ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

জলদস্যু দলের অর্থ সংগ্রাহক গ্রেফতার

মুক্তিপণের টাকা আদায় হচ্ছিল মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে

প্রকাশিত: ২৩:৩১, ২ ডিসেম্বর ২০২১

মুক্তিপণের টাকা আদায় হচ্ছিল মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা নৌকায় ডাকাতি ও জেলেদের অপহরণের পর নারায়ণগঞ্জ থেকে মুক্তিপণের টাকা নিচ্ছিল দস্যুরা। এরপর মোবাইল ব্যাংকিং মাধ্যমে অপহরণের টাকা আদায়ের পর তা দস্যুদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হতো। পরে লুট করা টাকা একই পদ্ধতিতে দস্যুদের পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হতো। অপহৃতরা জলদস্যু দলের অর্থ সংগ্রাহক ইলিয়াস হোসেন মৃধাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এ সময় তার কাছ থেকে অপহরণের পাঁচ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারের পর র‌্যাবের কাছে জলদুস্যদের নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য দেয় ইলিয়াস মৃধা। বুধবার দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান। র‌্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন জানান, গত নবেম্বরের মাঝামাঝি পিরোজপুর, পটুয়াখালী ও বরগুনা থেকে জেলেরা মাছ ধরতে গভীর সমুদ্রে যায়। ২০ নবেম্বর রাতে জেলেরা পাথরঘাটা, বরগুনা ও পটুয়াখালী (বলেশ্বর ও পায়রা মোহনা) বঙ্গোপসাগরের তৎসংলগ্ন ৩০-৫০ কিমি অভ্যন্তরে কয়েকজন অপহৃত হয়। এ সময় একটি নৌকার মূল মাঝি, কয়েকজন জেলে ও মোবাইল অপহরণ করে। আর দস্যুরা অপহরণ করে জেলেদের কাছে মুক্তিপণের টাকা দাবি করে এবং তাদের একটি নৌকা রেখে দেয়। যা দিয়ে ডাকাতির কাজ চালায়। তাছাড়া জেলেদের কাছ থেকে লুট করা মাছ, জাল এবং তেল ডাকাতদের নৌকার মাধ্যমে উপকূলে নিয়ে যায়। তিনি জানান, এ ঘটনার পর র‌্যাব জেলেদের উদ্ধার ও দস্যুদের আটকে কাজ শুরু করে। র‌্যাব-৮ এর আভিযানিক দল বঙ্গোপসাগরের অভ্যন্তরে ও সমুদ্রের নিকটবর্তী ডালচর, সোনার চর, চর মন্তাজসহ বিভিন্ন চরাঞ্চল এলাকায় তল্লাশি শুরু করে। পাশাপাশি হেলিকপ্টারে টহল দেয়। দস্যুরা র‌্যাবের গতিবিধি ও তৎপরতা আঁচ করতে পেরে ২৩ নবেম্বর অপহৃত জেলেদের নৌকায় রেখে কৌশলে পালিয়ে যায়। কিন্তু এসব জেলেকে ডাকাত সন্দেহে ঘিরে ফেলে হামলা চালায় স্থানীয় জেলেরা। পরে র‌্যাব মোবাইল ব্যাংকিং ট্রান্সফারের মাধ্যমে মুক্তিপণের অর্থের ব্যাপারে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহৃত রাখে। র‌্যাবের গোয়েন্দারা নারায়ণগঞ্জসহ আরও কয়েকটি জায়গায় এ সংক্রান্ত ফুটপ্রিন্ট শনাক্ত করে। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার রাতে বঙ্গোপসাগরের সমুদ্রসীমায় জেলেদের নৌকায় ডাকাতির মূল মুক্তিপণ সংগ্রাহক ইলিয়াস হোসেন মৃধাকে মুক্তিপণের টাকাসহ গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে মুক্তিপণের পাঁচ লক্ষাধিক টাকা উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত ইলিয়াস র‌্যাবকে জানায়, সে সংঘবদ্ধ জলদস্যু দলের সদস্য। ইলিয়াস দীর্ঘদিন নারায়ণগঞ্জে বসবাস করলেও তার বাড়ি পটুয়াখালীতে। এই দস্যু দলে ১৫-১৭ জন সদস্য রয়েছে। দলের সদস্যরা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে মূলত ডাকাতির কাজ করে। আর ২/৩ জন মুক্তিপণ সংগ্রহ কাজ করে। ইলিয়াসের দায়িত্ব ছিল অপহরণদের মুক্তিপণের টাকা সংগ্রহ ও বণ্টন করা। ডাকাত সর্দারের অত্যন্ত আস্থাভাজন হওয়ায় তাকে এই দায়িত্ব দেয়া হয়। আর মুক্তিপণের টাকা বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টদের কাছে ভুয়া মোবাইল নম্বর দিত। আবার অনেক সময় ভুয়া এ্যাকাউন্ট তৈরি করত। প্রতিটি ডাকাতির পর ইলিয়াস ও তার সহযোগীরা ছদ্মবেশে বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করত। পরে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলত। তারপর কাজ শেষে ওই এলাকা ত্যাগ করত। ওরা রাতে ডাকাতি করত ॥ র‌্যাবের মুখপাত্র জানান, বঙ্গোপসাগরের পটুয়াখালী উপকূল এলাকার যেসব স্থানে মাছ ধরতে জেলেদের আনাগোনা বেশি। সেসব এলাকার উপকূলে দস্যুরা অবস্থান নেয়। দিনে তারা ছদ্মবেশে বা আত্মগোপনে থেকে তাদের নিজস্ব লোকজনের মাধ্যমে খবরাখবর নিতো। পরে রাতে তারা সমুদ্র গিয়ে জেলেদের নৌকায় ডাকাতি শুরু করে। পরে তাদের কাছে থাকা টাকা, জাল ও তৈল চুরি করে উপকূল এলাকায় নিয়ে যেতে। আর জেলে অপহরণ করা হতো। এরপর মুক্তিপণ আদায়ে জেলেদের পরিবারকে হুমকি দেয়া হতো। এরপর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জেলদের পরিবারের কাছে থেকে টাকা আদায় করা হতো। তিনি জানান, মাছ ধরার মৌসুম বাদে অন্য সময় তারা গার্মেন্টসকর্মী, নির্মাণ শ্রমিক, রাজমিস্ত্রি, সেমাই ও মিষ্টি তৈরির কারখানা ও ইটভাঁটিতে কাজ করে। অনেক সময় দেশের বিভিন্ন জায়গায় একাধিক বিয়ে করে ছদ্মবেশে জীবনযাপন করছে। র‌্যাব বলছে, জেলেদের নৌকায় লুট করা মাছ, জাল, নৌকা, তেলসহ অন্যান্য জিনিস অল্প দামে বিক্রি করত। এগুলো কারা কিনছে তাদের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।
×