ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জাল রুপী তৈরি হয় পাকিস্তানে, পাচার হয় ভারতে

প্রকাশিত: ২৩:১০, ২৮ নভেম্বর ২০২১

জাল রুপী তৈরি হয় পাকিস্তানে, পাচার হয় ভারতে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাল রুপী তৈরি হয় পাকিস্তানে। আর পাচার হতো ভারতে। দীর্ঘদিন ধরে একটি সংঘবদ্ধ চক্র বাংলাদেশকে নিরাপদ পাচার রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। শুক্রবার গভীর রাতে রাজধানীর খিলক্ষেত ও ডেমরা এলাকা থেকে এ রকমই আন্তর্জাতিক সংঘবদ্ধ ভারতীয় জাল মুদ্রা পাচারকারী চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, ফাতেমা আক্তার অপি ও শেখ মোঃ আবু তালেব। এ সময় তার কাছ থেকে ৭ কোটি ৩৫ লাখ ভারতীয় জাল রুপী উদ্ধার করা হয়। শনিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান এসব তথ্য জানান। ডিসি আসাদুজ্জামান জানান, পাকিস্তান থেকে মার্বেল পাথরের কন্টেনারে করে চট্টগ্রামে আসে জাল রুপী। এরপর ঢাকায় এনে মজুদ করা হয়। তারপর সুবিধামতো সময়ে সীমান্ত এলাকা দিয়ে পাচার করা হতো ভারতে। তিনি জানান, গ্রেফতারকৃত ফাতেমা আক্তার অপি আন্তর্জাতিক সংঘবদ্ধ ভারতীয় জাল মুদ্রা পাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। তিনি দীর্ঘদিন যাবত পাকিস্তান থেকে আন্তর্জাতিক চক্রের মাধ্যমে ভারতীয় জাল মুদ্রা কৌশলে সংগ্রহ করে দেশীয় চক্রের মাধ্যমে বিপণনসহ ভারতে পাচার করতেন। গত ২৩ নবেম্বর গ্রেফতারকৃত আবু তালেব উদ্ধারকৃত ভারতীয় জাল মুদ্রা ফাতেমা আক্তার অপির কাছে হস্তান্তর করেন। আবু তালেব পাকিস্তানী নাগরিক সুলতান ও শফির মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে আমদানিকৃত মার্বেল পাথরের ৫০০টি বস্তার মধ্যে গোলাপি সুতায় চিহ্নিত ৯৫টি বস্তার মধ্যে সুকৌশলে ভারতীয় জাল মুদ্রা শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে চক্রটি এই কারবারের সঙ্গে জড়িত উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান জানান, ফাতেমা পাকিস্তানী নাগরিক সুলতান ও শফির কাছ থেকে এসব জাল মুদ্রা সংগ্রহ করতেন। ফাতেমা ও তালেব এসব জাল রুপী ঢাকার বাসার পানির ট্যাঙ্কির নিচে বিশেষ কৌশলে লুকিয়ে রাখতেন। পরে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে সুযোগ-সুবিধামতো ভারতে পাচার করে দিতেন। ডিবির ডিসি জানান, ফাতেমা আক্তার অপির স্বামী দানেশ পাকিস্তানী নাগরিক। অসুস্থ হয়ে তিনি এখন বাসায় থাকেন। তাকে কয়েক বছর আগে ডিবি মতিঝিল বিভাগ গ্রেফতার করেছিল। তার নামে দুটি মামলাও আছে। এছাড়া গ্রেফতারকৃত আবু তালেবের পাকিস্তানে যাতায়াত ছিল। স্বামী পাকিস্তানী হওয়াতে ফাতেমাও অনেকবার পাকিস্তানে গেছেন। এ সূত্রেই জাল রুপী চক্রের হোতা সুলতান ও শফির সঙ্গে তাদের পরিচয়। পরে তারাও এ চক্রে জড়িয়ে পড়েন। গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, শুক্রবার রাতে গোপন সংবাদ পান খিলক্ষেতের বনরূপা আবাসিক এলাকার মেইন গেটের সামনে একজন নারী ভারতীয় জাল রুপীসহ অবস্থান করছেন, এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ফাতেমা আক্তার অপিকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ৫০ হাজার ভারতীয় জাল রুপী উদ্ধার করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে দক্ষিণখান থানার পণ্ডিতপাড়ায় তার নিজ বাসা থেকে আরও ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার ভারতীয় জাল রুপী উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে ডেমরার সারুলিয়া এলাকা থেকে জালিয়াত চক্রের অপর সদস্য শেখ মোঃ আবু তালেব গ্রেফতার করা হয়। তিনি জানান, ফাতেমা আক্তার অপির বিরুদ্ধে জাল টাকা সংক্রান্তে মতিঝিল থানায় মামলা রয়েছে। এছাড়া গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে খিলক্ষেত থানায় নিয়মিত মামলা হয়েছে। রিমান্ড আবেদনসহ তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
×