ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৯ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা এক শ’জনের বেশির উপস্থিতিতে কোন অনুষ্ঠান নয় বাণিজ্যমেলা, শপিংমল-হাটবাজার চলবে স্বাভাবিক অর্ধেক কর্মী নিয়ে চলবে অফিস-আদালত

ফের বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ॥ করোনার লাগাম টানতে পাঁচ জরুরী নির্দেশনা

প্রকাশিত: ২২:৪৭, ২২ জানুয়ারি ২০২২

ফের বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ॥ করোনার লাগাম টানতে পাঁচ জরুরী নির্দেশনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনার ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে নানামুখী নির্দেশনা দিয়েই যাচ্ছে সরকার। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। ভাইরাসটির উর্ধমুখী সংক্রমণ ঠেকাতে না পেরে আবার নতুন করে ৫টি জরুরী নির্দেশনা জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। নতুন জারি করা সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ২১ জানুয়ারি শুক্রবার থেকে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ থাকবে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শপিংমল, দোকানপাট, চলমান বাণিজ্যমেলা নিয়ে কোন নির্দেশনা না থাকলেও ১০০ জনের বেশি মানুষ নিয়ে কোন সমাবেশ বা অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের পরীক্ষা। সরকারী প্রজ্ঞাপনের পরপরই সশরীরে ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। একইসময় বন্ধ থাকবে দেশের সব কোচিং সেন্টার। এদিকে নতুন নির্দেশনায় না থাকলেও অর্ধেক কর্মী নিয়ে অফিস-আদালত চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সব মিলিয়ে করোনার উর্ধমুখী সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর হতে যাচ্ছে সরকার। জানা যায়, গত ১৩ জানুয়ারি থেকে চলমান ১১ দফা বিধিনিষেধ যথাযথভাবে কার্যকর না হওয়ার প্রেক্ষিতে শুক্রবার এই ৫টি জরুরী নির্দেশনা জারি করা হয়। নির্দেশনার প্রথমেই ২১ জানুয়ারি শুক্রবার থেকে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। ২ নম্বর নির্দেশনায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অনুরূপ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়। এছাড়া যেকোন ধরনের রাষ্ট্রীয়/সামাজিক/ রাজনৈতিক/ ধর্মীয় সমাবেশ/ অনুষ্ঠানে ১০০ জনের বেশি মানুষের উপস্থিতিতে সমাবেশ করা যাবে না উল্লেখ করে বলা হয় এসব অনুষ্ঠানে যারা যোগ দেবেন তাদের অবশ্যই টিকার সনদ বা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর সার্টিফিকেট আনতে হবে বলে জানানো হয়। সরকারী-বেসরকারী অফিস, শিল্পকারখানায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবশ্যই টিকার সনদ গ্রহণ করার নির্দেশনাও দেয়া হয়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব বহন করবে উল্লেখ করা হয়। তবে এই নির্দেশনার বাইরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, এখন থেকে অফিস-আদালতগুলো চলবে অর্ধেক জনবল দিয়ে। শীঘ্রই এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনও জারি করা হবে বলেও জানান তিনি। মন্ত্রিপরিষদ কর্তৃক নির্দেশনার ৫ নম্বরে বলা হয় বাজার, মসজিদ, বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট, রেলস্টেশনসহ সবধরনের জনসমাবেশে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। যা প্রশাসন/ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোরভাবে মনিটর করবে। এসব নির্দেশনা মোতাবেক আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের সব স্কুল-কলেজ ও সমমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকবে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের পরীক্ষাও স্থগিত থাকবে জানিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এসব পরীক্ষার সময়সূচী পরবর্তীতে জানানো হবে। একই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খোলা থাকলেও অনলাইনে ক্লাস পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, জাতীয় সিদ্ধান্ত অনুসরণ করে একই সময় পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও (ঢাবি) বন্ধ থাকবে। এ সময়ে খোলা থাকবে ঢাবির সব আবাসিক হল। সেশনজট নিরসনে প্রতিষ্ঠানটিতে ক্লাস চলবে অনলাইনে, সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে প্রশাসনিক কার্যালয়ও। এ ছাড়াও সশরীরে ক্লাস বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আবাসিক হল খোলা রেখে অনলাইন ক্লাস নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্বল্পতায় সশরীরে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে বন্ধ রয়েছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে শিক্ষা কার্যক্রম আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে আবাসিক হলসমূহ খোলা থাকবে। অনলাইনে যথারীতি ক্লাস চলবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলমান ও ঘোষিত পরীক্ষাগুলো সশরীরে অনুষ্ঠিত হবে। একাডেমিক কার্যক্রমও সশরীরে বন্ধ থাকবে। তবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে যাদের পরীক্ষার সময়সূচী দেয়া হয়েছে, কিন্তু পরীক্ষা শুরু হয়নি তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত ৬ ফেব্রুারির পরে হবে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) প্রথম বর্ষের ক্লাস আগামী ৩০ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রথম বর্ষের রেজিস্ট্রেশন ও শূন্য আসনে ভর্তিও বন্ধ থাকবে। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত পরবর্তীতে জানানো হবে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত পাওয়া না গেলেও একই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সচিব ফেরদৌস জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের নিজস্ব একাডেমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে। বন্ধ হবে কিনা সে সিদ্ধান্তও নেবে স্ব স্ব কর্তৃপক্ষ। এদিন স্বাস্থ্য অধিদফতরে আয়োজিত দেশের করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত বিশেষ এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের পাশাপাশি অর্ধেক লোকবল দিয়ে অফিস আদালত পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এটা খুব শীঘ্রই প্রজ্ঞাপন আকারে চলে আসবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, গণপরিবহনে যাতে ভোগান্তি না হয়, সেজন্য এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণেই বিধিনিষেধগুলো জারি করা হয়েছে। সবাইকে এগুলো মেনে চলতে হবে। আমরা আগেও বিধিনিষেধ দিয়েছি, এগুলো কার্যকরের চেষ্টা চলছে। সংক্রমণ যাতে কমে সেজন্য এই সিদ্ধান্ত। পরিবার, দেশ ও নিজের সুরক্ষার জন্য আমাদের নিয়মগুলো মানতে হবে। নির্দেশনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব প্রশাসনের-এমনটা জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা চাইব, তারা যেন আরও নজরদারি বাড়ান। জনগণের দায়িত্ব আরও বেশি। নিজেদের সুরক্ষায় বিধিনিষেধ নিজেদেরই পালন করতে হবে। সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। মন্ত্রী বলেন, সরকার বিধিনিষেধ দিতে পারে, কিন্তু মানার দায়িত্ব জনগণের। জনগণই পারবে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি চালিয়ে নিতে। জনগণ ইচ্ছা করলে সবই সম্ভব। তাদের ইচ্ছার ওপরই নির্ভর করে আমরা কত তাড়াতাড়ি এই সংক্রমণ থেকে বেরিয়ে আসতে পারব। এদিকে নির্দেশনায় আপাতত ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ থাকার কথা বলা হলেও তবে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেছেন, সংক্রমণ কমলে আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে। শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে ডাঃ দীপু মনি বলেছেন, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সংক্রমণের হার কমে গেলে আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে। এখন অনলাইনে ক্লাস কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে জানান তিনি। হঠাৎ করেই শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ীই স্কুল-কলেজ বন্ধ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হল রয়েছে, সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীরা চলাচল করবে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে আবারও ক্লাসে ফিরবেন তারা। তবে শিক্ষকরা প্রশাসনিক কাজে যোগ দিতে পারবেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি কোচিং সেন্টারও বন্ধ থাকবে বলে জানান তিনি। তবে নতুন এ নির্দেশনায় চলমান ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলাসহ শপিংমল-দোকানপাট বন্ধের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। যদিও এর আগের ১১ দফা নির্দেশনা দোকানপাট রাত ৮টার মধ্যে বন্ধের কথা বলা হয়েছিল তা ওই কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ ছিল। টিকার সনদ নিয়ে বাণিজ্যমেলায় প্রবেশের কথা বলা হলেও মেলার প্রবেশপথে ছিল তা পুরোপুরি উপেক্ষিত। উপরন্তু শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় মেলায় ছিল মানুষের উপচে পরা ভিড়। অধিকাংশের মুখেই ছিল না মাস্ক। সামাজিক দূরত্ব দূরে থাক মানুষজনের ঠেলাঠেলিতে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না মেলা প্রাঙ্গণে। রাজধানীর শপিংমলগুলোতেও একই অবস্থা দেখা যায়। প্রায় সবগুলো মার্কেটেই ছিল মানুষের ভিড়। খোলা রয়েছে সিনেমা হলগুলোও। ছুটির দিনে সপরিবারে বিনোদন-কেন্দ্রগুলোতেও ছিল চোখে পড়ার মতো উপস্থিতি। এমন অবস্থায় শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই কেন বন্ধ করা হলো এমন প্রশ্ন সাধারণ মানুষের। সমালোচনায় মুখর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের নিউজফিডে সংবাদকর্মী নাজিয়া আফরিন অনেকটা কৌতুক করেই লিখেন, যাক বাবা বাঁচা গেল। স্কুল-কলেজের হ্যাপা নাই, চৌদ্দ গুষ্ঠি মিলে বাণিজ্যমেলায় যাই, বিরিয়ানির হাঁড়ি আর নতুন ডিজাইনের প্লাস্টিকের বদনা কিনতে হবে। ইমতিয়াজ ইমতু নামে প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, স্কুল-কলেজ তো এমনিতে একদিন দুই দিন চলছে। বন্ধ করে কি লাভ? বাণিজ্য মেলা তো চলছে! এভাবেই চলুক। নারী অধিকারকর্মী ফারজানা আফরিন বলেন, স্কুল-কলেজ কি করোনা উৎপাদনের জায়গা? সব চালু রয়েছে অথচ বন্ধ করে দেয়া হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখন বলা হচ্ছে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। কিন্তু গতবারের মতো যদি এবছর দিনের পর দিন ছুটি বাড়ে তাহলে আমাদের শিশুদের কি হবে? এমনিতেই তাদের শিক্ষাজীবনে বড় ধরনের একটা ছন্দপতন ঘটেছে। এই মুহূর্তে সরকারের উচিত করোনা কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তার প্রতি নজর দেয়া। বিশেষ করে মানুষ কিভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে তা নিশ্চিত করা। বিনামূলে মাস্ক বিতরণ করা। তা না করে দুই দিন পরপর বিধিনিষেধের নামে এসব প্রহসন আর কতদিন! তারচেয়ে আবারও লকডাউনই দিয়ে দেয়া হোক। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। ১৮ মার্চ করোনায় প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। ওই বছরের শেষ দিকে সংক্রমণ ও মৃত্যু কিছুটা নিম্নমুখী হলেও ২০২১ সালের এপ্রিলের পর থেকে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। আর ২০২২ সালের শুরুতেই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট আবারও চোখ রাঙ্গাতে শুরু করে। দ্রুত বাড়তে থাকে সংক্রমণ ও মৃত্যু। শুক্রবারে নতুন করে এতে আক্রান্ত হয় ১১ হাজার ৪৩৪ জন। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে সরকারকে এরকম সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বলে জানান করোনা প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ডাঃ ইকবাল আর্সলান। তিনি বলেন, টিকাদান কর্মসূচী চলছে স্বাভাবিকভাবেই। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫ কোটির ওপর টিকা দেয়া হয়েছে। আমরা দেখেছি গত বছরের শেষে সংক্রমণ নিম্নমুখী ছিল। ফলে জনজীবনও স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। কিন্তু চলতি বছরের শুরু থেকে আবারও যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে তাতে সরকারের কঠোর হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। যেহেতু লকডাউনের কারণে দেশকে আর্থিক বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় তাই আপাতত: লকডাউনের পরিবর্তে বিধিনিষেধে কড়াকড়ি করা হলো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা তারই একটা অংশ। আশা করছি আগামী দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসবে। এর আগে গত বছরের ২৯ মার্চ করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এক নির্দেশনায় জরুরী সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব সরকারী, বেসরকারী অফিস, শিল্প কারখানা ৫০ ভাগ জনবল দিয়ে পরিচালনার নির্দেশ দেয়া হয়। একইসঙ্গে গর্ভবতী, অসুস্থ ও ৫৫ বছরের বেশি বয়সীদের বাড়িতে অবস্থান করে কাজ করার ব্যবস্থা করতে বলা হয়। পরবর্তী সময়ে ৪ এপ্রিল থেকে সরকারী সব দফতরে অর্ধেক জনবলে অফিস কার্যক্রম শুরু হয়।
×