ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টিকেটের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করেছে বিশেষ সিন্ডিকেট ॥ আটাব

সব এয়ারলাইন্স দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া নিচ্ছে

প্রকাশিত: ২৩:৪১, ৮ ডিসেম্বর ২০২১

সব এয়ারলাইন্স দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া নিচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সসহ (বিমান) বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলো বিশেষ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে টিকেটের দাম বাড়িয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। এখন ঢাকা থেকে দুবাইয়ে একমুখী টিকেটের দাম পড়ে ৫০ হাজার টাকার ওপর। আগে ওই রুটে ভাড়া ছিল মাত্র বিশ হাজার। একইভাবে ঢাকা থেকে একজন প্রবাসী শ্রমিককে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে সৌদি আরব যেতে ৭৫ হাজার টাকার বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে। এভাবে সাউদিয়া, এমিরেটস, ওমান, কাতার, কুয়েত ও টার্কিস এয়ারলাইন্স দুই থেকে তিনগুণ ভাড়া বেশি আদায় করছে। এভাবেই গরিব শ্রমিকদের পকেট কাটছে দেশী-বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলো। অভিযোগ রয়েছে- কোন ট্রাভেল এজেন্সিকে গ্রুপ ফেয়ার দিচ্ছে না বিমান। একই রুটে সৌদি এয়ারলাইন্সের একমুখী ভাড়াও ৭৪-৭৫ হাজার টাকা। অথচ এক মাস আগেও এ ভাড়া ৪০-৪৫ হাজার টাকা ছিল। বিমানসহ বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলোর এমন অতিরিক্ত ভাড়ায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। সময়মতো ফিরতে না পেরে চাকরি হারাচ্ছেন অনেকে। অভিযোগ রয়েছেÑ এয়ারলাইন্সগুলো নিজেদের বিশেষ সিন্ডিকেট ও কারসাজির মাধ্যমে টিকেটের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে বাড়তি অর্থ হাতিয়ে নিচেছ। এ ক্ষেত্রে সবচে’ ন্যক্কারজনক ভূমিকা পালন করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বিমান যদি কম ন্যায্য বা উপযুক্ত ভাড়া নিতো- তাহলে বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলোও বাধ্য হতো সেটাই অনুসরণ করতে। ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি দ্রুত সুরাহা করার জন্য সিভিল এভিয়েশন ও মন্ত্রণালয়কে জানিয়েও কোন প্রতিকার মিলেনি। সবাই নির্বিকার। এ বিষয়টি দেখার কেউ নেই বলেই আকাশ পথের ভাড়ায় চলছে নৈরাজ্য। মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে বিমানের টিকেটের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ ধরনের তথ্যই প্রকাশ করেছে এ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)। এতে উপস্থিত ছিলেন আটাবের অন্যতম নীতি নির্ধারক শাহাদত হোসেন তসলিম, মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভুইয়া ও ইয়াকুব শরাফতিসহ অন্য নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে আটাব সভাপতি মনছুর আহামেদ কালাম বলেন- মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এ বছরের নবেম্বর মাসেই একমুখী ভাড়া ছিল প্রায় ৪০-৪৫ হাজার টাকা। তবে অযৌক্তিক কারণে এয়ারলাইন্সগুলো এ ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। আগে দুবাইয়ের ভাড়া ছিল ৪০ হাজার টাকা, বর্তমানে এমিরেটসে দুবাই যেতে ৮৭ হাজার টাকা লাগে। ওমানের মাস্কাটে আগে একমুখী ভাড়া ছিল ৩৫ হাজার টাকা, বর্তমানে সব এয়ারলাইন্স ৭২ হাজার টাকা নিচ্ছে। সৌদির ভাড়া নবেম্বরে ছিল ৪২ হাজার। বর্তমানে ৭৪-৭৫ হাজার টাকা। এ অবস্থায় অতিরিক্ত ভাড়া বহন করা ও যথাসময়ে কর্মস্থলে যাওয়া অভিবাসীদের জন্য প্রায় অসম্ভব ও কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের ও বিদেশের প্রায় সব এয়ারলাইন্সের টিকেটের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি করেছে এয়ারলাইন্সগুলো, এতে এজেন্সিগুলোর কোন প্রভাব নেই। বাংলাদেশের রুটে ফ্লাইটের ভাড়া বৃদ্ধি করলেও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে (ভারত, নেপাল) ভাড়া তুলনামূলক কম। ভাড়া বৃদ্ধির কারণে অনেকে কাজে ফিরতে পারছে না। এমন পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে অভিবাসন ব্যয়। সংবাদ সম্মেলনে মনছুর আহামেদ কালাম বলেন- প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পর্যটক, প্রবাসী শ্রমিক ও উমরাহ যাত্রীসহ গড়ে পাঁচ হাজার যাত্রী যাওয়ার কথা। তবে টিকেটমূল্য বৃদ্ধি ও আসনের সঙ্কট থাকায় প্রতিদিন যাচ্ছে মাত্র তিন হাজার যাত্রী। টিকেটের দাম এত বাড়ার কারণ কি দৈনিক জনকণ্ঠের এমন প্রশ্নের জবাবে আটাব নেতা শাহাদত হোসেন তসলিম বলেন- চাহিদা বেড়েছে কিন্তু যোগান বাড়েনি। এখন ঢাকায় দৈনিক গড়ে ৫-৭ হাজার সৌদির ভিসা ইস্যু করা হচ্ছে। তারা সবাই সৌদি যেতে চায় দ্রুত সময়ে। কিন্তু সে তুলনায় বিমানের সিট বা স্লট না বাড়ায় চাপ বেড়েছে টিকেটের। এতে টিকেট সঙ্কট হওয়ায় এয়ারলাইন্সগুলো এক লাফে টিকেটের দাম দ্বিগুণ করেছে। যা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও অযৌক্তিক। ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে বেবিচক ও মন্ত্রণালয় নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে উল্লেখ করে মহাসচিব মাজহারুল ইসলাম ভুইয়া বলেন, আমরা অস্বাভাবিক ভাড়ার প্রতিকার বা হস্তক্ষেপ কামনা করে বিমানমন্ত্রী, সচিব, বিমানের এমডি ও সিভিল এভিয়েশনকে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু তারা এ বিষয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি। এ সঙ্কট সমাধানে চারটি প্রস্তাব দিয়েছে আটাব। প্রস্তাবগুলো হচ্ছে- বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সসহ মধ্যপ্রাচ্যের এয়ারলাইন্সগুলোর ফ্লাইট সংখ্যা বৃদ্ধি করা, বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এয়ারলাইন্সগুলোর অতিরিক্ত সøটের অনুমোদন প্রক্রিয়া তরান্বিত করা, প্রবাসী কর্মীদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ ভাড়া ঘোষণা করা, এয়ারলাইন্সগুলোর অযৌক্তিক ভাড়া বৃদ্ধি বন্ধে রেগুলেটরি বোর্ড গঠন করা। দাবি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। এ সব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিমান প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট মাহবুব আলী এমপি এটা খুবই স্বাভাবিক উল্লেখ করে দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, এটা প্রতিযোগিতার ব্যবসা। এখানে হস্তক্ষেপ করা যায় না। কিছুদিন আগে আমি ম্যানচেষ্টার থেকে টিকেট কাটতে গিয়ে এ ধরনের চিত্রই দেখেছি। একদিন আগে যেই টিকেট ৩৫ পাউন্ড পরদিন সেই টিকেট ৭০ ডলার। কাজেই কি বলবেন। এয়ারলাইন্সগুলো তাদের মহামারীর লস এখন বেশি ভাড়া নিয়ে পুষাতে চাইছে।
×