ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বানরের শরীরে সফল ট্রায়াল, সব ভেরিয়েন্টে কার্যকর বঙ্গভ্যাক্স

প্রকাশিত: ২৩:৫৫, ২২ অক্টোবর ২০২১

বানরের শরীরে সফল ট্রায়াল, সব ভেরিয়েন্টে কার্যকর বঙ্গভ্যাক্স

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ ১ আগস্ট বানরের দেহে দেশে তৈরি বঙ্গভ্যাক্স টিকার ট্রায়াল শুরু হয়েছিল যা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি করেছে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গেøাব বায়োটেক লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির কোয়ালিটি এ্যান্ড রেগুলেটরি বিভাগের জ্যৈষ্ঠ ব্যবস্থাপক ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জনকণ্ঠকে জানান, ডেল্টাসহ সব ধরনের ভ্যারিয়েন্টে কার্যকর আমাদের উৎপাদিত এই ভ্যাকসিনটি। বানরের শরীরে সফল ট্রায়ালের পর এবার মানবদেহে ট্রায়ালের অনুমতি চায় প্রতিষ্ঠানটি। তিনি বলেন, আমরা আশা করছি আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশে মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলে (বিএমআরসি) আমাদের গবেষণার প্রটোকল জমা দেব। বিএমআরসি যদি আমাদের ট্রায়ালের অনুমতি দেয়, তাহলে নবেম্বরেই আমরা সেটা পরীক্ষামূলক মানবদেহে প্রয়োগ করতে পারব। ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, বানরের দেহে ট্রায়ালের কাজ বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে। কাক্সিক্ষত যে ফল সেটা আমরা ইতোমধ্যে পেয়ে গেছি। চূড়ান্ত ফলে আমাদের টিকা ডেল্টাসহ অন্য ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে শতভাগ কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। আমরা খুবই আত্মবিশ্বাসী যে বঙ্গভ্যাক্স মানবদেহেও একইভাবে কাজ করবে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত বিশ্বে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টসহ ১১টি ভ্যারিয়েন্ট বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় সক্রিয় ছিল। আমরা এই ১১টি ভ্যারিয়েন্টের সিকোয়েন্স এ্যানালাইসিস করে আমাদের ভ্যাকসিনের সিকোয়েন্স মিলিয়ে দেখেছি প্রতিটি ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রেই বঙ্গভ্যাক্স কার্যকর। যার প্রমাণ মিলেছে বানরের পরীক্ষায়। প্রাথমিক ফলে আমাদের টিকাটি বানরের শরীরে নিরাপদ এবং কার্যকর এ্যান্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এরপর ভ্যাকসিনেটেড বানরের দেহে করোনাভাইরাসের ডেল্টাসহ অন্য ভ্যারিয়েন্ট প্রয়োগ করে চ্যালেঞ্জ স্টাডি করেছি। আমরা দেখতে পেয়েছি, এই ভ্যাকসিনে বানরের দেহে যে এ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, সেই এ্যান্টিবডি সাত দিনের মধ্যেই করোনাভাইরাসকে নিউট্রালাইজ করতে পেরেছে। এতে প্রমাণিত হয় আমাদের টিকা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টসহ সার্স-কোভ এর যে অন্য ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে সেগুলোকেও নিউট্রালাইজ করতে সক্ষম। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, উন্নত বিশ্ব করোনাভাইরাসের মহামারী মোকাবেলায় যে নতুন ভ্যাকসিনের কথা বলছে, আমরা গেøাব বায়োটেক মনে করি, সেই নতুন ভ্যাকসিনটি হতে পারে বঙ্গভ্যাক্স। কারণ যখন এক বছর আগে প্রথম ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছিল তখন করোনার এত ধরন ছিল না। ফলে বর্তমানে প্রচলিত বেশিরভাগ ভ্যাকসিন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে খুব একটা কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারছে না। আমরা বিশ্বাস করি, বঙ্গভ্যাক্স টিকা বিশ্বকে এই করোনা সঙ্কট থেকে উদ্ধার করবে। তাই যদি এ টিকা মানবদেহে পরীক্ষা শেষে বাজারে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে সারা বিশ্বে ডেল্টাসহ করোনার অন্য ভ্যারিয়েন্টের যে মহামারী চলছে সেটা থেকে একমাত্র বঙ্গভ্যাক্সই পরিত্রাণ দিতে পারে বলে আশা করছি। যেসব দেশে ইতোমধ্যে বিভিন্ন টিকা দেয়া হয়েছে, সেসব দেশে বুস্টার ডোজ হিসেবেও বঙ্গভ্যাক্স দেয়া যাবে। বঙ্গভ্যাক্স ট্রায়াল সম্পর্কিত নানা দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যবিজ্ঞান সম্পর্কিত সমস্যা এবং সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা, লক্ষ্য, নীতি এবং উদ্দেশ্যগুলোর ভিত্তিতে গবেষণায় অগ্রাধিকার ক্ষেত্র নির্ধারণ করে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যবিজ্ঞানকে এগিয়ে নেয়ার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে বিএমআরসি গঠন করেছিলেন। অথচ করোনা মহামারীতে দেশে উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন বঙ্গভ্যাক্সের ট্রায়ালে যাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কথা, তাদের কোন সহযোগিতাই আমরা পাইনি। যেমন বিএমআরসি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নৈতিক অনুমোদন না দিয়ে দীর্ঘ পাঁচমাস ধরে সম্পূর্ণ নীরব থেকেছে এবং এই ভ্যাকসিনটির পরীক্ষা চালানোর জন্য কোন উদ্যোগ নেয়নি। উপরন্তু বিএমআরসি একেক সময় গণমাধ্যমে একেক রকম বক্তব্য দিয়ে সময় নষ্ট করেছে। সর্বশেষ বানরের শরীরে ট্রায়ালের জন্য শর্ত জুড়ে দেয়া কিংবা এক চিঠির উত্তর দেয়ার আগে নতুন পর্যবেক্ষণ দিয়ে আরেক চিঠি দেয়ার অর্থ হচ্ছে এই ভ্যাকসিনটি যাতে উৎপাদন করতে বা অনুমোদন পেতে আরও অনেক সময় অতিবাহিত হয় এবং এটি যাতে আলোর মুখ না দেখে। যদি বানরের শরীরে টিকা প্রয়োগের কিংবা আরও পর্যবেক্ষণ দেয়া প্রয়োজন হতো তবে বিএমআরসি আরও ৫ মাস আগে গেøাব বায়োটেককে এসব শর্ত উল্লেখ করত।
×