ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লটারিতে ভর্তি

বয়সের অসঙ্গতি দূর করে নীতিমালা সংশোধন

প্রকাশিত: ২৩:২৮, ২৩ জানুয়ারি ২০২২

বয়সের অসঙ্গতি দূর করে নীতিমালা সংশোধন

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লটারির মাধ্যমে ভর্তির বয়সের যে অসঙ্গতি দেখা দিয়েছিল তা সংশোধন করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ চলতি মাসে উপসচিব আলমগীর হুছাইন স্বাক্ষরিত সংশোধিত নীতিমালা সকল সরকারী মাধ্যমিক স্কুলে পাঠানো হয়েছে। এই নীতিমালায় ভর্তির বয়সের বিষয়সহ কয়েকটি বিষয় সংশোধন করে লটারির মাধ্যমেই ভর্তি কার্যক্রম রাখা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আলমগীর হুছাইন স্বাক্ষরিত ভর্তির নীতিমালায় বলা হয়েছে ভর্তির এন্ট্রি শ্রেণী হতে আসন শূন্য সাপেক্ষে নবম শ্রেণী পর্যন্ত ভর্তি করা যাবে। প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীর বয়স ৬ বছরের উর্ধে হতে হবে। এই হিসাবে দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত বয়স গণনা করতে হবে। যেমন যে শিক্ষার্থী ৬ প্লাস বয়সে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছিল সেই শিক্ষার্থী তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তির বয়স হতে হবে ৮ বছরের বেশি (৮ প্লাস)। পূর্বের নীতিমালায় সরকারী মাধ্যমিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তির সময় বলা হতো বয়স অনুর্ধ ৯ বছর হবে। দু’বছর আগে ভর্তির লটারি প্রথা চালু হওয়ার পর দেখা গেছে ৬-৭ বছরের অনেক শিশু লটারিতে সুযোগ পেয়ে সরকারী মাধ্যমিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছিল। তারা মেধাবী ও অধিক বয়সী শিক্ষার্থীর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারেনি। অনেকেই স্কুলের পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়। নতুন নীতিমালায় বয়স জটিলতার এই অসঙ্গতি আর থাকছে না। সরকারী মাধ্যমিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তির লটারিতে নাম ওঠার পর ভর্তির সময় তার বয়স দেখা হবে অনলাইনের জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে। ভর্তির ফরমের সঙ্গে অনলাইনের জন্ম নিবন্ধনের সত্যায়িত কপি সংযুক্ত করতে হবে। নির্ধারিত বয়সেই কেবল তৃতীয় থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত ভর্তি হওয়া যাবে। ভর্তির বয়সের উর্ধসীমা নির্ধারণ করবে সরকারী মাধ্যমিক স্কুল কর্তৃপক্ষ। নীতিমালায় বলা হয়েছে সরকারী মাধ্যমিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত আসন খালি থাকা সাপেক্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে। এদিকে যমজ শিশু ও সহোদর ভর্তির বিষয়ে নীতিমালা হয়েছে। যমজ শিশুর ভর্তি নিয়ে একটি ভুল ধারণা ছিল অভিভাবকগণের মধ্যে। তারা মনে করতেন যমজের একজন লটারিতে সুযোগ পেলে যমজের অপরজন ভর্তি হতে পারবে। বিষয়টি নিয়ে চলতি (জানুয়ারি) মাসের প্রথমে বগুড়ায় ব্যতিক্রমী এক মানববন্ধন হয়েছে। যেখানে দেখা গেছে বগুড়া সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণীতে চার যমজের (৮ জন) প্রত্যেকের একজন করে লটারিতে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তির সুযোগে পেয়েছে। অভিভাবকগণের দাবি যমজ প্রত্যেকেই ভর্তি করতে হবে। এই বিষয়ে নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, শুধুমাত্র আসন খালি থাকা সাপেক্ষে যমজ ও সহোদররা ভর্তি হতে পারবে। এ ক্ষেত্রে দম্পতির শুধু দুইজন সন্তান থাকতে হবে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর ভর্তির জন্য প্রতি ক্লাসে ২ শতাংশ আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। তবে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষায় নূন্যতম নম্বর পেতে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধার নিকটজনের ভর্তির জন্য প্রতি শ্রেণীতে ৫ শতাংশ আসন খালি রাখা হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলে মেয়ে অথবা ছেলে ও মেয়ের ঘরের নাতি নাতনিরা ভর্তির সুযোগ পাবে। এ ক্ষেত্রে ভর্তি পরীক্ষার ন্যূনতম নম্বর পেতে হবে। কোভিড-১৯ শুরুর পর সরকারী প্রাথমিক স্কুলগুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা হয়নি। এ্যাসইনমেন্ট জমা দেয়ার মাধ্যমে পরবর্তী শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছে। সরকারী মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা চালু আছে। তৃতীয় শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষায় মূল্যায়নের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীরা পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ হচ্ছে। বগুড়া জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামাপদ মুস্তফি ভর্তির নতুন নীতিমালার বিষয়ে বলেছেনে, লটারিতে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তির বয়সের যে জটিলতা ছিল তা কাটিয়ে ওঠা গেছে। আরেকটি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক বলেন, লটারিতে ভর্তি চালু হওয়ার পর প্রতিটি সরকারী ও বেসরকারী স্কুলে মেধাবী ও কম মেধাবী একইসঙ্গে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। যারা লটারিতে ভর্তি হয়েছে তাদের মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল কেমন হবে এই বিষয়টি আমলে আনা দরকার। এতকাল মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো স্কুলের মেধাবীরাই ভালো ফলাফল করত। অর্থাৎ সরকারী ভালো স্কুলগুলোতে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাবীরা সুযোগ পেত। বর্তমানে লটারি প্রথায় যার ভাগ্য সুপ্রসন্ন তারা মেধাবী হোক আর নাই হোক সুযোগ পাচ্ছে। পরবর্তী বছরগুলোতে যদি লটারি প্রথা বহাল থাকে তাহলে বোঝা যাবে কোন স্কুলের পাঠদান কেমন। বড় এক প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়েছে সরকারী মাধ্যমিক স্কুলগুলো। সরকারী মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তির সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীর ক’জন অভিভাবক বলেন, আশা করছেন সন্তানরা পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করবে। অবশ্য তাদের পাঠ্যক্রম এগিয়ে নিতে অভিভাবকদের মনযোগী হতে হবে।
×