ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মহাঅষ্টমী উদ্্যাপন, এবারও হয়নি কুমারী পূজা

প্রকাশিত: ২৩:২৬, ১৪ অক্টোবর ২০২১

মহাঅষ্টমী উদ্্যাপন, এবারও হয়নি কুমারী পূজা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের তৃতীয় দিন মহাঅষ্টমী। ষষ্ঠী ও সপ্তমী শেষে দেবীকে অঞ্জলি প্রদানের গুরুত্বপূর্ণ দিন। বুধবার এ দিন রাজধানীসহ দেশের সব পূজা ম-পে ভক্তরা পুষ্পাঞ্জলির মাধ্যমে মায়ের পূজা করেন। প্রতিবছর এ দিন কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হলেও করোনা মহামারীর কথা বিবেচনায় গতবছরের মতো এ বছরও রাজধানীসহ অনেক জায়গায় এ পূজা হয়নি। আজ বৃহস্পতিবার মহানবমীর মধ্য শেষ হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এ উৎসবের। মহাঅষ্টমীতে বুধবার সকালে দুর্গা দেবীর মহাঅষ্টমীবিহিত পূজা প্রশস্তা, ব্রতোপবাস ও পুষ্পাঞ্জলি হয়। করোনাভাইরাস সৃষ্ট পরিস্থিতিতে গতবারের মতো এবারও রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠে মহাঅষ্টমীর মূল আকর্ষণ কুমারী পূজা হয়নি। পূজা উদযাপন পরিষদের মতে, দুর্গাপূজার অন্যতম বৈশিষ্ট্য কুমারী পূজা। দেবী পুরাণে কুমারী পূজার সুষ্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। কুমারী পূজা কেন করা হয়, এ প্রসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেব বলেছেন, সব স্ত্রী লোক ভগবতীর এক-একটি রূপ। শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর বেশি প্রকাশ। কুমারী পূজার মাধ্যমে নারী জাতি হয়ে উঠবে পুত-পবিত্র ও মাতৃভাবাপন্ন। প্রত্যেকে শ্রদ্ধাশীল হবে নারী জাতির প্রতি। ১৯০১ সালে ভারতীয় দার্শনিক ও ধর্ম প্রচারক স্বামী বিবেকানন্দ সর্বপ্রথম কলকাতার বেলুড় মঠে নয়জন কুমারী দিয়ে এ পূজার মাধ্যমে এর পুনর্প্রচলন করেন। তখন থেকে প্রতিবছর দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে এ পূজা হয়ে আসছে। পূজার আগ পর্যন্ত কুমারীর পরিচয় গোপন রাখা হয়। এছাড়াও নির্বাচিত কুমারী পরবর্তী সময়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন আচার-অনুষ্ঠান করতে পারে। ষষ্ঠী তিথিতে অশ্বমেথ বৃক্ষের পূজার মাধ্যমে আহ্বান জানানো হয় দেবী দুর্গাকে। ঢাক-ঢোল আর কাঁসার বাদ্যে দেবীর বোধন পূজা শেষে মঙ্গলবার ভোরে হয়েছে কলাবউ স্নান, নবপত্রিকা প্রবেশ। দর্পণে দেবীকে মহাস্নান, চক্ষুদানে দেবীর মৃণ্ময়ীতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা ও সপ্তমীবিহীত পূজার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে সপ্তমী তিথি। মহা অষ্টমীর দিন নতুন কাপড় পরে বাহারি সাজে মন্দিরে মন্দিরে দেবীকে পুষ্পাঞ্জলি দেন ভক্তরা। এই দিনই হয় সন্ধি পূজা। মূলত দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে মহামায়ার ষষ্টক অর্থাৎ ৬ বছরের কুমারী রূপ ‘উমা’র পূজা করা হয়। তবে এই দিন মন্দিরে ১ থেকে ১৬ বছরের যেকোন হিন্দু কুমারী কন্যাকে মাতৃভাবে জীবন্ত প্রতিমা কল্পনা করে পূজা করা হয়। ভক্তদের মতে, এটি একাধারে ঈশ্বরের উপাসনা, মানববন্দনা আর নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা। মূলত নারীর সম্মান, মানুষের সম্মান আর ঈশ্বর আরাধনাই কুমারী পূজার অন্তর্নিহিত শিক্ষা। আগামীকাল নবমীতে ম-পে ম-পে দেবীর মহা প্রসাদ বিতরণ করা হবে। ১৫ই অক্টোবর দশমী তিথিতে দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবী দোলায় চড়ে আবারও ফিরবেন কৈলাশে। সরেজমিনে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই দেবী দর্শনে মানুষের উপচেপড়া ভিড়। সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটের শুরু হয় অষ্টমী পূজা। সকাল ৮টা ১৪ মিনিট থেকে ৯টা ২ মিনিটের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় সন্ধিপূজা। সাড়ে ৯টা থেকে ১০টায় শুরু হয় অষ্টমী পূজার পুষ্পাঞ্জলি। পূজা চলবে রাত ১১টা পর্যন্ত। এ সময় ফুলে-ফলে ভরে যায় মন্দির চত্বর। বাহারি সজ্জায় সাজানো হয় পুরো ঢাকেশ্বরী মন্দির প্রাঙ্গণ। চলমান করোনা পরিস্থিতির দিকেও রাখা হয়েছে বিশেষ নজর। পুরো মন্দিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে পুলিশ-আনসারসহ একাধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে গতবারের মতো করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এবারও এখানে হচ্ছে না ‘কুমারী পূজা’। রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনের পূজাও বেশ নজর কেড়েছে দেশবাসীর। ধরা হয় সব থেকে জাঁকজমকপূর্ণ কুমারী পূজা হয় সেখানে। কিন্তু এখানেও এবার হচ্ছে না কুমারী পূজা। রাজধানীর খামারবাড়ী কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ (কেআইবি) প্রাঙ্গণে সনাতন সমাজ কল্যাণ সংঘ আয়োজিত দুর্গাপূজা ম-পে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রবেশমুখে হাত ধোয়ার ও স্যানিটাইজের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নারী-পুরুষের প্রবেশের জন্য পৃথক দুটি লেন তৈরি করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্যান্ডেলের ভেতরে বসারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুরো ম-প চত্বর নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে ফেলা হয়েছে। রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, শাঁখারী বাজার, রমনা কালীমন্দির, পশ্চিম ধানম-ির দুর্গা মন্দির, আখড়া মন্দির, নিমতলা মন্দির, ফার্মগেট, বনশ্রীসহ রাজধানীর অন্যান্য এলাকাতেও জমকালোভাবে আয়োজন করা হয়েছে দুর্গাপূজার। পূজা উপলক্ষে অলিগলি থেকে রাজপথ আলোর নানা রঙের ছটা ছড়াচ্ছে সর্বত্র। এদিকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় আয়োজন দুর্গোৎসবের নিরাপত্তার বিষয়ে মঙ্গলবার রাজধানীর স্বামীবাগে লোকনাথ মন্দিরে পূজাম-প পরিদর্শন ও বস্ত্র বিতরণ শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সজাগ রয়েছে। পূজাম-পগুলোতে কোন ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। শুধু পূজা নয়, সব ধর্মীয় উৎসবে নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করছে।
×