ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও কমিশন গঠন করা হবে

প্রকাশিত: ২১:৪১, ২৪ অক্টোবর ২০২১

সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও কমিশন গঠন করা হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক হামলা ও সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, শীঘ্রই ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন’ তৈরি করার অঙ্গীকার করছি। পাশাপাশি জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা হবে। যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি সেই ওয়াজি গ্রুপ কুমিল্লায় মূর্তির ওপর কোরান রেখে দেশে একটি বিশৃঙ্খলা তৈরি করে এর ফায়দা লুটতে চেয়েছিল। ওয়াজিরা শুধু সরকার উৎখাতের লক্ষ্যেই এহেন বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। আর এদের মদদ দিচ্ছে পাকিস্তান। ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট নিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা দেশের শান্তি ও নিরাপত্তার কথা ভেবেই আইসিটি আইনটি প্রণয়ন করেছি। কিন্তু সাক্ষীর অভাবে সেই আইনের যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে ‘সাক্ষী সুরক্ষা আইন’ খুব শীঘ্রই তৈরি করতে যাচ্ছি। আশা করি এই আইনের ফলে সাক্ষীরা নির্ভয়ে সাক্ষ্য প্রদান করতে পারবেন। আমাদের মনে রাখতে হবে, মৌলবাদীরা শেখ হাসিনার হাতকে দুর্বল করার জন্যই দেশে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করছে। সুতরাং আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শনিবার একাত্তারের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত ‘চলমান সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস : সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়’ শীর্ষক ওয়েবিনারে তিনি এসব কথা বলেন। নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আইনমন্ত্রী। সভাপতির বক্তব্যে শাহরিয়ার কবির বলেন, এবারের দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ‘হিন্দুরা কোরান অবমাননা করেছে’- এ ধরনের ভয়ঙ্কর গুজব ছড়িয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর যে জঘন্য হামলা চালিয়েছে তার নিন্দা জানাবার ভাষা আমাদের জানা নেই। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক এ ধরনের হামলা সংঘটিত করছে বাংলাদেশকে মোল্লা উমরের আফগানিস্তান বা জিয়াউল হকের পাকিস্তানের মতো ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র বানাবার জন্য। এবারের সাম্প্রদায়িক হামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিছু জায়গায় দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিলেও সাধারণভাবে হামলাকারীদের প্রতিহত করেছে এবং ইতোমধ্যে কয়েকশ’ গ্রেফতারও হয়েছে। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে এ কথা অনায়াসে বলা যায় এসব অপরাধীর বিরুদ্ধে কোন সাক্ষী পাওয়া যাবে না এবং তারা জামিনে বেরিয়ে এসে নতুন উদ্যমে হামলার ছক আঁকবে। শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, সংঘবদ্ধ সামাজিক সন্ত্রাসের ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য আমরা দশ বছর ধরে ‘সাক্ষী সুরক্ষা আইন’ ও ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন’ প্রণয়নের কথা বলছি। একই সঙ্গে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সার্বিক নিরাপত্তা, মর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিতকরণের জন্য ‘জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন’ গঠনের দাবি জানিয়েছি। আমাদের দাবির কারণে আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন’ এবং ‘জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন’ গঠনের ঘোষণা প্রদান করলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি। সনাতন ফৌজদারি দন্ডবিধি অনুযায়ী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের বিচার ও শাস্তিপ্রদান যে সম্ভব নয় তা আমরা ২০০১ সালের নৃশংসতম ঘটনাবলির সময় থেকে লক্ষ্য করছি। হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের পাশাপাশি যেসব ওয়াজি সন্ত্রাসী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায় এবং ভিন্নমতের বিরুদ্ধে জঘন্য হিংসাত্মক বক্তব্য প্রদান করছে তাদের গ্রেফতার করে শাস্তি দেয়া না হলে বাংলাদেশে কখনও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ও হামলা বন্ধ করা যাবে না। কারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব ওয়াজি সন্ত্রাসীর বক্তব্য মরণঘাতী ভাইরাসের মতো সাধারণ মানুষের মনোজগতে সংক্রমিত হচ্ছে, যা বাংলাদেশ ও জাতির সম্প্রীতির ঐতিহ্য নিশ্চিতভাবে ধ্বংস করবে। আমাদের দাবি- হামলাকারীদের গ্রেফতারের পাশাপাশি যারা বক্তৃতা বক্তব্যে হিন্দুদের ওপর হামলার জন্য ভয়ঙ্কর উস্কানিমূলক প্ররোচনা দিয়েছে এবং সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও সন্ত্রাসের ক্ষেত্র তৈরি করছে তাদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। সভায় বক্তব্য দেন মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের সভাপতি বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভাষাসংগ্রামী ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের পৌত্রী মানবাধিকার নেত্রী আরমা দত্ত, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক রাজনীতিবিদ ফজলে হোসেন বাদশা, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, নিরাপত্তা বিশ্লেষক প্রাক্তন আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল আনোয়ার, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ-এর সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সমাজকর্মী নির্মল রোজারিও, নির্মূল কমিটির সর্বইউরোপীয় শাখার সভাপতি মানবাধিকার নেতা তরুণকান্তি চৌধুরী, নির্মূল কমিটির যুক্তরাজ্য শাখার সাধারণ সম্পাদক মানবাধিকার নেত্রী রুবি হক প্রমুখ। সভায় বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ওপর বারবার সাম্প্রদায়িক হামলা হচ্ছে। হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে অথচ প্রচলিত আইনের সীমাবদ্ধতায় অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হচ্ছে না এবং ভিকটিমদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এ কারণেই ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন’ এবং বিচারিক ক্ষমতাসহ ‘জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন’ গঠন করা অত্যন্ত জরুরী। এই কমিশনের রূপরেখা এবং কার্যবিধি কী হবে এর একটি খসড়া অর্গানোগ্রাম আমরা তৈরি করে আইন কমিশনকে দিয়েছি। ‘সাক্ষী নিরাপত্তা আইন’ যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচারের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত জরুরী। জামায়াতে ইসলামীর হুমকির কারণে ট্রাইব্যুনালের অনেক মামলার অনেক সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে আসেন নাই। সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ও হামলার ক্ষেত্রে মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের হুমকির কারণে মানুষ সাক্ষ্য প্রদানে ভয় পায়। এসব কারণে ‘সাক্ষী সুরক্ষা আইন’ ও দ্রুত প্রণয়ন করা প্রয়োজন। ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, সম্প্রতি সারাদেশে যে হামলাগুলো হয়েছে সে সম্পর্কে আমরা সকলেই নিশ্চয় ওয়াকিবহাল আছি। এখন আমরা কিভাবে এ হামলাগুলো প্রতিরোধ করব তা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে এবং কাজ করতে হবে।
×