ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

শতবর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকবে

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ২ ডিসেম্বর ২০২১

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকবে

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারের চাহিদা ও যোগ্যতা বিবেচনা করে শিক্ষার মান ও শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ যাত্রাপথে নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তিসহ জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখায় বিশ্বব্যাপী সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যেতে শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলতে হবে। বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি এবং মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আবদুল হামিদ এ মন্তব্য করেন। বঙ্গভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি অনুষ্ঠানে অংশ নেন। ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ, ঢাকা ইউনিভার্সিটি এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে আজাদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) এএসএম মাকসুদ কামাল ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। ভিডিও বার্তায় শুভেচ্ছা পাঠান ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং। রাষ্ট্রপতি এ অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষে একটি ওয়েবসাইটের উদ্বোধন এবং ছয়টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। উদ্বোধনী পর্বে গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, অবকাঠামো, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ডিপার্টমেন্ট ও ইনস্টিটিউটের সম্প্রসারণ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে, কিন্তু এক্ষেত্রে শিক্ষা ও গবেষণার মানই মূল সূচক। পুঁজি ও শ্রমনির্ভর অর্থনীতি থেকে জ্ঞান নির্ভর-অর্থনীতিতে উত্তরণের ওপর তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বায়ন ও তথ্যপ্রযুক্তির অভাবনীয় বিস্ফোরণে ডিজিটাল বিভক্তি এবং উন্নত বিশ্বের সঙ্গে উন্নয়নশীল বিশ্বের ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বজ্ঞানের সঙ্গে ব্যক্তিক ও সামষ্টিক চেতনার সমন্বয় ঘটানোই বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য হওয়া উচিত। তিনি বলেন, কালের পরিক্রমায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে এর অবকাঠামো ও শিক্ষা কার্যক্রমের পরিধি। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে প্রতিযোগিতারও আন্তর্জাতিকীকরণ হয়েছে। তাই একজন শিক্ষার্থীকে ডিগ্রী অর্জনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিকমান অর্জন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও কারিক্যুলাম নির্ধারণ ও পাঠদানের ক্ষেত্রে বিশ্বমানের কথা বিবেচনায় রাখতে হবে। ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার স্মৃতিচারণ করে বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সংঘটিত ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যার অন্যতম লক্ষ্যবস্তু ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক মেধাবী শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী শহীদ হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, কর্মকর্তা-কর্মচারী মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাঙালী জাতির শিক্ষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য, গবেষণা-উদ্ভাবন, মুক্তবুদ্ধি চর্চা, প্রগতিশীল ভাবনা, জাতি-গঠন ও দেশাত্মবোধের চেতনার এক তেজোদীপ্ত আলোকবর্তিকা, বাঙালীর আশা-আকাক্সক্ষার এক অনন্য বাতিঘর। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শ’ বছরের গৌরবময় ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায়, মুসলিম অধ্যুষিত পূর্ব-বাংলায় মুসলিম নেতৃবৃন্দের ক্ষোভ প্রশমনের উদ্দেশে প্রতিষ্ঠিত হলেও জন্মলগ্ন থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল অসাম্প্রদায়িক ও অনন্য বৈশিষ্ট্যের এক গৌরবময় বিদ্যাপীঠ। সূচনালগ্ন থেকেই এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে মুক্ত বুদ্ধিচর্চা শুরু হয়। তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় শিক্ষা ও জ্ঞানানুশীলনের পটভূমিতে ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। বিশ্বজ্ঞানের সঙ্গে ব্যক্তিমনের সমন্বয় ঘটানোই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুরু থেকেই এ বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর হতে উপমহাদেশে স্বাধীনতাকামী মানুষের উদারনৈতিক মুক্ত চেতনানির্ভর ও সামষ্টিক জ্ঞানানুশীলনের কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে ঔপনিবেশিক মানসিকতা মুক্ত নতুন শ্রেণী সৃষ্টির পথও প্রশস্ত হয়। আর সেই পথ ধরেই এই বিশ্ববিদ্যালয় শেষ পর্যন্ত বাঙালীর স্বাধীনতা সংগ্রামেরও সূতিকাগার হয়ে উঠেছিল। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী বলেন, ভাষা আন্দোলন থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রাম পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজের প্রতিবাদী স্ফূরণ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের অন্যতম অর্জন। আমি গর্বিত, আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় অনন্তকাল ধরে ছাত্র রাজনীতির গৌরব ও ঐতিহ্যকে অনন্য মাইলফলকরূপে ধারণ করে এগিয়ে যাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আশাবাদ ব্যক্ত করে শিরীন শারমীন চৌধুরী বলেন, বিশ্বায়নের যুগে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক জ্ঞান-তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর বিশেষায়িত জ্ঞানের অগ্রদূতরূপে মানসম্মত, যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা সুসংহত করার অবদান রেখে যাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের কারিগর এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই তৈরি হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেছেন, ১৯২১ সালে যখন এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় তখন এ অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল। তাই প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ে তোলা হয়েছে একটি গবেষণামুখী শিক্ষাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে। অথচ আজ শতবর্ষের ক্ষণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ভাবতে হচ্ছে, নতুন করে জোর দিতে হচ্ছে শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়নের দিকে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেন, আমরা খুব ভাগ্যবান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, মুজিববর্ষ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ একইসঙ্গে পালন করছি। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা সময় নষ্ট করবেন না। সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঠিকমতো সময়ের ব্যবহার করবেন। আপনারা আমাদের ভবিষ্যত। আপনাদের হাতে নির্ভর করছে আমাদের সোনার বাংলাদেশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, আজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ঐতিহ্য, তার পেছনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যালামনাইদের অবদান রয়েছে। রক্ত-শ্রম-মেধা বুদ্ধি দিয়ে তারা অবদান রেখেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই দেশের নি¤œœ আয়ের পরিবারের সন্তানদের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করেছে। শিক্ষা বৈষম্য কমিয়ে আনতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সারাবিশ্বে পথিকৃৎ। সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জন ও প্রত্যাশা এবং আন্তর্জাতিক র‌্যাঙ্কিং নিয়ে বিতর্কের কোন শেষ নেই। পূর্ব বাংলার অবহেলিত জনপদে একটি শিক্ষিত-বুদ্ধিদীপ্ত জনগোষ্ঠীর বিকাশ ঘটিয়ে একটি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং সেই রাষ্ট্রের সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির বিবর্তন ও উন্নয়নে অব্যাহতভাবে যদি কোন একক প্রতিষ্ঠান অনন্যসাধারণ অবদান রেখে থাকে, সেটি একমাত্র আমাদের প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বে এর তুলনা বিরল। আন্তর্জাতিক জ্ঞানরাজ্যেও এর অবদান অনস্বীকার্য।
×