ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কাঁঠাল থেকে হবে দই, আইসক্রিম, চকোলেট

প্রকাশিত: ০০:১৮, ৬ ডিসেম্বর ২০২১

কাঁঠাল থেকে হবে দই, আইসক্রিম, চকোলেট

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)’র বিজ্ঞানীরা কাঁঠালের পাল্প দিয়ে উন্নতমান, দারুণ স্বাদ ও অধিক পুষ্টি সমৃদ্ধ দই, চকোলেট, আইসক্রিম ও চিজ তৈরির উপকরণ ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। যা সারাবছর অতি সহজেই যে কেউ তৈরি করতে পারবে। কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের সহায়তায় পোস্টহারভেস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রসেসিং এ্যান্ড মার্কেটিং অব জ্যাকফ্রুুট প্রকল্পের মাধ্যমে সম্প্রতি এসব প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়। বারি’র পোস্টহারভেসট টেকনোলজি বিভাগের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রকল্পের প্রধান গবেষক ড. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রামের ভেটেরিনারি এ্যান্ড এনিমেল সায়েন্স ইউনিভার্সিটির ফুড সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের চার ছাত্র এ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে তাকে সহায়তা করেন। ড. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী জানান, কাঁঠালের বহুমুখী ব্যবহারের প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ধারাবাহিকতায় এ বছর আমরা দই, পুষ্টিকর আইসক্রিম, চকোলেট এবং চিজ তৈরির প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছি। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, এগুলো তৈরি করতে দুধের সঙ্গে শুধুমাত্র কাঁঠালের পাল্প প্রয়োজন। এক্ষেত্রে যদি কোন উদ্যোক্তা কাঁঠালের পাল্প সংরক্ষণ করেন, তবে সেগুলো দিয়ে সারাবছরই এসব পণ্য উৎপাদন করতে পারবেন। কাঁঠাল যেহেতু নানা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ একটি ফল, কাজেই পাল্প দিয়ে তৈরি করা পণ্যও সাধারণ বাজারের পণ্য থেকে অধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ও স্বাস্থ্যসম্মত হবে। এখানে কোন অতিরিক্ত বা কৃত্রিম রং বা ফ্লেভার ব্যবহার করা হয় না। পণ্যগুলো সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি এবং দেখতেও খুবই সুন্দর। ড. ফেরদৌস জানান, কাঁঠাল দিয়ে বিভিন্ন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পর এর পাল্প দিয়ে সারাবছর ব্যবহার করা যায় এমনকি পণ্য উৎপন্ন করা যায়, তা নিয়ে ভাবতে থাকি। যেহেতু প্রতিবছর পাকা কাঁঠালই বেশি নষ্ট হয়, কাজেই পাকা কাঁঠাল থেকে পাল্প সংগ্রহ করে তা সহজেই সারাবছর অতি সহজেই সংরক্ষণ করা যায়। এ চিন্তা থেকেই দই, আইসক্রিম, চকোলেট এবং চিজ তৈরির পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয় এবং সফলতাও আসে। ইতোমধ্যে আমাদের এখানে চট্টগ্রামের ভেটেরিনারি এ্যান্ড এনিমেল সায়েন্স ইউনিভার্সিটির ফুড সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের চারজন ছাত্র সমীক কর প্রান্ত, আবির হাসান রিজন, অভিক চাকমা ও আসম রাফসানজানি, তাদের একাডেমিক কোর্স শেষ করে ট্রেনিং করতে আসে। তাদের এ কাজে সম্পৃক্ত করি এবং সফলভাবে আমরা প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে সক্ষম হই। যেহেতু পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচুর কাঁঠাল উৎপন্ন হয়, কাজেই তারা যদি এসব প্রযুক্তি ওই এলাকায় ছড়িয়ে দিতে পারেন, তাহলে সেখান থেকেও কাঁঠাল চাষী, উদ্যোক্তা বা স্থানীয় ব্যবসায়ীরা লাভবান হতে পারবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। বারি’র পোস্ট হারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বিভাগীয় প্রধান কৃষিবিদ হাফিজুল হক খান জানান, প্রতিবছর আমাদের দেশে বিপুল পরিমাণ কাঁঠাল নষ্ট হয়। অপচয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে কাঁঠালের বহুবিধ ব্যবহারের এসব প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে আমরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারব। দই, আইসক্রিমসহ যেসব পণ্য উৎপন্ন করা হয়েছে, তা পুষ্টিকর, স্বাস্থ্যসম্মত ও লাভজনক হবে। বারি’র পোস্টহারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগ জানায়, প্রতিবছর দেশে উৎপাদিত মোট কাঁঠালের ৪৩-৪৫ ভাগ শুধুমাত্র প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যায়।
×