ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম ও রংপুরের পরিবেশনায় বর্ণিল লাল-সবুজের মহোৎসব

প্রকাশিত: ০০:৩৮, ৯ ডিসেম্বর ২০২১

চট্টগ্রাম ও রংপুরের পরিবেশনায় বর্ণিল লাল-সবুজের মহোৎসব

মনোয়ার হোসেন ॥ ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশে ছড়িয়ে আছে চৌষট্টি জেলা। আর এই ৬৪ জেলার সংস্কৃতির মাঝে রয়েছে বৈচিত্র্যময়তা। আছে ভিন্নতা। আছে পৃথক ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও আচার। স্থানভেদে গানের সুরে কিংবা নাচের আঙ্গিকেও আছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। বাংলার ঐতিহ্য-লালিত অঞ্চলভিত্তিক সেই শিল্প-সংস্কৃতির নির্যাস উপভোগ করল রাজধানীবাসী। উপস্থাপিত হলো চট্টগ্রাম ও রংপুরের শিল্পীদের নাচ-গানের পরিবেশনা। সেই পরিবেশনায় বর্ণিল হলো লাল-সবুজের মহোৎসব। বেজেছে বাউলের একতারা। ভাওয়াইয়া গানের সুর মূর্ছনায় আপ্লুত হয়েছে হৃদয়। মুগ্ধতা ছড়িয়েছে চট্টগ্রামের লোকনৃত্যের উপস্থাপনা। এভাবেই ভাল লাগার আবেশে ধরা দিলো ‘বিজয়ের ৫০ বছর : লাল-সবুজের মহোৎসব’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। এফবিসিসিআই আয়োজিত হাতিরঝিলের এ্যামফিথিয়েটারে চলমান এ অনুষ্ঠানের অষ্টম দিন ছিল বুধবার। চট্টগ্রামের শিল্পীদের গানের সুরে হয় পরিবেশনা পর্ব। আপন সুরের অহঙ্কারে বাউল শিল্পী মানস পাল চৌধুরীর কণ্ঠে উচ্চারিত হয়- আমার বাংলা গানের রীতি চমৎকার/আপন প্রাণে লাগে দোলা/শুনলে সুর একতারার ...। পরের পরিবেশনায় তিনি বেছে নেন চট্টগ্রামের একটি আঞ্চলিক গান। এরপর তিনি গাইতে থাকেন ‘ছোড ছোড ঢেউ তুলি পানিত লুসাই পাহাড় উত্তুন নামিয়ারে যার গই কর্ণফুলী’। সেই সুরের সঙ্গে কাঁখে কলসি নিয়ে নাচ করেন আরেক দল শিল্পী। এরপর তিনি পরিবেশন করেন ‘একবার আইসো আসো রে বন্ধু’। শিউলি মজুমদার ও রতন মজুমদার দ্বৈত কণ্ঠে শুনিয়েছেন ‘আস্তে ধীরে চালাও গাড়ি/ডরে আঁর কইলজ্যা গুরগুরায়’। এদিনের আয়োজনে বেদনার আখ্যানময় সুরে বেলাল হোসেন গেয়ে শোনান- যেই কারিগর দেশ বানাইছেন, সেই কারিগরি নাই, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মুজিবকে হারাই ...। পরের পরিবেশনায় নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষাকে আশ্রয় করে এই শিল্পী গাইলেন- তালতো বইনে খালি খালি চোখ মারে ...। এই গানের শেষে পরিবেশিত হয় নাচ। রসের হতা হই হই আর হয়দিন বারাইবা গানের তালে নাচ করেন স্বপন বড়ুয়া ও তার দল। এ সময় দর্শকসারি থেকে ঝরে পড়ে করতালি। তারাও নেচে-গেয়ে শামিল হন শিল্পীদের সঙ্গে। একক ও সম্মেলক কণ্ঠে রংপুরের শিল্পীরা শুনিয়েছেন কালজয়ী সেই ভাওয়াইয়া গান- ও কি গাড়িয়াল ভাই কত রব আমি পন্থের দিকে চাইয়ারেসহ অনেকগুলো গান। তাদের পরিবেশিত বাকি গানগুলোর শিরোনাম ছিল ‘রঙে রূপে ভরপুর আমার বাড়ি রংপুর’, ‘যে জন প্রেমের ভাব জানে না’, ‘বিয়া পাগলা দেওরা’ ও ‘বাউকুমটা বাতাস যেন ঘুরিয়া ঘুরিয়া মরে’। পরিশেনায় অংশ নেন রণজিৎ কুমার ও তার দল, প্রিয়াঙ্কা পাল ও মদন মোহন রায়। এদিনের আয়োজনের শেষ আকর্ষণ ছিল জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী পারভেজ ও তার দল সুফিয়ানার [জঞঋ নড়ড়শসধৎশ ংঃধৎঃ: }থএড়ইধপশ[জঞঋ নড়ড়শসধৎশ বহফ: }থএড়ইধপশ পরিবেশনা। এদিনের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মোঃ মেয়র আতিকুল ইসলাম। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন। সম্মানিত অতিথির বক্তব্য দেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে টিপু মুনশি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমরা বহুদূর এগিয়েছি। আজকের বাংলাদেশের পৃথিবীর কাছে বিস্ময়। পাকিস্তান নামের যে দেশটি আমাদের একসময় শোষণ করেছে, সেই পাকিস্তানের অর্থনীতিবিদরা এখন তাদের দেশের অর্থনীতিকে বাংলাদেশের মতো করতে চায়। স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়েছে, তাতে সারাবিশ্বই অবাক হয়েছে। যেখানেই যাই, সবাই বলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর হাতে জাদুর কাঠি আছে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ প্রতিটি সূচকে এগিয়ে আছে পাকিস্তানের থেকে। পাকিস্তানের পরাজিত শত্রুরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। সেই সঙ্গে থামিয়ে দিতে চেয়েছে এদেশের অগ্রযাত্রা। কিন্তু তাদের সেই চক্রান্ত সফল হয়নি। সেই চক্রান্ত সফল না হওয়ার পেছনে অসীম সাহসী ভূমিকা রেখেছেন শেখ হাসিনা। তিনি ধীরে ধীরে দেশটাকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সেই অসাম্প্রদায়িক, অগ্রসর ও সোনার বাংলা রূপায়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন বলেন, আগামী ১০ বছর পরে বিশ্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থান হবে ২১তম। আমাদের মাথাপিছু আয় হবে সাড়ে ১২ হাজার ডলার। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই সম্ভব হয়েছে। আজ আমরা শুধু অর্থনৈতিকভাবে এগোইনি, স্বাস্থ্য, বিদু্যুতসহ বিভিন্ন খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে দেশ। স্বাধীনতার ৫০ বছর বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ২৯ বছরই ছিল স্বৈরাচারের আমলে। আওয়ামী লীগের শাসনামলেই দেশের উন্নতি সবচেয়ে বেশি হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের কারণেই বিশ্বের অন্যতম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। শুধু অর্থনীতিই নয়, সামাজিকভাবেও বাংলাদেশ অনেক দেশকে পেছনে ফেলেছে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে মূলধারায় ফিরিয়ে পরিকল্পনার কারণেই এ সফলতা এসেছে।
×