ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ট্রেনে কাটা পড়ে ৩ ভাই-বোনসহ চারজনের মৃত্যু

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ৯ ডিসেম্বর ২০২১

ট্রেনে কাটা পড়ে ৩ ভাই-বোনসহ চারজনের মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ ট্রেনে কাটা পড়ে তিন ভাই-বোনসহ চারজন নিহত হয়েছে। বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে জেলা সদর উপজেলার কুন্দপুকুর ইউনিয়নের মনসাপাড়া বউবাজার রেলব্রিজে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা ওই গ্রামের রিক্সাভ্যান চালক রেজওয়ান আলীর বড় মেয়ে লিমা আক্তার (৮), মেজো মেয়ে শিমু (৪) ছোট ছেলে মমিনুর রহমান (৩) এবং রেলব্রিজের পাহারাদার একই গ্রামের মৃত আনোয়ার হোসেনের ছেলে সালমান ফারসি শামীম হোসেন (৩০)। ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে সেখানে হাজার হাজার মানুষজন ছুটে আসে ও এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এছাড়া পুরো গ্রাম শোকের মাতমে ভাসতে থাকে। প্রত্যক্ষদর্শী গ্রামবাসীরা জানান, ওই তিন শিশুর বাবা রেজওয়ান ভ্যানচালক ও মা মজিদা আক্তার সদরের টুপিরমোড়ে একটি বিদেশী পরচুলা কারখানার নারী শ্রমিক। ফলে শিশু তিনটির বাবা-মা দুজনেই তাদের কাজে চলে যায় দাদা-দাদির কাছে রেখে। এলাকাবাসীর মতে সকাল থেকে ছিল ঘনকুয়াশা। ওই স্থানে রেললাইনের একটি ব্রিজের সংস্কার কাজ ও রেললাইন পারাপারের জন্য একটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। দুর্ঘটনার কিছু আগে নির্মাণ কাজের জন্য ইট নিয়ে একটি ট্রলি এলে সেটি দেখতে যায় ওই তিন ভাই-বোন। তারা রেলব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে ইট নামানো দেখছিল। ইটের ট্রলিটির শব্দ হচ্ছিল। এ সময় নীলফামারীর চিলাহাটি থেকে ছেড়ে আসে খুলনাগামী রকেট মেইল ট্রেন। ট্রেনটি ব্রিজটির সামনাসামনি চলে আসলে যা দেখতে পেয়ে ওই ব্রিজের পাহারাদার প্রতিবেশী সালমান ফারসি শামীম হোসেন ওই তিন ভাই-বোনকে বাঁচাতে ছুটে যায়। কিন্তু তার আগেই ট্রেনটি ব্রিজের উপরে চলে আসে। এতে তারা চারজনেই ট্রেনের ধাক্কায় কাটা পড়ে। ঘটনাস্থলে লিমা আক্তার ও শিমু নিহত হলেও মমিনুর রহমান ও সালমান ফারসি শামিম বেঁচে ছিল। তাদের এলাকাবাসী দ্রুত নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসার পথেই তারা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এই খবর পেয়ে শিশু তিনটির নানা জেলা সদরের চড়াইখোলার দোলাপাড়া গ্রামের আব্দুল মজিদ পাকু (৬৫) ঘটনাস্থলে আসার পথে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তাকে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া দুর্ঘটনা স্থানে হাজার হাজার মানুষজন ছুটে যায়। রেললাইন হয়ে পড়ে অবরুদ্ধ ও ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনাস্থলের অদূরে আটকা পড়ে নীলফামারী থেকে খুলনাগামী আন্তঃনগর রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেনটি। পরে নীলফামারীর পুলিশ সুপার মোখলেছুর রহমান ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে সকাল সারে ১০টায় ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিন শিশুর বাবা ভ্যানচালক জানান, রাতে আমার তিন ছেলেমেয়ে আবদার করেছিল সকালে তারা হোটেলে পরাটা খাবে। সকালে আমরা স্বামী স্ত্রী কাজে বের হবার আগে তিন সন্তানকে নিয়ে হোটেলে গিয়ে পরাটা ও ডিম ভাজি খাওয়াই। এরপর আমরা কাজে চলে যাই। এর কিছুক্ষণ পর খবর পাই ট্রেনে কাটা পড়ে আমার তিন সন্তান মারা গেছে। এখন আমি কি নিয়ে বাঁচব আমার তিনটি সন্তাই চিরদিনের জন্য পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল। তিন শিশুর মা মজিদা আক্তার কোন কথাই বলতে পারছিলেন না। বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন।
×