ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

৬ কিলার শনাক্ত, গ্রেফতার আরও ২

অন্তুর বাসায় মাংস রেঁধে খেয়ে কিলিং মিশনে অংশ নেয় ৭ জন

প্রকাশিত: ২২:২০, ৩০ নভেম্বর ২০২১

অন্তুর বাসায় মাংস রেঁধে খেয়ে কিলিং মিশনে অংশ নেয় ৭ জন

মীর শাহ আলম, কুমিল্লা ॥ কুমিল্লায় কাউন্সিলর সৈয়দ মোঃ সোহেলসহ জোড়া খুনের মামলায় জিসান মিয়া ও অন্তু নামে আরও দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রবিবার রাতভর অভিযান চালিয়ে পুলিশ জিসানকে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। জিসান নগরীর সুজানগর এলাকার নূর আলীর ছেলে। জিসানের দেয়া তথ্যমতে পুলিশ মোঃ রাব্বী ইসলাম প্রকাশ অন্তুকে দেবিদ্বার উপজেলা সদর এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে জিসান এ মামলার এজাহারনামীয় ৮নং ও অন্তু সন্ধিগ্ধ আসামি। ধৃত অন্তু নগরীর সংরাইশ এলাকার বাদল মিয়ার ছেলে। জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার আগের রাতে আসামিরা বৈঠক করে কিলার সাজেনের বাসায় এবং ঘটনার দিন দুপুরে অন্তুদের বাসায় গরুর মাংসসহ রান্না করা খাবার খেয়ে ৭ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী সিটি কাউন্সিলর সোহেলসহ ২ জনের কিলিং মিশনে অংশ নেয়। এরই মধ্যে পুলিশ কিলিং মিশনে অংশগ্রহণকারী স্কোয়াডের সম্ভাব্য ৬ জন চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে। সোমবার বিকেলে সাংবাদিকদের এ সব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ সোহান সরকার ও এলআইসি টিমের এসআই পরিমল চন্দ্র দাস। পুলিশ জানায়, জোড়া খুনের মামলার আসামি নগরীর সুজানগর এলাকার জিসানকে (২৮) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রবিবার গভীর রাতে পুলিশ কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। তার দেয়া তথ্যমতে তার নিকটাত্মীয় সন্ধিগ্ধ আসামি অন্তুকে (১৯) একই রাতে দেবিদ্বার উপজেলা সদর থেকে আটক করা হয়। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, ঘটনার দিন অন্তুর মায়ের রান্না করা মাংস দিয়ে খাবার খেয়ে ৭ জন কাউন্সিলর সোহেল কিলিং মিশনে অংশ নেয়। এ কিলিং মিশনে মামলার প্রধান আসামি শাহ আলম ও ২নং আসামি সোহেল, ৩নং আসামি সাব্বির হোসেন, ৫নং আসামি সাজন, ১০নং আসামি সায়মনসহ আরও ২ জন ছিল। অন্তু পুলিশকে জানায়, তারা পরের দিন কক্সবাজার যাওয়ার কথা বলে তাদের ঘরে এ খাওয়ার আয়োজন করে। হত্যাকা-ের পরিকল্পনা সম্পর্কে তাদেরকে কিছুই জানানো হয়নি। তবে পুলিশ জানায়, এজাহার বহির্ভূত গ্রেফতারকৃত অন্তু এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কি না- তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে। তাকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। সোমবার বিকেলে জিসান ও অন্তুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে প্রেরণ করার পর অন্তু আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। চাঞ্চল্যকর এ মামলার ১১ জন এজাহারনামীয় আসামির মধ্যে ৫ জনকে ও অজ্ঞাতনামা থেকে ১ জনকেসহ মোট ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ সোহান সরকার সাংবাদিকদের বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা এবং প্রযুক্তির সহায়তায় হিট স্কোয়াডের ৬ জনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। কিলিং মিশনে অংশগ্রহণকারী সদস্যরা হচ্ছে- এজাহারনামীয় আসামি শাহ আলম, সাজেন, সাব্বির, জেল সোহেল, নাজিম এবং ফেনী থেকে আগত একজন অজ্ঞাত আসামি। প্রাথমিকভাবে জানা যায় যে, আসামিরা ঘটনার আগের রাত্রে এজাহারনামীয় আসামি সাজেনের বাসায় বৈঠক করে এবং ঘটনার দিন দুপুরে অন্তুর বাসায় গরুর মাংস দিয়ে খাবার খেয়ে বিকেলের দিকে একটি অটো ভাড়া করে কাউন্সিলরের অফিসের দিকে রওনা দেয়। গ্রেফতারকৃত আসামি রাব্বি ইসলাম অন্তু প্রকাশ অন্ত আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেয়। এতে সে জানায়, সে কিলিং মিশনের স্কোয়াডের সদস্যদের অটো ভাড়া করে দিয়েছিল। হিট স্কোয়াডের শনাক্তকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করতে পুলিশের একাধিক টিমের সাঁড়াশি অভিযান চলমান রয়েছে বলেও তিনি জানান। উল্লেখ্য, গত ২২ নবেম্বর বিকেলে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা কাউন্সিলর সৈয়দ মোঃ সোহেলের পাথুরিয়াপাড়া থ্রি-স্টার এন্টারপ্রাইজের কার্যালয়ে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি করে। এ ঘটনায় কাউন্সিলর সোহেল ও তার সহযোগী হরিপদ সাহা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন পাঁচজন। এ ঘটনায় কুমিল্লাসহ দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
×