ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এক যুগে আইনী সহায়তা পেয়েছেন ৭ লাখ মানুষ

পারিবারিক সমস্যার দ্রুত সমাধান মামলা ছাড়াই

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ২৯ জানুয়ারি ২০২২

পারিবারিক সমস্যার দ্রুত সমাধান মামলা ছাড়াই

বিকাশ দত্ত ॥ এক বছর আগে দেনমোহর ও ভরণপোষণ আদায়ের জন্য জেলা লিগ্যাল এইড কার্যালয়ে আবেদন করেন ময়মনসিংহের মোছাঃ সায়মা হোসেন। ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর স্বামীর বিরুদ্ধে শারীরিক, মানসিক নির্যাতনসহ দেনমোহর, ভরণপোষণের দাবিতে এই অভিযোগ দায়ের করা হয়। উভয়পক্ষের সমঝোতায় অভিযোগকারিনী মোছাঃ সায়মা হোসেনের দেনমোহর এবং অতীত ও ইদ্দতকালীন ভরণপোষণ বাবদ ৫ লাখ টাকা প্রতিপক্ষ মোছাদ্দেহ আলফে রাহী পরিশোধ করেন। তিনি সন্তানের মাসিক ভরণপোষণ বাবদ প্রতি মাসে ৭ হাজার টাকা প্রদান করতে সম্মত হন। কোন মামলা-মোকদ্দমা ছাড়াই অতি অল্প সময়ের মধ্যে তার পারিবারিক সমস্যার সমাধান পেয়েছেন। শুধু মোছাঃ সায়মা হোসেন নয়। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে গত বছরে ৫ জন ভুক্তভোগী তাদের অধিকার ফিরে পেয়েছেন। এর মধ্যে মোছাঃ ছকিনা বেগম, প্রতিপক্ষের সঙ্গে জমি নিয়ে একাধিক মামলা মোকদ্দমা ছিল। লিগ্যাল এইডের অফিসে আপোসের মাধ্যমে তার পৈতৃক সম্পত্তি ফেরত পেয়েছেন। মোঃ বিজু মিয়ার দাম্পত্য সম্পর্ক পুনরুত্থান হয়েছে। স্ত্রী-সন্তানদের ফিরে পেয়েছেন। এ ছাড়া রমা রাণী নিরাপত্তার সঙ্গে স্বামীর সংসার ফিরে পেয়েছেন। মোছাঃ জোসনা বেগম জমি ফেরত পেয়েছেন। অন্যদিকে, মোঃ শামিম সরকার প্রতিপক্ষ আবেদনকারীর জমি দখল করেছিল। আপোসে দখল উচ্ছেদ করে জামি বুঝে পেয়েছেন। এ ছাড়া মোছাঃ রওশনারা বেগম পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছিলেন। নিরাপত্তা নিয়ে স্বামীর সংসার ফিরে পেয়েছেন। গত ১২ বছরে সংস্থার তথ্য অনুযায়ী ২০০৯ থেকে ডিসেম্বর, ২০২১ পর্যন্ত ৭ লাখ ২ হাজার ২৫ জনকে সরকারী আইনী সেবা প্রদান করা হয়েছে। এই সময়ে ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়েছে ৭৯ কোটি ৭৮ লাখ ৫৯ হাজার ৩২২ টাকা। এ ছাড়া ৬৪টি জেলা কমিটির মাধ্যমে ২০১২ সাল হতে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ৮৭ হাজার ৭২ জন কারাবন্দীকে আইনী সহায়তা প্রদান করা হয়েছে, যা সংস্থাটির ওয়েবসাইটে দেয়া রয়েছে। ময়মনসিংহ জেলা লিগ্যাল এইড অফিস সূত্রে জানা যায়, উভয়পক্ষের মধ্যকার বিরোধ মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তির লক্ষ্যে প্রতিপক্ষ মোঃ মোছাদ্দেহ আলফে রাহী বরাবর নোটিস ইস্যু করা হয়। মধ্যস্থতার তারিখ নির্ধারণ করা হয় ২০২০ সালের ১১ নবেম্বর। নির্ধারিত দিনে উভয়পক্ষ প্রতিনিধিসহ উপস্থিত হন। উভয়পক্ষ ও তাদের সঙ্গে আসা প্রতিনিধিদের নিয়ে মীমাংসা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার একপর্যায়ে জানা যায়, প্রতিপক্ষ মোঃ মোছাদ্দেহ আলফে রাহী মাদকাসক্ত থাকায় তার স্ত্রীকে প্রতিনিয়ত শারীরিক, মানসিক নিয়াতন করত। সন্তানের মাদকাসক্ত থাকার বিষয়টি প্রতিপক্ষের বাবা-মা স্বীকার করে নেন এবং অভিযোগকারিনী মোছাঃ সায়মা হোসেনকে বিনীতভাবে অনুরোধ করেন তাদের নাবালিকা সন্তানের কথা বিবেচনা করে তিনি যেন প্রতিপক্ষের সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্ক টিকিয়ে রাখেন। কিন্তু অভিযোগকারিনী কোনভাবেই সংসার টিকিয়ে রাখতে রাজী না হওয়ায় দীর্ঘ আলোচনার পর পক্ষদ্বয়ের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। অভিযোগকারিনী মোছাঃ সায়মা হোসেনের দেনমোহর এবং অতীত ও ইদ্দতকালীন ভরণপোষণ বাবদ সর্বমোট ৫ লাখ টাকা প্রতিপক্ষ মোঃ মোছাদ্দেহ আলফে রাহী ২০২০ সালের ৩০ নবেম্বর পরিশোধ করেন এবং উক্ত তারিখে কাজী অফিসে খোলা তালাকের মাধ্যমে পক্ষদ্বয়ের মধ্যকার বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়। উভয়পক্ষের কন্যা সন্তান সাফওয়ান সারাহকে (বয়স ১ বছর ৮ মাস) তার মায়ের হেফাজতে থাকার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং সন্তানের ভরণপোষণ বাবদ প্রতিপক্ষ মোঃ মোছাদ্দেহ আলফে রাহী প্রতিমাসে ৭ হাজার টাকা প্রদান করতে সম্মত হন। তিনি মামলা মোকদ্দমা ছাড়াই অতি অল্প সময়ে মধ্যে তার পারিবারিক সমস্যার সমাধান পেয়েছেন। জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা ৬৪ জেলায় ২০১২ সাল থেকে ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত কারাগারে আটকে থাকা ৯১ হাজার ৬১৩ জন অসহায় কারাবন্দীকে সরকারী আইনগত সহায়তা প্রদান করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে। করোনাকালে আইনী সেবা কার্যক্রম ॥ করোনা ভাইরাসের এ প্রাদুর্ভাবকালে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জনাব আনিসুল হক, এমপির নির্দেশনায় আইন ও বিচার বিভাগের অধীন জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা সাধারণ মানুষের জন্য আইনগত পরামর্শ কার্যক্রম আরও জোরদার করেছে। এ উদ্দেশ্যে ১২ এপ্রিল, ২০২০ তারিখে জাতীয় হেল্পলাইন ১৬৪৩০ টোলফ্রি নম্বরটি ৮ ঘণ্টার পরিবর্তে ২৪ ঘণ্টার জন্য চালু করা হয়েছে। ফলে যে কোন সময়ে অসহায় শ্রমিকরা ফোন করে তাদের আইনগত সমস্যা জানাচ্ছে এবং শ্রম আইন অনুসারে তাদের আইনগত অধিকার কী- সে বিষয়ে জানতে পারছে। পারিবারিক সহিংসতা বা যে কোন আইনী বিষয়ে সাধারণ মানুষ ১৬৪৩০ হেল্পলাইন নম্বরের স্মরণাপন্ন হচ্ছে। সারাদেশের লিগ্যাল এইড অফিসারদের এ সেবার সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে। জরুরী আইনী সেবা প্রদানের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী লিগ্যাল এইড অফিসারদের কাছে কল ট্রান্সফার করা হচ্ছে। এ ছাড়া এই সময়ের মধ্যে আইনী সহায়তা মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯ হাজার ৪ শ’ ৮৭টি। নিষ্পত্তি মামলার সংখ্যা ১ লাখ ৪৪ হাজার ৮শ’ ৬৮টি। এর মধ্যে এডিআর গ্রহণ করেছে ৫৮ হাজার ৭শ’ ৪০টি। হটলাাইনের মাধ্যমে তথ্য সেবা প্রদান করা হয়েছে ১৭ হাজার ৩২৮টি আবেদন। করোনাকালীন সংস্থা অনলাইনে আবেদন গ্রহণের মাধ্যমে কারাবন্দীসহ অসহায় বিচারপ্রার্থীদের জন্য প্যানেল আইনজীবী নিয়োগসহ সকল কার্যক্রম সম্পাদন করেছে। এ ছাড়াও অনলাইন মেডিয়েশনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
×