ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ২৩:৩০, ২৮ জানুয়ারি ২০২২

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ শুধু কবিতা নিয়ে বিরাট এক উৎসব। এ উৎসবের কথা আগে বলে নেয়া যাক। সারাদেশের আবৃত্তিশিল্পীদের মিলনমেলা। সেখানে যুক্ত হলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। বড় খবর বৈকি। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এ ধরনের অংশগ্রহণ প্রায় দেখা যায় না বললেই চলে। কিন্তু শেখ হাসিনা তো বরাবরই ব্যতিক্রম। শিল্প সাহিত্যপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বঙ্গবন্ধু জাতীয় আবৃত্তি উৎসবের উদ্বোধন করেন। সেইসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতীয় আবৃত্তি পদক প্রদান করেন তিনি। এ সময় ঢাকার শিল্পকলা একাডেমিতে উপস্থিত ছিলেন আবৃত্তিশিল্পীরা। বাইরের জেলাগুলোও এ আয়োজনের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়। প্রধানমন্ত্রী কবিতার শক্তি, আবৃত্তির গুরুত্ব তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। উৎসব আয়োজন ও পদক প্রদান কার্যক্রমে সরকারী সহায়তা অব্যাহত রাখারও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। আবৃত্তির আয়োজনে প্রধানমন্ত্রীকে পেয়ে গোটা দেশের বাচিকশিল্পীরা উচ্ছ্বসিত। তাঁর উপস্থিতি আবৃত্তি শিল্পের প্রতি বড় ধরনের স্বীকৃতি এবং সমর্থন বলেই বিবেচনা করা হচ্ছে। তাই শিল্পকলার অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে তাঁকে বারবারই ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়। তবে সব বক্তা সমানভাবে প্রধানমন্ত্রীর স্তুতি করতে গিয়ে কিছুটা অস্বস্তিরও জন্ম দিয়েছেন। এ ধরনের ছোটখাটো ত্রুটি বাদ দিলে প্রথম দিনের আয়োজনটি ছিল অনবদ্য। বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের আয়োজন ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে। এ সময়ের মধ্যে কবিতার রাজ্য ঘুরে আসতে পারেন। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। কেবল তাহলেই উৎসব আপনার। খাল উদ্ধারে দৃষ্টান্ত ॥ ঢাকার খালগুলোর দেখভাল করার দায়িত্ব এখন দুই সিটি কর্পোরেশনের। ওয়াসার ব্যর্থতায় সম্প্রতি উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে এ দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হয়। তার পর থেকে দ্রুতই বদলে যেতে থাকে দৃশ্যপট। দখল হওয়া খাল উদ্ধার ও প্রবাহমান করার কাজে দারুণ গতি আসে। এ কাজের ধারাবাহিকতায় গত রবিবার মোহাম্মদপুরের বসিলায় অভিযান চালিয়ে লাউতলা খাল উদ্ধার করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। এর পর থেকেই প্রশংসায় ভাসছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। কারণও আছে। বহু আগে খাল দখল করে সেখানে ট্রাকস্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছিল। নির্মাণ করা হয়েছিল বিশাল আকার ভবন। ছিল মার্কেট, কাঁচাবাজার ওয়ার্কশপসহ নানা কিছু। সব মিলিয়ে দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে, এটা আসলে খালের জায়গা। কোনদিন এ জায়গা কেউ উদ্ধার করতে আসবে, অবৈধ দখলদাররা হয়তো তা ভাবতেও পারেননি। কিন্তু উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম সশরীরে উপস্থিত হয়ে ঠিকই শুরু করে দেন উচ্ছেদ কার্যক্রম। অবৈধ দখলকারীরা ছিলেন যথেষ্ট প্রভাবশালী। ভবন ভাঙ্গার কাজে বাধা দেয়ার সব চেষ্টা করেন তারা। কিন্তু তাদের গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পুলিশ। চলমান থাকে উচ্ছেদ অভিযান। বুল্ডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয় ভবন। শক্ত হাতে দখলদারদের হটিয়ে তিনদিনের মাথায় খালটি তিনি খনন করেছেন। সিএস ম্যাপ অনুযায়ী, এখানে সমান্তরাল দুটো খাল ছিল। একটি মূল ধারা। অন্যটি এর শাখা। উচ্ছেদ অভিযানের ফলে দুটো খালই ফিরে পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। পরিবেশবিদরা মেয়রের দৃঢ়তার প্রশংসা করছেন। সাধারণ নাগরিকরাও উৎসাহ দিচ্ছেন। বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছেন। বৃহস্পতিবার সাধারণ এক নাগরিকের ফেসবুক পোস্ট আমলে নিয়ে আরও একটি অভিযান চালায় উত্তর সিটি কর্পোরেশন। কুড়িল ফ্লাইওভার ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মাঝখানে একটি বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের তোড়জোর চলছিল। বিষয়টি ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষের নজরে আসামাত্রই উচ্ছেদকল্পে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে পাঁচতারকা হোটেলের সাইনবোর্ড ও কয়েকটি স্থাপনা গুড়িয়ে দেয়া হয়। জায়গাটি পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, জলাধার, পার্ক এবং পাবলিক স্পেসের জন্য কাজে লাগানো হবে বলে জানিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। মেয়র আতিকুল ইসলাম বলছেন, অবৈধ দখলে ঢাকা মারাত্মক সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে। এভাবে চলতে দেয়া হবে না। খাল উদ্ধার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঢাকার জলাবদ্ধতার বড় কারণ খাল দখল। এ কারণে বৃষ্টির পানি স্বাভাবিক নিয়মে নেমে যেতে পারে না। নগরবাসীর দুর্ভোগও চরমে পৌঁছে। তাই বসবাসযোগ্য ঢাকা গড়তে এ ধরনের অভিযান চলতে থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, মেয়র বলছেন, বিনা নোটিসেই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। এ অবস্থায় মহাদুশ্চিন্তায় আছেন দখলদাররা। আর স্বস্তি প্রকাশ করছে নগরবাসী। এ অভিযান অব্যাহত থাকুক, আমাদেরও তাই প্রত্যাশা। মেট্রোরেলের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ॥ ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসছে। আর এ পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবে মেট্রোরেল। তাই এ প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে রাজধানীবাসীর কৌতূহলের সীমা নেই। আশার কথা যে, কাজও এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার বিশেষ অগ্রগতির খবর সামনে এলো। এদিন উত্তরা দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশের শেষ স্প্যানটি বসানো হয়েছে। বেলা ১১টা ১৪ মিনিটে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ৫৮২ ও ৫৮৩ নম্বর খুঁটির ওপর শেষ গার্ডারটি বসানো হয়। এ দুই খুঁটির সংযোগ স্থাপনের মধ্য দিয়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পথের প্রাথমিক ছবিটি স্পষ্ট হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক জানিয়েছেন, আগামী ১৬ ডিসেম্বর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলাচল করবে মেট্রোরেল। সে লক্ষ্যে এরই মধ্যে পাঁচ কিলোমিটার উড়াল পথে রেললাইন বসানো হয়ে গেছে। বাকি কাজও দ্রুত সম্পন্ন হবে। তার মানে, মেট্রোরেলে চড়ার সময়টা প্রায় চলেই এসেছে! প্রস্তুত হচ্ছেন তো মনে মনে?
×