ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাল্য বিয়ে হওয়া শিক্ষার্থীদেরও ক্লাসে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করছি : শিক্ষামন্ত্রী

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ২১ অক্টোবর ২০২১

বাল্য বিয়ে হওয়া শিক্ষার্থীদেরও ক্লাসে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করছি : শিক্ষামন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, করোনা অতিমারীর কারণে কিছু প্রত্যন্ত অঞ্চলে দেখা গেছে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বাল্যবিয়ে বেশি হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি সেই বাল্যবিয়ে হয়ে যাওয়া মেয়েদের আবার ক্লাসে ফিরিয়ে আনতে, সেজন্য আমরা কাজ করছি। অতিমারীর কারণে অনেকেই স্থানান্তরিত হয়ে গেছে। এক শহর থেকে আরেক শহরে বা শহর থেকে গ্রামে চলে গেছে। স্থানান্তরিত হলেও তারা যেখানেই আছে সেখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতে তারা ক্লাসে অংশগ্রহণ করেন তারজন্য আমরা চেষ্টা করছি। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ মুহুর্তে আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাসের সংখ্যা বাড়াতে পারছি না। নতুন বছর শুরু হলে এবং তখন সংক্রমন আরো কমে গেলে আমরা আশা করছি ক্লাসের সংখ্যা বাড়াতে পারবো। এখন যে অবস্থা আছে তাতে সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর ক্ষেত্রে অভিভাবকরা যে পুরোপুরি স্বস্তিতে আছে, তা নয়। সে কারণে স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার কোথাও কোথাও কম আছে। আস্তে আস্তে যখন সব ক্লাস শুরু হবে তখন আবার তাদের উপস্থিতি বাড়বে, এটা নিশ্চিত। করোনাকালে কিছু শিক্ষার্থী হয়তো ঝড়ে গেছে। করোনা অতিমারিতে কতটা আসলে ঝড়ে গেছে এবং কি কারণে ঝড়ে গেছে সেটা আমাদের নিরূপন করতে হবে। সেটা নিয়ে আমরা এখনই কাজ করছি। বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সম্মেলন কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ সমূহে ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) ১ম বর্ষে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টশন প্রোগ্রাম (ভার্চুয়ালী) উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন। এসময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অধ্যাপক মো. মশিউর রহমান, রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও পরামর্শ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. ফয়জুল করিম প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আরও কিছুদিন গেলে আমরা বুঝতে পারবো- সত্যিকার অর্থে কতজন ঝরে পড়েছে। আর কতজন করোনা অতিমারির কারণে কিংবা ঋতু পরিবর্তনজনিত অসুস্থতার কারণে হয়তো ক্লাসে উপস্থিতির হার কম। আর কিছুদিন গেলে আমরা বুঝতে পারবো সত্যিকার কোন কারণে কতজন ক্লাসে আসছে না, কিংবা কতজন আসলে ঝরে গেছে। তখন প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের পক্ষে স্পেসিফিক ব্যবস্থা নেয়া সহজ হবে। আমরা এ বিষয়টি দেখছি। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা এই কোভিডের সময়ে অনলাইনে এবং সামনা সামনি ক্লাস শুরু করতে যাচ্ছেন। এখন অনেক চ্যালেঞ্জ। আপনাদের অনেক নতুন স্বপ্ন রয়েছে। আপনাদের সেই স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে। সে জন্যে সরকার এবং জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় আপনাদের পাশে আছে। আমরা বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সার্বিক দিকনির্দেশনা এবং পরামর্শে আপনাদের জন্য অনার্স ডিগ্রির পাশাপাশি নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করছি, যাতে আপনারা নানারকম দক্ষতা নিয়ে গড়ে উঠতে পারেন। দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত হতে পারেন। নিজেরা উদ্যোক্তা হতে পারেন কিংবা কর্মসংস্থানের জন্য দেশে বিদেশে নানা সুযোগ তৈরি হয় সেটি গ্রহণ করতে পারেন। আশা করছি এর মধ্যদিয়ে আপনাদের সেই স্বপ্নগুলো পুরণ হবে। আপনারা দক্ষ জনশক্তি হিসেবে তৈরি হবেন। দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত হবেন। এই দেশটিকে নিয়ে যে অভিষ্ট্য লক্ষ্য- বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা, সেই সোনার বাংলা রূপান্তরে আপনারা অবদান রাখবেন। আপনাদের মাধ্যমে এই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এই আশাবাদ রইল। শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, এছাড়াও শিক্ষার্থীরা যেন নিজেদেরকে উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতে পারে সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে অনার্স কোর্সের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে, যাতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতে পারে। পাশাপাশি দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। শিক্ষামন্ত্রী অনার্স শিক্ষকদের এমপিও ভূক্তির বিষয়ে বলেন, এ সিদ্ধান্ত শুধু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপর নির্ভর করে না। তাদের এমপিওভুক্তির বিষয়টি অর্থমন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তৃতীয় শিক্ষকের ব্যাপারে আমরা এ মুহুর্তে কোন সুখবর দিতে পারছি না। তবে এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি। তিনি একইদিন বিকেলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে কবুতর ও বেলুন উড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলরুমে কেক কাটেন। এসময় অনুষ্ঠিত আলোচনা অনুষ্ঠানে শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক, উপাচার্য অধ্যাপক মো. মশিউর রহমান অংশ নেন। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থি ছিলেন। পরে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গানে অংশ নেন বিশিষ্ট কণ্ঠ শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা এবং ঢাকার সরকারি সঙ্গীত কলেজ সুরের ধারা কলেজ অব মিউজিকের শিল্পীরা।
×