ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে অটোরিক্সা-ডেমু ট্রেন-বাস সংঘর্ষে পুলিশসহ হত ৩

প্রকাশিত: ২৩:৪০, ৫ ডিসেম্বর ২০২১

চট্টগ্রামে অটোরিক্সা-ডেমু ট্রেন-বাস সংঘর্ষে পুলিশসহ হত ৩

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম মহানগরীর ঝাউতলা এলাকায় লেভেল ক্রসিংয়ে ডেমু ট্রেন, যাত্রীবাহী বাস এবং অটোরিক্সার সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্যসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৬ জন, যার মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনা তদন্তে রেলওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নিহতদের একজন পুলিশ কনস্টেবল মনির হোসেন (৪০)। তিনি ট্রাফিক উত্তর বিভাগে কর্মরত। তার বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে। অপর দুজনের মধ্যে সৈয়দ বাহাউদ্দিন আহমেদ (৩০) পাঁচলাইশ থানাধীন হামজারবাগ এলাকার সৈয়দ সোহরাফ হোসেনের ছেলে। নিহত আরেকজনের নাম পরিচয় নিশ্চিত করেনি পুলিশ। উল্লেখ্য, এদের মধ্যে ঘটনাস্থলেই মারা যান ট্রাফিক পুলিশ সদস্য। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির মুখপাত্র পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাদিকুর রহমান জানান, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে প্রথমে চারজনকে আনা হয়। তাদের মধ্যে ট্রাফিক পুলিশ সদস্য মনির ঘটনাস্থলে মারা যান। এরপর বাহাউদ্দিনকে হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া আরও তিনজন ২৪ ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তবে তাদের মধ্যে এক শিশু এবং বয়স্ক এক ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। এদিকে দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে ছুটে যায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তারা রেললাইন থেকে সিএনজি অটোরিক্সা সরিয়ে নেন। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালেও পাঠান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শনিবার সকালে নাজিরহাট থেকে একটি ডেমু ট্রেন ঝাউতলার কাছাকাছি পৌঁছালে তখনও লেভেল ক্রসিংয়ের একপাশে গেট নামানো হলেও অন্যপাশে গেট খোলা ছিল। সেখান দিয়ে যান চলাচল করছিল। ওই সময় ডেমু ট্রেনটি ক্রসিংয়ের কাছাকাছি পৌঁছালে ওই স্থানে কর্তব্য পালনকারী ট্রাফিক সদস্য মনির শেষমুর্হুতে যান চলাচলের নিয়ন্ত্রণ করেন। কিন্তু তখন রেললাইনে ওপর থাকা সিএনজিকে সজোরে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় একটি বাস। এতে সিএনজি গিয়ে পড়ে ডেমু ট্রেনটির সামনে। তখন ট্রাফিক পুলিশও গাড়ির ধাক্কায় ট্রেনটির সামনে গিয়ে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে নিহত হয় ট্রাফিক পুলিশ। এ ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই রেললাইনের পাশের বস্তির বাসিন্দারা এসে প্রথমে সিএনজি থেকে উদ্ধার করে যাত্রীদের। খুলশী থানার ওসি মোহাম্মদ শাহীনুজ্জামান জানান, ক্রসিংয়ের গেটটি একপাশে না নামানোর কারণে সিএনজি অটোরিক্সাটি রেললাইনের সামনে চলে যায়। পেছন দিক থেকে একটি বাসও সিএনজির অটোরিক্সার মতো সিগন্যাল অমান্য করে সামনে গিয়ে পার হতে চেয়েছিল। সিগন্যাল অমান্য করে গাড়িটি দ্রুতগতিতে এসেই ধাক্কা দেয় সিএনজি অটোরিক্সাটিকে। তিনি আরও জানান, ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিক্সাটি দুমড়েমুচড়ে যায়। বাসেও ধাক্কা লাগে। বাসটির চালক ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। পুলিশ অটোরিক্সাকে ধাক্কা দেয়া বাসটি জব্দ করেছে। এলাকাবাসী জানিয়েছে, ঝাউতলা লেভেল ক্রসিংয়ের একটি গেট সবসময় খোলা থাকে। তাই এ দুর্ঘটনা ঘটে। ট্রেন আসার সময় একটি গেট খোলা থাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহন সহজেই পার হওয়ার চেষ্টা করে। যার ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকে যায়। অধিকাংশ সময় গেটম্যান থাকে না। যার ফলে ট্রেন আসার আগ মুহূর্তেও লেভেল ক্রসিং অতিক্রম করে যানবাহন। রেলওয়ে পুলিশের তদন্ত কমিটি ॥ নগরীর খুলশীর ঝাউতলায় ডেমু ট্রেন ও গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে রেলওয়ে পুলিশের চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার হাসান চৌধুরী বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে ঘটনাটি তদন্তে একটি কমিটি করা হয়েছে। যেহেতু একটি ঘটনা ঘটেছে। কীভাবে দুর্ঘটনাটি হয়েছে, এতে কাদের দায় আছে, এসব বিষয় উদঘাটনে আমরা তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত কমিটির প্রধান রেলওয়ে পুলিশের চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল গফুর, এছাড়া রেলওয়ে পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (সদর) ও চট্টগ্রামের রেলওয়ে থানার ওসিকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রেল গেটের বার নামানো ছিল কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা প্রত্যক্ষদর্শীদের বিভিন্ন বক্তব্য পাচ্ছি। আমরা ঘটনাস্থলের গিয়েছিলাম। অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু বক্তব্য পাচ্ছি বিভিন্ন ধরনের। তাই তদন্ত কমিটি করেছি। কমিটির সদস্যরা এ বিষয়গুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে আনবে। এদিকে এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের জিএম জাহাঙ্গীর হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি সাড়া দেননি।
×