সালাম মশরুর, সিলেট অফিস ॥ উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক অনেকটাই কেটে গেছে। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি এখন দৃশ্যমান শান্ত। টানা ১৩ দিনের আন্দোলন কর্মসূচীর এই পর্যায়ে পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছে। ১৩ দিন পর পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত হলেও উপাচার্য অপসারণের আগ পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে অহিংস আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এই ঘোষণা অনুযায়ী বুধবার রাতে প্রতিবাদী সঙ্গীত পরিবেশন ও বৃহস্পতিবার কিছু সংখ্যক ছাত্রছাত্রীকে ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে দেখা যায়। তবে অনশন করে অসুস্থ হয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা হাসপাতাল, হল ও নিজ বাসায় চিকিৎসা ও বিশ্রামে রয়েছেন। ভিসির বাসভবন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক, একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবনের অবরোধ প্রত্যাহার করে নিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার সাড়ে ১১টায় অবরোধ প্রত্যাহারের বিষয়টি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নিশ্চিত করেন। অবরোধ প্রত্যাহার করা হবে এমনটি বুধবার রাত ১০টা ৫০ মিনিটে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মোহাইমিনুল বাশার রাজ। এর পর বৃহস্পতিবার সাড়ে ১১টায় শাহেরিয়ার আবেদীন অবরোধ প্রত্যাহারের বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, আমরা জাফর ইকবাল স্যারের অনুরোধে ও আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করে নিয়েছি। ভিসির বাসভবন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক, প্রত্যেকটি একাডেমিক ভবনের অবরোধ উঠিয়ে নিয়েছি। প্রত্যেকটির তালা খুলে দিয়েছি। তিনি বলেন, রেজিস্ট্রার ভবন ও কনট্রোলার অফিসের তালাও খুলে দেয়া হবে। নতুন কর্মসূচী সম্পর্কে তারা বলেন, আমাদের আন্দোলনের ধরন পাল্টানো হবে। আমরা বিভিন্ন সাংস্কৃতি কর্মকা-, রোড পেইন্টিং করব, সবার সঙ্গে আলোচনা করে কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। ভিসি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে শাহেরিয়ার আবেদীন বলেন, ভিসি পদত্যাগের প্রজ্ঞাপন যতক্ষণ না জারি হবে, ততক্ষণ আমাদের আন্দোলন চলবে।
গত ১৭ জানুয়ারি দুপুর আড়াইটার দিকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে একাডেমিক ভবন ‘এ’ ছাড়া বাকি ভবনগুলো এবং প্রশাসনিক ভবন দুটিতে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। একই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে বালুর বস্তা, রড ও বাঁশ দিয়ে অবরোধ করেছিলেন। এরপর ভিসির বাংলো অবরোধ করে রাখেন তারা। অবশেষে শিক্ষালয়টির সাবেক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক ইয়াসমিন হকের অনুরোধে ও আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা অনশন ভাঙ্গেন এবং অবরোধ প্রত্যাহার করেন। এ বিষয়ে আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র শাহরিয়ার আবেদিন বলেন, ‘অনশন করতে গিয়ে আমাদের ২৮ জন শিক্ষার্থীই অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। অনশন ভাঙ্গার দিন সকাল পর্যন্ত ১৬ জন শিক্ষার্থী হাসপাতালে ছিলেন। পরে তাদের হাসপতাল থেকে নিয়ে এসে বুধবার সকালে জাফর ইকবাল স্যারের কথায় অনশন ভাঙ্গি আমরা। তিনি বলেন, অনশন ভাঙ্গার পর ৬ জন শিক্ষার্থীর শারীরিক অবস্থা বেশ খারাপ হওয়ায় তাদের আবারও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে ৫ জনের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে বৃহস্পতিবার সকালে তাদের বাসায় নিয়ে আসা হয়। একজন শিক্ষার্থী এখন পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে, যারা বাসায় এসেছেন তারা পুরোপুরি সুস্থ হতে আরও সময় লাগবে। চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানেই তারা আছেন। শাহেরিয়ার আবেদীন আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে- আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে আজ-কালের মধ্যে হলগুলো খুলে দেয়া হবে। তাই সব শিক্ষার্থী হলে চলে আসবেন। এরপর আমরা ধারাবাহিকভাবে- এই ভিসির অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করে যাব।
উপাচার্যকে সরিয়ে নেয়ার গুঞ্জন ॥ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে সরিয়ে নেয়ার প্রস্তুতি চলছে। দু-চারদিনের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। এখানে নতুন উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হবে। বৃহস্পতিবার একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র থেকে প্রাপ্ত সংবাদ গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। শাবি ক্যাম্পাসেও ছিল এমন আলোচনা।
পরিস্থিতি শান্ত
শাবিতে অহিংস আন্দোলন চলবে ॥ ভিসি সরিয়ে নেয়ার গুঞ্জন
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: