ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

হাফ ভাড়া সংক্রান্ত বৈঠক সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ

প্রকাশিত: ২৩:০১, ২৮ নভেম্বর ২০২১

হাফ ভাড়া সংক্রান্ত বৈঠক সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যত সব অপ্রাসঙ্গিক আলোচনায় কোন প্রকার সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে বাসে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া সংক্রান্ত বৈঠক। হাফ ভাড়ার দাবি না মেনে বরং মালিক পক্ষ উল্টো তাদের ভর্তুকির জন্য টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। এদিকে বাসে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়ার দাবি নিয়ে পরিবহন মালিকদের সঙ্গে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের দ্বিতীয় দিনের বৈঠকেও কোন সমাধান না আসার খবরে আরও ক্ষুব্ধ হয়েছে শিক্ষার্থীরা। শনিবার রাজধানীর বনানীতে বিআরটিএ কার্যালয়ে দুই ঘণ্টার এ বৈঠকটি এভাবে নিষ্ফল হয়েছে। মূলত পরিবহন মালিকদের চাপে বিআরটিএ নতজানু মনোভাব নীতি গ্রহণ করে। বৈঠক শেষে মালিক সমিতি ও সরকার পক্ষ উভয়েই এক সুরে জানিয়েছে- এত ধরনের এত কঠিন সিদ্ধান্ত এক দুটো বৈঠকেই নেয়া যায়না। আারও ব্যাপক ও গভীর আলোচনার দরকার। শনিবার বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়ে এ বৈঠক শুরু হয়ে চলে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত। বৈঠকে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল বাতেন বাবু, আলহাজ সাদিকুর রহমান হিরু, আবুল কালাম আজাদ, ওসমান আলী ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার মোঃ আশফাকসহ বিআরটিএর উর্ধতন কর্মকর্তা এবং বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। জানা গেছে, দেড় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা বৈঠকে পরিবহন নেতাদের পক্ষ থেকে বিআরটিএকে টাস্কফোর্স গঠনসহ বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে বৈঠকে জানানো হয়। এ সময় বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার এনায়েত উল্যাহ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য ভাড়া কমানোর বিষয়ে বিআরটিএ অত্যন্ত আন্তরিক। বৈঠকে বেশ কিছু বিষয় উঠে এসেছে। পরিবহন নেতাদের পক্ষ থেকে টাস্কফোর্স গঠনসহ বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, হাফ ভাড়া বাস্তবায়নে পরিবহন নেতারা আন্তরিক। কিন্তু তাদের যে ক্ষতি হবে তা কীভাবে পূরণ করা হবে। তাদের ক্ষতির জন্য কত ভর্তুকি দেয়া হবে এসব সিদ্ধান্তের জন্য সরকার ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব এসেছে। এ বিষয়ে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আবার বৈঠক হবে। আমরা আবারও বৈঠক করব। যত দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া যায় তার জন্য চেষ্টা করা হবে। বৈঠকে ঢাকায় কত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কতজন ছাত্র, এদের মধ্যে কতজন বাসে উঠে এসব বিষয়ে তালিকা চেয়েছেন পরিবহন নেতারা। আমরা এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করব, তারাও তথ্য দেবেন। এসব বিষয়ে ফয়সালা করতে সময় লাগবে জানিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার থাকতে আহ্বান জানিয়েছে বিআরটিএ। এদিকে বৈঠকে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ঢাকার শতকরা ৮০ শতাংশের মতো বাস মালিক গরিব। তারা যদি হাফ ভাড়া নেয় সরকার কীভাবে তাদের এ ক্ষতি পোষাবে আগে সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিতে চাই। এ বিষয়ে আমরা অত্যন্ত আন্তরিকও। কিন্তু আগে অনেকগুলো বিষয়ে সমাধান করতে হবে। আমাদের পক্ষ থেকে কিছু প্রস্তাব দেয়া হয়েছে সেগুলোর সমাধানের মাধ্যমে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। নতুন যে যেসব প্রস্তাব এসেছে এগুলো নিয়ে টাস্কফোর্স গঠনের বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কারা শিক্ষার্থী আর কারা শিক্ষার্থী নয় এ বিষয়েও জটিলতা রয়েছে জানিয়ে এনায়েত বলেন, বাসে উঠে সবাই বলবে আমরা ছাত্র। অনেকে এ সুবিধা নেয়ার জন্য নতুন করে আইডি কার্ড বানিয়ে নেবে। সরকার এটার সমাধান কীভাবে করবে সেটাও দেখতে হবে। সবগুলো বিষয় বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ সময় মহাসচিব প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে শ্রেণীকক্ষে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে তিনি পরিবহন ভাংচুর, শ্রমিকদের মারধরসহ বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কর্মকা- থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান। বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন- বাসভাড়া বাড়ানোর আগে নগর পরিবহনের বাসগুলো ছাত্রদের কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া এমনিতেই নিত, এখন কেন তা নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। জবাবে এনায়েত বলেন, হাফ ভাড়া নেয়ার বিষয়ে কখনই সরকারী সিদ্ধান্ত ছিল না। পরিবহন শ্রমিকরা কখনও নিত, আবার কখনও এটা নিয়ে ঝগড়া হতো। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আলোচনার সময় পরিবহন মালিক শ্রমিকদের চড়া বক্তব্যের মুখে সরকার পক্ষের প্রতিনিধিরা ছিলেন বেশ অসহায়। তারা পরিবহন মালিকদের দুর্বল যুুক্তিও খ-ন করতে পারেনি। যেমন পরিবহন ও মালিক সমিতির নেতা মোঃ সাদিকুর রহমান হিরু তার বক্তব্যে বলেছেন, শিক্ষার্থীরা কিছু হলেই শ্রমিকদের ওপর চড়াও হয়, গাড়ি নিয়ে আটকে রাখে। তদুপরি মালিক সমিতির সঙ্গে আলোচনায় একটা স্থায়ী ফয়সালা করার দায়িত্ব সবারই। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে সরকার বিআরটিসি বাস বাড়াতে পারে। সব দায় কেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হবে। তাই সকলে মিলে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জানতে চাইলে সাদিকুর রহমান হিরু বলেন, যখন সরকারীভাবে ছাত্রদের জন্য হাফ ভাড়া ঘোষণা করা হবে, তখন অনেকগুলো বিষয় সামনে আসবে। যে দেশে জাতীয় পরিচয়পত্র নকল হয়, ফেইক ড্রাইভিং লাইসেন্স হয়, সেই দেশে ছাত্রদের জন্য হাফ ভাড়ার ঘোষণা এলে দেখা যাবে যারা ছাত্র নন, তারাও হাফ ভাড়ার জন্য কার্ড বানিয়ে বসেছেন। এখানে অনেকগুলো বিষয় দেখার রয়েছে। জানা গেছে, বেসরকারী স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হাজার হাজার টাকা টিউশন ফি। সেই বেতনের টাকা থেকে তহবিল গঠন করা যায় কিনা- সে প্রস্তাবও দিয়েছেন মালিকেরা। সম্প্রতি ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানোর পর পরিবহন মালিকদের চাপে সরকার বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ায়। এর পর থেকেই বাসে অর্ধেক ভাড়া দেয়ার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষার্থীরা। বুধবার সড়কে সিটি কর্পোরেশনের গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর সেই আন্দোলন আরও গতি পায়। বৃহস্পতিবার পথে পথে তাদের বিক্ষোভ-অবরোধে রাজধানী ঢাকা কার্যত অচল হয়ে পড়ে। গতকাল শনিবারও চলে সেই বিক্ষোভ।
×