ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সাগরিকায় বাংলাদেশী বোলারদের অগ্নিপরীক্ষা

দ্বিতীয় দিনে ব্যাটে-বলে ব্যর্থ বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২৩:৪৩, ২৮ নভেম্বর ২০২১

দ্বিতীয় দিনে ব্যাটে-বলে ব্যর্থ বাংলাদেশ

মোঃ মামুন রশীদ, চট্টগ্রাম থেকে ॥ দুদিন প্রথম সেশনের অবস্থা প্রায় একই রকমের। প্রথম দিনের চেয়ে দ্বিতীয় দিন পরিস্থিতি হল আরও খারাপ। তাই শেষ পর্যন্ত খুব বড় হয়নি বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। ৩৩০ রানেই থামে স্বাগতিকরা। প্রথম দিন প্রথম সেশনে ৪ উইকেটে ৬৯ আর দ্বিতীয় দিন প্রথম সেশনে ৬ উইকেটে ৭৭! মাঝে ছিল মুশফিকুর রহিম ও লিটন কুমার দাসের অবিস্মরণীয় ব্যাটিং প্রদর্শনী। পাকিস্তানী ফিল্ডারদের ঘাম ঝরানো শ্রমের শোধ তুলেছেন দুই পাক ওপেনার। তারা অবিচ্ছিন্ন থেকে দিনশেষ করে মাঠ ছেড়েছেন। সিরিজের প্রথম টেস্টে আলোর স্বল্পতায় ভুগছে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। তাই প্রথম দিন ৫ ওভার আগে খেলা শেষ হয়েছে, এদিন হয়েছে ৬ ওভার আগে। দুদিনই ফ্লাড লাইট জ¦ালিয়ে আধা ঘণ্টারও বেশি সময় খেলা চালাতে হয়েছে। এতকিছুকে ছাপিয়ে বাংলাদেশ দলের তাঁবুতে হতাশার আঁধার ঘনীভূত করেছেন আবিদ আলী ও অভিষিক্ত আব্দুল্লাহ শফিক। দুজনের জোড়া অর্ধশতকে বিনা উইকেটে ১৪৫ রান তুলেছে পাকরা। এখনও অবশ্য ১৮৫ রানে এগিয়ে বাংলাদেশ। তবে এই ম্যাচে নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে বাংলাদেশী বোলারদের দুর্দান্ত কিছু করতে হবে পাকদের মতোই প্রথম সেশনে। মুশফিক-লিটন জুটি আড়াই সেশন উইকেটে থেকে প্রথম দিন শেষ করেন। ৪ উইকেটে ৪৯ রান থেকে ২০৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দিনশেষ ২৫৩ রানে। ১১৩ রানে অপরাজিত লিটন ও ৮২ রানে অপরাজিত মুশফিক উইকেটে থাকায় আজ বড় একটি সংগ্রহের আশা নিয়ে নামে বাংলাদেশ। কিন্তু শুরুটাই হয়েছে লিটনের দুর্ভাগ্যজনক এলবিডব্লিউয়ে। আগের দিন ৫ ওভার কম হওয়াতে এদিন ১০ মিনিট আগেই খেলা গড়িয়েছে। তাই সকালের আর্দ্র উইকেটের সুবিধাটা ভালভাবেই নিয়েছেন পেসার হাসান আলী। সুইং আর পেসে নাজেহাল করেন লিটনকে, সুফল পান দিনের ১২তম বলেই। আর ৮ বল খেলে ১ রান যোগ করতেই লিটন এলবিডব্লিউ হয়ে যান ১১৪ রানে। রাইজিং ডেলিভারি হওয়াতে আম্পায়ার আউট দেননি, কিন্তু রিভিউয়ে সফল হয় পাকরা। পুরো একটা দিন অপেক্ষায় থাকা অভিষিক্ত ইয়াসির আলী রাব্বির সুযোগ হয় ব্যাট হাতে নামার। কিন্তু চট্টগ্রামের এ লোকাল বয় শাহীন শাহ আফ্রিদিকে দুর্দান্ত একটি চারও হাঁকান। কিন্তু হাসানের মিডল স্টাম্পে থাকা বলের লেট সুইং মিস করলে উপড়ে যায় লেগ স্টাম্প। হুট করেই তাই বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। সেই বিপদ আরও বেড়ে যায় মুশফিকও সতর্ক হয়ে খেলার পরেও ৩৫ বল মোকাবেলার পর সাজঘরে ফিরলে। ফাহিম আশরাফের বলে মুশফিক কট বিহাইন্ড হন ২২৫ বলে ১১ চারে ৯১ রানে। সাগরিকায় টেস্ট ক্যারিয়ারে তৃতীয়বার নব্বইয়ের ঘরে আউট হয়ে সেঞ্চুরি বঞ্চিত হন মুশফিক। যদিও তিনি রিভিউ নিয়েছেন, কিন্তু আল্ট্রা এজ প্রযুক্তিতে দেখা গেছে ব্যাটে হালকা চুমু খেয়ে গেছে বলটি। দিনের ১৪তম ওভারেই বাংলাদেশ ৩ উইকেট হারিয়ে দ্রুতই গুটিয়ে যাওয়াটা ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। সেখান থেকে বাংলাদেশকে সোয়া তিনশ’ পেরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পেছনে মেহেদি হাসান মিরাজের ৬৮ বলে ৬ চারে করা ৩৮ রানের অপরাজিত ইনিংসটি বড় ভূমিকা রেখেছে। ৩৩০ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। ২৯.৪ ওভারে ৭৭ রান যোগ করতে ৬ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। নিজের ১৬তম টেস্টে নামা হাসান ক্যারিয়ারে ষষ্ঠবারের মতো নেন ৫ উইকেট। ২টি করে দখলে নিয়েছেন শাহীন ও ফাহিম। অর্থাৎ ৩ পেসারের কাছেই ৯ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশের বোলিং বিভাগে মাত্র ২ পেসার- সেই আবু জায়েদ রাহী ও এবাদত হোসেন চৌধুরীকে পরোয়াই করেননি দুই পাক ওপেনার আবিদ-শফিক। বাংলাদেশ ইনিংস শেষেই লাঞ্চ বিরতি দিয়েছেন আম্পায়াররা। তারপর ফুরফুরে মেজাজে বেশ দেখেশুনেই খেলেছেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার। বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের বলে এলবিডব্লিউর সুযোগ আসে ৯ রানে থাকা আবিদের বিপক্ষে। কিন্তু দোটানায় ভুগে রিভিউ না নেয়ার কারণে তা কাজে লাগেনি। অথচ রিপ্লেতে দেখা যায় আউট ছিলেন আবিদ। সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ৮৪ বলে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি হাঁকান তিনি। চা বিরতি পর্যন্ত বিনা উইকেটে ৭৯ রান তোলে তারা। দ্বিতীয় সেশনে আরও সতর্ক হয়ে ৬৬ রান যোগ করেন দুজন। গত ৪ ইনিংসে ব্যর্থ আবিদ এখন আরেকটি শতকের অপেক্ষায়। তিনি ১৮০ বলে ৯ চার, ২ ছক্কায় ৯৩ রানে অপরাজিত। ২২ বছর বয়সী শফিকও অর্ধশতক হাঁকিয়ে ১৬২ বলে ২ চার, ২ ছক্কায় ব্যাট করছেন ৫২ রানে। বিনা উইকেটে ১৪৫ রান পাকদের। ১৮৫ রানে এগিয়ে থেকেও দ্বিতীয় দিন ব্যাটে-বলে ব্যর্থ বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। আজ তাই স্বাগতিক বোলারদের ঘুরে দাঁড়াতে হলে অগ্নিপরীক্ষায় সফল হতে হবে বোলারদের।
×