ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বেসরকারী হাসপাতালকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ২৬ জানুয়ারি ২০২২

বেসরকারী হাসপাতালকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের মানুষের অতি আত্মবিশ্বাসের কারণে দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। মঙ্গলবার বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, মানুষের উদাসীনতার কারণে এক থেকে ৩২ শতাংশে উঠেছে সংক্রমণের হার। এখন করোনা সংক্রমণের ৭০-৮০ ভাগই ওমিক্রনে আক্রান্ত, যা আশঙ্কাজনক। ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তবে জনগণ এগিয়ে না আসলে তা সফল হবে না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সংক্রমণ বৃদ্ধির আরেকটি কারণ বৈশ্বিক। সারাবিশ্বে বৃদ্ধি পাচ্ছে, বাংলাদেশেও। তবে একটা আশার খবর হচ্ছে ইউরোপে কমছে, ভারতে কমছে, তাদের আক্রান্তের সংখ্যা লাখ লাখ ছিল। এখন আস্তে আস্তে কমে আসছে। ওমিক্রনের প্রভাব ক্ষীণ হতে পারে, কিন্তু তার সংক্রমণের ক্ষমতা অনেক বেশি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সংক্রমণ যখন বেশি হবে তখন মৃত্যু বেশি হবে। করোনা রোগীদের চিকিৎসায় সরকারী হাসপাতাল প্রস্তুত আছে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, রাজধানীতে সরকারী যে হাসপাতাল আছে, সেগুলোর ২৫ শতাংশ শয্যা ভরে গেছে। এভাবে সংক্রমণ বাড়তে থাকলে ধীরে ধীরে বেডের চাহিদা বাড়বে। সংক্রমণ বাড়লে সেই হারে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে না উল্লেখ করে জাহিদ মালেক বলেন, এর কারণ হচ্ছে টিকা নেয়া। আমরা ৩১ কোটি টিকা পাব। অনেক মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, যার ফলে হসপিটালাইজেশন কম হবে। আমাদের টার্গেটেড আরও ৩ কোটি লোক বাকি আছে। ট্রান্সপোর্ট, ইন্ডাস্ট্রি, কনস্ট্রাকশন সেক্টর বাকি আছে। তারা এগিয়ে আসেনি নেয়ার জন্য। তাদের কিভাবে টিকা দেয়া যায় সে বিষয়ে আমরা বৈঠক করেছি। হাসপাতালে রোগী যারা আসছেন তাদের ৮৫ শতাংশই টিকা নেননি এবং যারা মারা যাচ্ছেন তাদের ৮৫ শতাংশই টিকা নেননি বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, বাসার বাইরে মানুষ সেইভাবে মাস্ক পরে না। স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। ওমিক্রনকে হাল্কা করে নিয়ে আমরা যদি ইচ্ছামতো চলাফেরা করি তাহলে আমাদের ক্ষতি হবে। আমাদের দেশ অনেক ভাল অবস্থায় আছে। আমাদের সব সূচকই ভাল আছে। আমরা যদি ফেল করি তাহলে সূচকগুলো ভাল থাকবে না। আগে বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকরা যেভাবে এগিয়ে এসেছিল, এবারও সেভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আশা করি এবারও আপনারা আগেরবারের মতো করবেন। আমি সব জায়গায়ই আপনাদের কথা বলি। করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন মোকাবেলায় বেসরকারী হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, গতবার ২ থেকে ৩ হাজার বেড আপনারা প্রস্তুত করেছিলেন। এবারও আশা করি, প্রস্তুত করবেন যদি প্রয়োজন হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ডেল্টা ধরন আমরা মোকাবেলা করেছিলাম তখন আমাদের অনেক কিছুর স্বল্পতা ছিল। সেভাবে ভ্যাক্সিনেশন কার্যক্রম শুরু হয়নি। ডাক্তার-নার্স হাসপাতালে যারা আছেন তাদের অভিজ্ঞতা কম ছিল। দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলার পর আমাদের আস্থা জন্মেছে, আমরা মোকাবেলা করতে পারি। আমাদের জনবল শুধু প্রশিক্ষিত হয়নি, হাসপাতালগুলো সুসজ্জিত হয়েছে। আমরা খুবই আনন্দিত ছিলাম এবং আশা করেছিলাম, করোনা বাংলাদেশ থেকে বিদায় নেবে। মৃত্যুর হার শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছিল। কেন জানি আমরা সচেতন হতে পারি না এমন আক্ষেপ প্রকাশ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা ব্যাপক হারে, বেপরোয়াভাবে মাস্ক না পরে ঘোরাফেরা করেছি। আপনারা দেখেছেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজারে লাখ লাখ মানুষ বেড়াতে গেছে। বিয়ে-শাদি হয়েছে দেশে, হাজার হাজার মানুষকে দাওয়াত দেয়া হয়েছে, কেউ মাস্ক পরেনি। তিনি বলেন, সরকারী প্রায় প্রতিটি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের লাইন লাগানো আছে। পরীক্ষার ব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে। প্রায় সাড়ে ৮০০ কেন্দ্রে পরীক্ষা হচ্ছে। এ্যান্টিজেন পরীক্ষা আমরা বেসরকারী খাতে দিয়ে দিয়েছি। করোনা চিকিৎসায় ঢাকা শহরে আমাদের ৪ হাজার বেড আছে। এর মধ্যে ১ হাজারের বেশি অকুপাইড হয়ে গেছে। বেসরকারী হাসপাতালে বেডের চাহিদা বাড়বে। ওমিক্রন মোকাবেলায় ইতোমধ্যে আমরা বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছি। কোন চেষ্টাই সফল হবে না যদি জনগণ না এগিয়ে আসে। ওমিক্রনের উপসর্গ মৃদু ভেবে অবহেলা করার সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, রোগী সংখ্যায় যদি অনেক বেশি হয় তাহলে আল্টিমেটলি মৃত্যু বাড়বে।
×