ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বিভাগীয় সদর দফতর কমপ্লেক্স ভবন উদ্বোধনীতে প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রংপুরে মঙ্গা নেই

প্রকাশিত: ২২:১৮, ১৭ জানুয়ারি ২০২২

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রংপুরে মঙ্গা নেই

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা আর কেউ ভবিষ্যতে থামাতে পারবে না বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রংপুরে আর মঙ্গা বা দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়নি। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েই কিন্তু রংপুরবাসী সব সুযোগ সুবিধা পেয়েছেন সেটা ভুললে চলবে না। সেখানে এক সময় খাবারের অভাবে মানুষ ধুঁকে ধুঁকে মারা যেত। দেশের উত্তরাঞ্চলে আর খাদ্য ঘাটতি নেই, এমনকি দুর্ভিক্ষও নেই। সেখানে আজ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে, এখন উদ্বৃত্ত খাদ্যের অঞ্চল হয়ে গেছে রংপুর। এই অঞ্চলের সার্বিক উন্নতির যে লক্ষ্য ছিল, আওয়ামী লীগ সরকার তা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা চাই আমাদের দেশটা আরও উন্নত হবে, এগিয়ে যাবে। রবিবার রংপুর বিভাগীয় সদর দফতর কমপ্লেক্স ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তার সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে দেশকে একটি আধুনিক ও প্রযুক্তি জ্ঞানভিত্তিক জাতি হিসেবে গড়ে তোলা। যাতে এদেশে আর কখনও মঙ্গা বা দুর্ভিক্ষ দেখা না দেয় এবং এ দেশের মানুষ আর কোন কষ্ট না পায়। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রংপুর বিভাগীয় কমপ্লেক্স মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। রংপুরে বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই ১৩ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর যত উন্নতি হয়েছে, এর আগে অনেকেই তো বিশেষ করে রংপুরের লোকই তো ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু রংপুরের মানুষের তেমন কোন ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি। তারা নিজেদের ভাগ্য গড়েছে, সাধারণ মানুষের ভাগ্য গড়েনি। তিনি বলেন, তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে অন্তত বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আজকে আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। মানুষ অনেক সচ্ছল হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। আমরা চাই, আমাদের আরও অনেক দূর যেতে হবে। সরকার স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছে এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন জাতি গঠন করে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করতে চাই, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে দেয়া নির্বাচনী ঘোষণাগুলো তার সরকার একে একে বাস্তবায়ন করেছে। আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। এই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে সেই পরিকল্পনা আমি করে দিয়েছি। সরকারপ্রধান বলেন, ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা আমরা বাস্তবায়ন শুরু করেছি। ২০১০ থেকে ২০২০ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি অর্জন করেছি। আজকে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। সেজন্য ২০২১ থেকে ২০৪১ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি সেটাও বাস্তবায়ন হবে ইনশাল্লাহ এবং বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা আর কেউ ভবিষ্যতে থামাতে পারবে না। দেশের সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ আজকে সারাবিশে^ উন্নয়নের একটা রোল মডেল। শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। মানুষ অনেক সচ্ছল হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। কিন্তু আমরা চাই আমাদের আরও অনেকদূর যেতে হবে। জাতির পিতা এদেশকে নিয়ে এ দেশের মানুষকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন- ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত বাংলাদেশ গড়বেন, আমাদের লক্ষ্য আমরা সেটাই গড়তে চাই। এদেশে আর কখনও যেন মঙ্গা বা দুর্ভিক্ষ দেখা না দেয় এবং এ দেশের মানুষ যেন আর কোন কষ্ট না পায়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আলী আজম অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। রংপুল বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আব্দুল ওয়াহাব ভুঁইয়াও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। নবনির্মিত রংপুর বিভাগীয় কমপ্লেক্সের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারিও অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয়। প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সারাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে আসার উদ্যোগ সরকার নিয়েছে। সেখান থেকে ৩০ পদের ওষুধ বিনামূল্যে প্রদান করা হচ্ছে । পাশাপাশি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে বই দেয়া হচ্ছে । তিনি বলেন, প্রত্যেকটি গ্রামকে তার সরকার আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন করে গড়ে তুলবে। যাতে গ্রামের মানুষ গামে বসবাস করলেও সবধরনের নাগরিক সুবিধা পেতে পারে। মানুষকে আর কোথাও ছোটাছুটি করতে হবে না, গ্রামেই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। সেজন্য ‘আমার গ্রাম আমার শহর কর্মসূচী’ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে সরকার। এসব উন্নয়ন কর্মসূচী যথাযথভাবে বাস্তবায়নে সকলকে সহযোগিতারও অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার রংপুর এবং আশপাশের জেলার সঙ্গে সড়ক ও রেল যোগাযোগ উন্নত করছে এবং যমুনার ওপর পৃথক রেল সেতু নির্মাণ করছে। তিনি বলেন, আমরা দ্রুত রেলের ব্যবস্থা করছি, চারলেনের ঢাকা রংপুর মহাসড়ক ৬ লেন করা হয়েছে। প্রত্যেকটি বিভাগীয় সড়ক আমরা চারলেনের করে দিচ্ছি আর হাইওয়ে ৬ লেনের করে দিচ্ছি। রংপুরসহ সকল বিভাগে ফুপ টেস্টিং ল্যাবরেটরি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তাছাড়া সরকারী সব দফতর যেন একজায়গা থেকে মানুষকে সেবা দিতে পারে সেজন্য আজকে রংপুরে অত্যাধুনিক বিভাগীয় কমপ্লেক্স করে দেয়া হলো। শেখ হাসিনা বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েই রংপুরবাসী এই সুবিধাগুলো পেয়েছেন, সেটা ভুললে চলবে না। এবার শীত একটু বেশি পড়েছে তার সরকারের পাশাপাশি বিত্তশালীরাও যেন শীতবস্ত্র বিতরণ করে দরিদ্র মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসে, সে আহ্বানও জানান প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গা কবলিত এই রংপুর অঞ্চলের অতীত দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। ক্ষমতায় আসার আগেই এসব অঞ্চলের দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে তার দলের পক্ষ থেকে সাহায্য করতে চষে বেরিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, রংপুর বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় সেই কুড়িগ্রাম থেকে শুরু করে গাইবান্ধা, নীলফামারী সব জায়গায় একেবারে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত দুর্ভিক্ষের সময় আমরা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যাই, সেখানে লঙ্গরখানা খুলে খাদ্য সাহায্য করি। যতবার বন্যা হয়েছে, দুর্ভিক্ষ হয়েছে ততবারই আমরা সেখানে গিয়েছি। গঙ্গাচড়া থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারী- প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোন জায়গা বাদ দেইনি। সেখানে সে সময় যাতায়াত ব্যবস্থা বলে কিছু ছিল না, রাস্তাঘাট ছিল না, নদীর পার দিয়ে কাদামাটি ভেঙ্গে হেঁটে যেতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারে এসে রংপুর অঞ্চলের মঙ্গা দূর করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১০ সালে আমরা রংপুর বিভাগ করে দেই। এখন উদ্বৃত্ত খাদ্যের অঞ্চল হয়ে গেছে এ রংপুর। এক সময় খাবারের অভাবে মানুষ মারা যেত, মানুষ দেখলে মনে হতো জীবন্ত কঙ্কাল হেঁটে বেড়াচ্ছে। এ অবস্থা আমার নিজের চোখে দেখা। আল্লাহর রহমতে এখন আর সেই অবস্থা নেই। তার সরকার রংপুর অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। দুর্ভিক্ষ তো দূর হয়েছেই, বরং খাদ্যও উদ্বৃত্ত থাকছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রংপুরে গত ১৩ বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে, এর আগে কখনও হয়নি। কেননা সব উন্নয়ন নির্ভর করে সরকারের চিন্তার ওপর। অথচ দীর্ঘ সময় রংপুরের লোক ক্ষমতায় থাকলেও রংপুরের মানুষের ভাগ্যের তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। তারা নিজেদের ভাগ্য গড়েছে, সাধারণ মানুষের ভাগ্য গড়েনি। তার সরকার ১০ টাকায় ব্যাংক এ্যাকাউন্ট কর্মসূচী এই রংপুর বিভাগ দিয়েই শুরু করেছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেন। দেশের সকল গৃহহীনকে ঘর করে দেয়ার মাধ্যমে ঠিকানা গড়ে দেয়ার তার সরকারের বাস্তবায়নাধীন কর্মসূচীর প্রসঙ্গ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, রংপুরে ভূমিহীন বেশি ছিল। আমরা তাদের জমিসহ ঘর দিয়েছি। আমি সবাইকে অনুরোধ করব, সারাদেশের কোথাও যেন ভূমিহীন না থাকে। প্রয়োজনে আমরা জমি কিনে ঘর করে দেব। এতে আমাদের দারিদ্র্য বিমোচন হবে। রংপুরবাসীকে উদ্দেশ করে রংপুরের পুত্রবধূ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা জানেন, ড. ওয়াজেদ সাহেব ছিলেন পরমাণু বিজ্ঞানী। পরমাণু বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ছিলেন তিনি। আজকে আমরা সেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ করছি। ২০২৪ সালের মধ্যে আশা করি, সেখান থেকে বিদ্যুত সরবরাহ করব। এ থেকে উত্তরবঙ্গই সবচেয়ে লাভবান হবে। আমরা চাই, দেশটা আরও উন্নত হবে, এগিয়ে যাবে। রংপুর অঞ্চলের মানুষের শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন. এই অঞ্চলে শিক্ষার হার কম ছিল, কিন্তু এখানে মেধাবী ছাত্র ছিল, কাজেই আমরা সেদিকে হিসেব করে আমরা এখন পদক্ষেপ নিয়েছি। কুড়িগ্রামে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি, লালমনিরহাটে এ্যাভিয়েশন এবং এ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটি এবং রংপুরে বেগম রোকেয়ার জন্মস্থান পায়রাবন্দে তার নামে একটা কমপ্লেক্স এবং ট্রেনিং সেন্টার করা হয়েছে। রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় বেগম রোকেয়ার নামেই আমরা করে দিয়েছি। কেননা তিনি প্রথম শিক্ষার উদ্যোগ নিয়েছিলেন বলেই আমরা কিছু লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছি বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রংপুর বিভাগীয় সদর দফতর কমপ্লেক্স ভবনটি খুবই চমৎকারভাবে তৈরি করা হয়েছে। আধুনিক চিন্তাভাবনা নিয়ে আলো বাতাসের ব্যবস্থা রেখে ১০ তলা ভবন করা হয়েছে। সময়ের আগে কাজ শেষ হয়েছে, টাকাও সাশ্রয় হয়েছে। সব জায়গায় প্রজেক্ট দিলে টাকা সাশ্রয় হয় না, বরং পরে আবার চায়। সেজন্য ধন্যবাদ জানাই। আমি আশা করি, ভবিষ্যতে যারা এমন কমপ্লেক্স করবে, তারাও যেন বিষয়টি মাথায় রাখে। আমরা চাই আমাদের দেশটা আরও উন্নত হবে, এগিয়ে যাবে।
×