ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তিতে বদলে গেছে পাহাড়

প্রকাশিত: ২৩:২০, ২ ডিসেম্বর ২০২১

ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তিতে বদলে গেছে পাহাড়

জীতেন বড়ুয়া ॥ আজ ২ ডিসেম্বর। ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২৪তম বর্ষপূর্তি। দীর্ঘ ২৩ বছর আগে বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএস) মধ্যে দীর্ঘ দুই দশকের রক্তের হোলিখেলা শেষে ঐতিহাসিক এ চুক্তি সম্পাদিত হয়। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সরকারের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এবং পার্বত্য অধিবাসীর পক্ষ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়। যা বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসটি পালনে বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থার পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। পাহাড়ে আঞ্চলিক সংগঠনগুলো খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ছাড়াও চট্টগ্রাম এবং ঢাকায় একাধিক কর্মসূচী নিয়েছে। আর এ কারণে কোন অবস্থাতেই কোথাও যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর কোন ধরনের আঘাত না আসে এমন চিন্তা ভাবনা থেকে প্রশাসন গ্রহণ করেছে সতর্কাবস্থা। এই চুক্তি সম্পাদনের পর পাহাড়বাসীর মধ্যে প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির দুটি বিষয়ই রয়েছে। এককথায় একদিকে নানা ঝামেলা অন্যদিকে বিরুদ্ধ পক্ষের বিরোধিতার কারণে শান্তি চুক্তির এখনও পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। এরপরও বদলে গেছে পাহাড়ের চিত্র। অচিন্তনীয় উন্নয়ন হয়েছে পাহাড়ের তিন জেলায়। বিশেষ করে যোগাযোগ ব্যবস্থায় এসেছে আমূল পরিবর্তন। দেশ যেমন এগিয়ে যাচ্ছে এর সঙ্গে সমানতালে পাল্লা দিয়ে সবুজের পাহাড়ও এগিয়ে যাচ্ছে। গহীন অরণ্যেও মোবাইল যোগাযোগ নেটওয়ার্ক পাহাড়বাসীর জন্য এক অনন্য প্রাপ্তি। এ ছাড়া সরকারী বিভিন্ন খাতে যেমন অবকাঠামোগত উন্নয়ন রয়েছে তেমনি বেসরকারী পর্যায়েও থেমে নেই। এসবের মধ্যেও তিন পার্বত্য জেলায় বিভিন্ন সংগঠন ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে আজ এদিনটি পালন করবে। সবচেয়ে দুঃখজনক সত্যটি হচ্ছে পাহাড়ে পাহাড়ীদের ভ্রাতৃঘাতী সংঘর্ষের যে সূত্রপাত ঘটেছে তার অবসান হয়নি। দীর্ঘ দুই যুগের দ্বন্দ্ব-সংঘাত দাঙ্গা-হাঙ্গামা অবসান যে লক্ষ্য নিয়ে করা হয়েছিল সে ক্ষেত্রে নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে আরেক দ্বন্দ্ব-সংঘাত হাঙ্গামা ইত্যাদি। এর ওপর রয়েছে পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া চাঁদাবাজি। ফলে শান্তি চুক্তির সুফল পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের কারণে শান্তিপ্রিয় পাহাড়বাসী পরিপূর্ণভাবে ভোগ করতে পারছেন না। এদিকে সরকারের দাবি শান্তি চুক্তির অধিকাংশ শর্ত বাস্তবায়ন হয়েছে। অপরদিকে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির দাবি হচ্ছে চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের ধীরে চলো নীতি রয়েছে। আর এ কারণেই স্থায়ী শান্তি এখনও ফিরে আসেনি। উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালের এই দিনে সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ১৯৯৬ সালে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর পাহাড়ে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে দফায় দফায় সংলাপের পর এই দিনে এ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। বর্তমান সরকার বিগত ২৩ বছরে শান্তি চুক্তির ৭২ ধারার মধ্যে ৪৮টি সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন সম্পন্ন করেছে। অবশিষ্ট ১৫টি ধারা আংশিক এবং ৯টি ধারা বর্তমানে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। আবার এর মধ্যে ভূমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ অত্যন্ত জটিল অবস্থায় রয়েছে। তবে শান্তি চুক্তির আংশিক ও অবাস্তবায়িত ধারাসমূহ বাস্তবায়নে সরকার পক্ষ আন্তরিকভাবে কাজ করছে বলে দাবি করেছে। শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের যেমন অবসান ঘটেছে তেমনি এর পর থেকে এগিয়ে চলেছে অবকাঠামোগত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ। এসবের পরও শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্কের শেষ নেই। সরকার পক্ষের দাবি চুক্তির অধিকাংশ ধারাই বাস্তবায়িত হয়েছে। অবশিষ্ট ধারা বাস্তবায়িত হবে। তবে এর পাশাপাশি আধিপত্য বিস্তারের ভ্রাতৃঘাতী সংঘর্ষে পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর লড়াই চলে প্রায়শই। চুক্তির পর গত ২৩ বছরে পাহাড়ে দুই সংগঠনের চার গ্রুপের সংঘাত ও সরকারী বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে সাড়ে সাত শতাধিক প্রাণ গেছে। এসব সংঘাত ও সংঘর্ষ পাহাড়বাসীর সম্প্রীতির ওপর আঘাত হানছে। চুক্তি স্বাক্ষরের ধারাবাহিকতায় ১৯৯৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে তৎকালীন সরকার প্রধান শেখ হাসিনার হাতে শান্তি বাহিনীর নেতা সন্তু লারমার দলবল নিয়ে অস্ত্র সমর্পণের মধ্য দিয়ে জনসংহতি সমিতির সদস্যরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। তবে একটি অংশ রয়ে যায় এর বাইরে। এর নেতৃত্বে রয়েছেন সন্তু লারমার বিরোধী নেতা প্রসিত খিসা। যারা পরবর্তীতে ইউপিডিএফ নামে আঞ্চলিক সংগঠনের জন্ম দিয়েছেন। এরা মূলত শান্তি চুক্তি বিরোধী হিসেবে চিহ্নিত। এ কারণে চুক্তির পর থেকে জেএসএস ও ইউপিডিএফের সশস্ত্র ক্যাডাররা প্রায়শ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। আবার বর্তমানে এই দুই সংগঠন চার গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পাহাড়জুড়ে দেদারসে চাঁদাবাজির মাধ্যমে অবৈধ অর্থ আয়ে লিপ্ত। ফলে পাহাড়ের জীবন পরিপূর্ণভাবে শান্তিময় নয়। চুক্তির পর পর্যায়ক্রমে জেএসএস থেকে বেরিয়ে গঠন হয়েছে জেএসএস এম এন লারমা, ইউপিডিএফ প্রসিত গ্রুপ থেকে বেরিয়ে জন্ম হয়েছে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক। এসব গ্রুপের সশস্ত্র ক্যাডাররা সরকারী বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। আর নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের লড়াই তো রয়েছেই। এসব ঘটনা নিয়ে সাধারণ পাহাড়ীদের মধ্যে চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে নানা জনের নানামত রয়েছে। কারও মতে এত কিছুর পরও মানুষের শান্তির ভাগ্যে কোন পরিবর্তন ঘটেনি। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নেই। ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে অসংখ্য মানুষের প্রাণহানির ঘটনা বাড়িয়ে দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। পরস্পর বিরোধী দুই সংগঠনের চার গ্রুপের সহিংসতা পাহাড়বাসীর সম্প্রীতির ওপরও আঘাত হানছে। পার্বত্য শান্তি চুক্তি সম্পাদন আওয়ামী লীগের জন্য বড় একটি সাফল্যÑ এ বিবেচনায় তিন পার্বত্য জেলায় এ দল আয়োজন করেছে নানা কর্মসূচী। পাশাপাশি শান্তি চুক্তির অন্যতম ফসল পার্বত্য জেলা পরিষদ আনন্দ-উল্লাসে দিবসটি উদ্্যাপন করবে। যার মধ্যে রয়েছে রোড শো, সম্প্রীতির নৃত্য, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আর নিরাপত্তা বাহিনী তিন পার্বত্য জেলায় এ দিবসটিকে ঘিরে শান্তি র‌্যালি, আলোচনা সভা, চিকিৎসাসেবার কার্যক্রম, মানবিক সহায়তা, প্রীতি ভলিবল ম্যাচ এবং মেলার আয়োজন করেছে। তবে মহামারী করোনার কারণে এসব অনুষ্ঠান সামাজিক দূরত্ব মেনে সীমিত আকারে করার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শান্তি চুক্তির দুই যুগ পূর্তিতে এবারের সবচেয়ে লক্ষণীয় দিক হচ্ছে সমঅধিকার আন্দোলন নামে বাঙালী সংগঠনটির এখন তেমন আর অস্তিত্ব নেই। যারা একসময় এ দিনটিকে কালো দিবস আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের জন্য আন্দোলন করত। সমঅধিকার আন্দোলনের পক্ষ থেকে এখন চুক্তি বাতিলের পরিবর্তে চুক্তির কিছু ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক দাবি করে এসবের সংশোধন দাবি করা হচ্ছে। অপরদিকে জেএসএসবিরোধী ইউপিডিএফ দিনটিকে গণগ্লানি দিবস হিসেবে পালন করে আসলেও এই পর্যন্ত এ বিষয়ে তাদের করণীয় কিছুই নির্ধারণ করতে পারেনি। গত কয়েক বছর ধরে ইউপিডিএফ থেকে বেরিয়ে এসে গঠিত ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক দলটি শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে রয়েছে। এদিকে সন্তু লারমা সমর্থিত জেএসএসের উদ্যোগে দিবসটি পালনে কর্মসূচীর সেøাগান হয়েছে ‘প্রতিশ্রুতি নয়, চুক্তির প্রকৃত বাস্তবায়ন চাই’। সংগঠনটি আলোচনা সভা ও সমাবেশের আয়োজন করেছে। তাদের মতে, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ এবং সঠিক উন্নয়ন অর্জনের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করা হলেও মৌলিক কোন উন্নতি সাধিত হয়নি। বরঞ্চ পাহাড়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বসতিস্থাপন, গুচ্ছ গ্রাম সম্প্রসারণ, বসতি স্থাপনকারীদের পার্বত্য চট্টগ্রামের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তকরণ, জেলা প্রশাসক কর্তৃক স্থায়ী বাসিন্দা সনদপত্র প্রদান, চাকরি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান, ভূমি দখল, বন্দোবস্ত-ইজারা প্রদান ইত্যাদি কাজ জোরদার হয়েছে। ফলে জুম্ম জনগণের জাতীয় ও আবাসভূমির অস্তিত্ব চরম হুমকির মুখোমুখি হয়েছে। অপরদিকে পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চুক্তির অধিকাংশ ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় এবং আঞ্চলিক পরিষদ গঠন, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং এর নিয়ন্ত্রণাধীন ৩৩টি দফতর-সংস্থার মধ্যে রাঙ্গামাটিতে ৩০, খাগড়াছড়িতে ৩০ এবং বান্দরবানে ২৮টি স্থানান্তর করা হয়েছে, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করতে ভূমি কমিশন গঠন করা হয়েছে, প্রত্যাগত ১২ হাজারেরও বেশি উপজাতি শরণার্থী পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে, শান্তিবাহিনীর সদস্যদের সাধারণ ক্ষমা, ৭২৫ জনকে পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী ২৫২৪ জনের বিরুদ্ধে ৯৯৯টি মামলার মধ্যে ৮৪৪টি যাচাই-বাছাই এবং এর মধ্যে ৭২টি প্রত্যাহার করা হয়েছে, একটি পদাতিক ব্রিগেডসহ ২৩৮টি নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে। সংসদ উপনেতার নেতৃত্বে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন মনিটরিং কমিটি করা হয়েছে। পার্বত্য বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়েছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান বিল-২০১০ জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়েছে। তিন পার্বত্য জেলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিভিন্ন দফতরে চাকরির ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যদের নির্ধারিত কোটা অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চরম প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যদের কোটা সংরক্ষণ করা হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, জেলা পরিষদ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের শীর্ষস্থানীয় পদে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্য থেকে প্রতিনিধি নিয়োগ হয়ে আসছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে একজন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সম্প্রদায়ের সংসদ সদস্যকে মন্ত্রীর সমমর্যাদায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ১৯৯৮ সালে পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হয়েছে। ১৯৭৬ সালে জারিকৃত পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড অধ্যাদেশ বাতিল করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আইন-২০১৪ জাতীয় সংসদে পাস করা হয়েছে। এদিকে ঐতিহাসিক এ দিবস উপলক্ষে পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর বলেন, এই সরকার চুক্তি করেছে বলেই পাহাড়ে এখন শান্তি বিরাজ করছে। ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে আরও হচ্ছে। পার্বত্যবাসীর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এসেছে। ভূমি সমস্যার কাজও প্রাথমিকভাবে শুরু হয়েছে। আগে ভূমি বিষয়ক আইন ও বিধিমালা ছিল না, এখন ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি আইন ২০০১ এবং ২০১৬ সালে আইনটির সংশোধন করা হয়েছে, যা চলমান রয়েছে। শান্তি চুক্তির পূর্বে যেখানে এডিপিভুক্ত প্রকল্প ছিল ১টি সেখানে এখন ১৭টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। ঢাকার বেইলি রোডে প্রায় ২ একর জমির ওপর ১২০ কোটি ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স। শান্তি চুক্তির পর ১৭৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ হয়েছে। প্রায় ৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিদ্যুত বিতরণ উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া হয়েছে। শান্তি চুক্তির পর পাহাড়ের তিন জেলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার কিমি বিদ্যুত লাইন নির্মিত হয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুত সরবরাহ সম্ভব নয় বিধায় সেখানে সাড়ে পাঁচ হাজার পরিবারকে সৌরবিদ্যুত সুবিধা প্রদানের একটি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। শান্তি চুক্তির পর ১৫৩২ কিমি পাকা রাস্তা ও অসংখ্য সেতু নির্মিত হয়েছে। সড়ক নির্মাণ কাজ হয়েছে ১০৫ কিলোমিটার। টেলি যোগাযোগ মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কের আওতা বৃদ্ধি এবং ইন্টারনেট ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হয়েছে। শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় পাহাড়জুড়ে বেশকিছু এলাকা পর্যটন উপযোগ করা হয়েছে, যা দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণে স্থলে পরিণত হয়েছে। রাঙ্গামাটিতে নানা কর্মসূচী ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা রাঙ্গামাটি থেকে জানান, বৃহস্পতিবার শান্তি চুক্তির ২৪ বছরপূর্তি উপলক্ষে রাঙ্গামাটিতে নানা কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়েছে। এতে রয়েছে রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ উদ্যোগে রাঙ্গামাটি ক্ষুদ্র নৃঃগোষ্ঠী মাঠে আলোচনা সভা, সেনা রিজিয়নের উদ্যোগে কাপ্তাই লেকে নৌকাবাইচ, আওয়ামী লীগ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির পক্ষ থেকে পৃথক পৃথকভাবে রাঙ্গামাটি ও ঢাকাতে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। জেএসএস ওইদিন রাঙ্গামাটি জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আলোচনা সভা করবে এদের মূল আলোচনা সভা হবে ঢাকার আগারগাঁও মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘর হলরুমে। সেখানে সন্তু লারমা থাকবেন বলে জানা গেছে। এছাড়া জেএসএস জেলার বিভিন্ন উপজেলায়ও অনুষ্ঠান করবে বলে জেএসএস সূত্রে জানা গেছে। বরিশালে বর্ণাঢ্য র‌্যালির আয়োজন ॥ স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল থেকে জানান, অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে শান্তির সুবাতাস ছড়ানোর ২৪তম বর্ষ পালন উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার নগরীতে বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তির প্রণেতা তৎকালীন চীফ হুইপ এবং বর্তমান মন্ত্রী পদমর্যাদায় থাকা পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক এবং বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি জানান, শান্তি চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ইতোমধ্যে ৪৮টি ধারা সম্পূর্ণ ও ১৫টি ধারা আংশিক বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বাকি নয়টি ধারা বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। যা সরকারের এ মেয়াদেই বাস্তবায়িত হবে। তিনি আরও বলেন, পার্বত্য জেলাসমূহের উন্নয়ন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে দলমত নির্বিশেষে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের আর্থসামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সুখী-সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ সোনার বাংলাদেশ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হবো। আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপের কারণে আজ পার্বত্য জেলাসমূহ কোন পিছিয়েপড়া জনপদ নয়। দেশের সার্বিক উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় এ অঞ্চলের জনগণ সমান অংশীদার।
×