ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চিনির শুল্ক ৩০ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ ভোজ্যতেলের বিষয়ে শীঘ্রই সিদ্ধান্ত

পেঁয়াজ আমদানিতে সব শুল্ক প্রত্যাহার

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ১৫ অক্টোবর ২০২১

পেঁয়াজ আমদানিতে সব শুল্ক প্রত্যাহার

এম শাহজাহান ॥ দ্রুত দাম কমাতে পেঁয়াজ আমদানিতে সব শুল্ক প্রত্যাহার করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বিনা শুল্কে পেঁয়াজ আমদানি করার সুযোগ পেলেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া চিনির নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি) ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিমের স্বাক্ষর করা এ সংক্রান্ত দুটি পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এনবিআরের এ সিদ্ধান্তের ফলে নিত্যপণ্যের বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে ভোজ্যতেলের ব্যাপারে এখনও কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি এনবিআর। ভোক্তার প্রত্যাশা, বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে শীঘ্রই ভোজ্যতেলের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হবে। এতে করে বাজারে স্বস্তি ফিরে আসবে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধমুখীর মুখে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুরোধ জানানোর তিনদিনের মাথায় পেঁয়াজ ও চিনি আমদানির শুল্ক কমানো হলো। বৃহস্পতিবার থেকেই নতুন শুল্কহার কার্যকর করা হয়েছে। চিনির নতুন শুল্কহার কার্যকর থাকবে আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। পেঁয়াজের নতুন শুল্কহার কার্যকর থাকবে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এছাড়া ভোজ্যতেলের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের ব্যাপারে শীঘ্রই সিদ্ধান্ত নেবে এনবিআর। বাজারে এখন ভোজ্যতেল সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। টিসিবির ট্রাক সেলে তেল কিনতে ভিড় বাড়ছে মধ্যবিত্তের। আর সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে ভোজ্যতেলের দাম। এর আগে বুধবার দাম কমাতে পেঁয়াজ, চিনি ও ভোজ্যতেলের মতো নিত্যপণ্যের ওপর আরোপিত আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আমদানি উৎসাহিত করতেই এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন (এসআরও) জারি করা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এনবিআর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। এক মাসের বেশি সময় ধরে অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার। শাক-সবজিসহ বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্যের দাম চড়া। বিশেষ করে পেঁয়াজের দাম নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে চিনি ও ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে। এনবিআর আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহার করলে দ্রব্যমূল্য হ্রাস পেয়ে বাজারে স্বস্তি ফিরে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পেঁয়াজ, চিনি ও ভোজ্যতেলের সব ধরনের আমদানি শুল্ক আপাতত স্থগিত রাখতে সম্প্রতি এনবিআরকে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে চিনি আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক এবং অগ্রিম শুল্ক রয়েছে। দুটোই প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছে। ভোজ্যতেল আমদানিতে ভ্যাট ও অগ্রিম শুল্ক রয়েছে, এক্ষেত্রে অগ্রিম শুল্ক প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া পেঁয়াজের শুল্ক চার মাসের জন্য প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছে। ভোজ্যতেল ও চিনির কর কমানো নিয়ে এক মাস আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু সেই চিঠি আমলে নেয়া হয়নি। নতুন করে আবারও চিঠি দেয়া হয়েছে। এতে পেঁয়াজ আমদানিতে আরোপিত ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করে নেয়ার অনুরোধ করা হয়। জানা গেছে, ভোজ্যতেল আমদানিতে তিন স্তরে ১৫ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) রয়েছে। চিনিতে আমদানি শুল্ক, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, অগ্রিম কর (এটি) ও অগ্রিম আয়কর (এআইটি) রয়েছে। আমদানিকারক ব্যবসায়ীদের দাবি, এখন এক কেজি চিনিতে মোট কর দাঁড়ায় ৩০ টাকার মতো। আর প্রতিলিটার সয়াবিন তেলে কর দাঁড়ায় ২০ টাকার বেশি। তাদের মতে, আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হলে এসব পণ্যের দাম কমে আসবে। ভোক্তা আরও কম মূল্যে পেঁয়াজসহ অন্যান্য নিত্যপণ্য কেনাকাটা করতে পারবেন। এছাড়া আমদানি বাড়বে। উল্লেখ্য, নিত্যপণ্যের বাজারে পেঁয়াজ, চিনি, ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখন বাড়তি। দেশী পেঁয়াজের দাম গত এক সপ্তাহে বেড়ে ৮০-৯০ টাকা কেজি পর্যন্ত উঠেছে। এখন সামান্য কমে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আর প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭৮-৮০ টাকায়। সরকার দাম বেঁধে দিলেও বেসরকারী জোগান থেকে আসা ভোজ্যতেল ও চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না। পাঁচ লিটারের প্রতিবোতল ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে ৭১০-৭৫০ টাকা এবং প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব তপনকান্তি ঘোষ জনকণ্ঠকে বলেন, মাসখানেক আগে ভোজ্যতেল ও চিনির ওপর আরোপিত আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে এনবিআরকে চিঠি দেয়া হয়েছে। আর সম্প্রতি পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন আবার এই পণ্যটির ওপর আরোপিত ৫ শতাংশ শুল্ক কমানোর আবেদন করা হয়। জানা গেছে, ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভোক্তা অস্বস্তি রয়েছেন। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ ভোগ্যপণ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ অবস্থায় বাজারে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। জিনিসপত্রের দাম কমাতে সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি জরুরী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠক থেকেই ভোগ্য ও নিত্যপণ্য আমদানিতে আরোপিত সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহার ও স্থগিত করার জন্য এনবিআরকে অনুরোধ জানানো হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আবেদনে সাড়া দিয়েছে এনবিআর। এর আগে শুল্ক প্রত্যাহারে সংস্থাটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। আর এ কারণেই এবার পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল ও চিনির ওপর আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহার করে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। এ প্রসঙ্গে এনবিআরের সদস্য (শুল্কনীতি) সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধ গুরুত্ব দিয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে। দ্রব্যমূল্য কমাতে এর আগেও এনবিআর কয়েকটি পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। এবারও চিনি ও পেঁয়াজের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হলো। এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
×