্তিদের সঙ্গে। জানা গেছে, শিল্পী মৃণাল হকের মৃত্যুর প্রায় দুবছর পর তার তৈরি ভাস্কর্যগুলো রাজশাহীতে প্রদর্শনের জন্য এই গ্যালারি চালুর উদ্যোগ নেয় পরিবার। এ গ্যালারির ইনচার্জ কামরুল হাসান মিলন বলেন, এখনও এ গ্যালারি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়নি। শীঘ্রই এটির উদ্বোধন করা হবে। এটি উদ্বোধনের পর প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। এখানে প্রবেশের জন্য প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ১০০ টাকা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য ৫০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে শিশুদের জন্য পৃথক একটি শিশুজোনও স্থাপন করা হয়েছে। যাতে বাবা-মায়ের সঙ্গে এসে শিশুরাও খেলাধুলায় মেতে উঠতে পারে। তিনি বলেন, শীঘ্রই এখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়াও দেশের কিংবদন্তি খেলোয়াড় ও রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ভাস্কর্য স্থাপন করা হবে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, খ্যাতিমানদের মধ্যে স্থান পেয়েছেন কাব্যচর্চায় মগ্ন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী হয়ে দাঁড়িয়ে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, মহাত্মা গান্ধী, সাদা শাড়িতে মানবতার দূত মাদার তেরেসা, রাইফেল কাঁধে বিপ্লবী চে গুয়েভারা, ফাঁসির মঞ্চে ক্ষুদিরাম, খ্যাতিমান অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিন, মি. বিন খ্যাত রোয়ান এ্যাটকিনসন। শুরুতেই সিঁড়িতে দেখা যাবে ঝুলছে শিশুদের প্রিয় চরিত্র স্পাইডারম্যান। সংশ্লিষ্টরা জানান, ভাস্কর মৃণাল হক মোজাইক, পেইন্টিং, টাইলস ও অন্য উপকরণ দিয়ে ভাস্কর্য তৈরি করে দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরেছেন। কেবল দর্শকই নয়, চারুকলার শিক্ষার্থীদেরও এই শিল্পকর্মগুলো দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করবে বলে মনে করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষক অধ্যাপক শরীফ মোস্তফা আনোয়ার। তিনি বলেন, এটি একটি মিনি মিউজিয়ামের কাজ করবে। চারুকলার শিক্ষার্থীরা এটি দেখে অনুপ্রাণিত হবে। শিক্ষার্র্থীদের শিক্ষাক্ষেত্রে কাজে লাগবে।
×