ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

রাষ্ট্রপতির কাছে শিক্ষার্থীদের চিঠি ॥ পুলিশের মামলায় আসামি ৩ শতাধিক

ভিসি প্রত্যাহার দাবিতে শাবিতে আন্দোলন অব্যাহত

প্রকাশিত: ২৩:২৫, ১৯ জানুয়ারি ২০২২

ভিসি প্রত্যাহার দাবিতে শাবিতে আন্দোলন অব্যাহত

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ শাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছে। টানা ষষ্ঠ দিনের মতো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, প্রক্টরিয়াল কমিটি ও ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে সরিয়ে শিক্ষার্থীবান্ধব উপাচার্য নিয়োগ দিতে রাষ্ট্রপতি ও আচার্য বরাবরে চিঠি দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের পদত্যাগ, হলের যাবতীয় অব্যবস্থাপনা দূর করে সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত এবং ছাত্রীবান্ধব ও দায়িত্বশীল প্রাধ্যক্ষ কমিটি নিয়োগের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ’ ছাত্রী। গত শনিবার সন্ধ্যায় ছাত্রীদের কর্মসূচীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠে। এরপর পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে থাকে। গত ৫ দিন যাবত আন্দোলনে উত্তাল শাবি। এরমধ্যে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে অবরুদ্ধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। তাকে উদ্ধারে এ্যাকশনে যায় পুলিশ। তাদের রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও লাঠিচার্জে অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হন। পুলিশের সহায়তায় মুক্ত হয়ে শাবি উপাচার্য বসেন জরুরী সিন্ডিকেট সভায়। বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হলেও শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করেন। সোমবার সকাল থেকে ফের আন্দোলন শুরু হয় শাবিতে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এই আন্দোলনে শাবি এখন উত্তাল। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সকাল থেকে দফায় দফায় বিক্ষোভ করেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা একযোগে শাবির বঙ্গবন্ধু হল, সৈয়দ মুজতবা আলী হল, প্রথম ছাত্রী হল ও বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী (দ্বিতীয় ছাত্রী হল) হলে তালা লাগিয়ে দেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শাহপরান হলের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। শাবিপ্রবি প্রশাসনের কাউকেই হলে ঢুকতে দেয়া হয়নি। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনরত দুই থেকে তিন শ’ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) জালালাবাদ থানার এসআই (নিরস্ত্র) মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান বাদী হয়ে এই মামলা করেছেন। রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি ॥ শাবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপাচার্যের অপসারণের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে ডাকযোগে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। এর আগে বিক্ষোভ মিছিল শেষে বেলা ১১টায় সকল শিক্ষার্থী একসঙ্গে বসে কর্মসূচীর ঘোষণা দেন। এ সময় আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী শাহেরিয়ার আবেদীন রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো চিঠিটা সকলের উদ্দেশে পাঠ করে শোনান। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরের অবস্থান করছিলেন। সন্ধ্যা সোয়া ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক তুলসী কুমার দাসের নেতৃত্বে শিক্ষক একটি দল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে যায়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করেন। এদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলায় উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে দেশব্যাপী শুরু হওয়া প্রতিবাদ আন্দোলনের পর অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলে শিক্ষার্থীদের আশ্ব¦াস দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। সোমবার রাত পৌনে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখ্য তিন প্রতিনিধি সাংবাদিকদের বিষয়টি জানিয়েছেন। উপাচার্য পদত্যাগ না করলে আমরণ অনশনের ঘোষণা ॥ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে আমরণ অনশনে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন এক দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার রাত পৌনে ১০টার দিকে এ কর্মসূচী ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। খবর বাংলা নিউজের। আন্দোলনরত শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আবেদীন বলেন, বুধবার বেলা ১২টার মধ্যে শাবিপ্রবির উপাচার্য স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে আমরণ অনশন শুরু হবে। একই সঙ্গে প্রক্টর ড. আলমগীর কবীর, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদ পদত্যাগ করতে হবে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা ৩০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। এদিকে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এক দফা দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচী পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এতে ২ হাজারের অধিক শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর সংবলিত চিঠি রাষ্ট্রপতি বরাবর প্রেরণ করেছেন বলে জানান আন্দোলকারীরা।
×