
কোটি টাকার পানের হাট
বিকেল গড়িয়ে যখন দিনের আলো নিবে যায় ঠিক তখনই জমে ওঠে কোটি টাকার পানের হাট। সাধারণ হাট-বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের আগমন ঘটে দিনের আলোতে। আর পানের হাটে ক্রেতা-বিক্রেতারা আসেন সন্ধ্যার পরে।
বৃহস্পতিবার ও সোমবার ব্যতীত সপ্তাহের পাঁচদিন বসে এই হাট। প্রতিদিন এ হাটে বিকিকিনি হয় কোটি টাকার পান। যা গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। আর সন্ধ্যার পরের এ পানের হাটকে ঘিরে ওই এলাকায় কাঁচা-বাজার, মাছ বাজারসহ অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। যা রীতিমতো এখন ব্যাপক জমজমাট হয়ে উঠেছে।
কোটি টাকার এ পানের হাটের অবস্থান ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশ্ববর্তী বরিশালের গৌরনদী পৌর এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের টরকী বাসষ্ট্যান্ড সংলগ্ন নীলখোলা নামক এলাকায়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দিনের আলো গড়িয়ে যখন সন্ধ্যা নেমে আসে, ঠিক তখনই বিভিন্ন এলাকার পান চাষীরা ভ্যানযোগে বিক্রির জন্য তাদের পছন্দের আড়তে নিয়ে আসেন বরজের পান। পানগুলো আড়তে নিয়া আসার পরপরই শুরু হয় পান গোছানোর কাজ।
নীলখোলা এলাকার প্রায় অর্ধশতাধিক পানের আড়তের প্রতিটিতে কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ জন শ্রমিক কাজ করেন। যা দিয়ে তাদের সংসার চলে। পান চাষী, পাইকার, আড়তদার ও শ্রমিকদের আগমনে সন্ধ্যা থেকে রাত প্রায় এগারোটা পর্যন্ত সরগরম থাকে পানের হাট।
পান ক্রেতা (পাইকার) শাহজাহান তালুকদারসহ একাধিক পাইকাররা জানিয়েছেন, সপ্তাহের পাঁচদিন আমরা টরকীর নীলখোলা নামক এলাকার পানের আড়ত থেকে পান ক্রয় করি। একেকজন পাইকার প্রতিদিনি কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার পান ক্রয় করেন। এসব পান এখান থেকে ঢাকা, সিলেট, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে।
একাধিক পান চাষীরা জানিয়েছেন, আড়তগুলো গড়ে ওঠার আগে পান চাষীরা গ্রামের হাট-বাজারগুলোতে পান বিক্রি করতেন। সেসময় অনেক পান অবিক্রিত থাকতো। আড়ত হওয়ার পর একটা সুবিধা হচ্ছে, পান অবিক্রিত থাকেনা। যে কারনে আমরা আড়তগুলোতে পান বিক্রি করে আসছি।
তারা আরও জানিয়েছেন, বর্তমানে বিভিন্ন সাইজের একেক বিড়া পান আড়তে ৭০ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে শীতের দিনে পানের দাম আরও বেশি।
পানের হাটের আড়ত মালিকরা জানিয়েছেন, আড়তগুলো হওয়ার ফলে চাষীরা যেমন স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের পান বিক্রি করতে পারছেন, তেমনি ক্রেতারাও পান ক্রয় করে ব্যবসা করতে পারছেন। পান চাষী এবং ক্রেতাদের আমরা সর্বোচ্চ সুবিধা দিয়ে আসছি।
গৌরনদী উপজেলা কৃষি অফিসার মো. সেকেন্দার শেখ জানান, উপজেলার প্রায় ৬৮০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হচ্ছে। আমরা পানচাষীদের সবধরনের প্রযুক্তি ও পরামর্শ সেবা দিয়ে আসছি। অন্য বছরের তুলনায় এবার পানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। আশা করছি পান চাষীরা লাভবান হতে পারবেন।
তাসমিম