ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বুড়িগঙ্গার তীরে বর্ণিল উৎসব

ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচে জন্মদিনের আনন্দ উচ্ছ¡াস

প্রকাশিত: ২৩:৪৬, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচে জন্মদিনের আনন্দ উচ্ছ¡াস

মোরসালিন মিজান ॥ বুড়িগঙ্গার জলে সারি সারি নৌকা। সরু ছিপ নৌকায় কোন ইঞ্জিন নেই। তবুও অবিশ্বাস্য গতিতে ছুটে চলল। বৈঠা হাতে এমন গতি! নদীর দুই ধারে ভিড় করা উৎসুক জনতা চোখ সরাতে পারছিলেন না। গ্রামীণ ঐতিহ্যের নৌকাবাইচ একই রকম মুগ্ধ করে রেখেছিল শহুরেদের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনে মঙ্গলবার অত্যন্ত আকর্ষণীয় এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। একই দিন রাজধানীতে আরও অনেক আয়োজন ছিল। এসব আয়োজন থেকে স্বতন্ত্র ভাব ও ভাষায় প্রধানমন্ত্রীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো হয়। তবে ৭৫তম জন্মদিনের প্রকৃত উচ্ছ¡াস আনন্দ সার্থকভাবে ফুটে উঠেছে নৌকাবাইচে। বাঙালীর সুপ্রাচীন লোক ঐহিত্য ও সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ নৌকাবাইচ। নদীমাতৃক বাংলাদেশে বহুকাল ধরেই এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে আসছে। গ্রামীণ খেলাধুলা ও উৎসবগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। শহর নগরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদীতেও নৌকাবাইচের আয়োজন করা হয়। বিশেষ করে অষ্টাদশ শতাব্দীতে শহরাঞ্চলে বিশেষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল নৌকাবাইচ। যতদূর তথ্য, মোঘল আমলে নবাব পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতায় নৌকাবাইচের আয়োজন করা হতো। নদী পথে আক্রমণ করার জন্য বা আক্রমণ রুখার লক্ষ্যে দ্রæতগতির নৌকাসহ তৈরি থাকত আলাদা বাহিনী। বাংলার বারো ভুঁইয়ারা নৌবলে বলীয়ান হয়ে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। মগ ও হার্মাদ জলদস্যুদের দমন করতেও নৌশক্তি ব্যবহৃত হয়েছিল বলে জানা যায়। আজকের দিনে যে নৌকাবাইচ, সেখানেও শক্তি গতি ও কৌশলের গুণ লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশে বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টি হয়। জলে পূর্ণ হয়ে যায় ছোট বড় সব নদী। নতুন জলে নৌকাবাইচের আয়োজন করা হয়। বর্ষায় শুরু হওয়া নৌকাবাইচ চলে শরতকাল পর্যন্ত। বিশেষ করে ভাদ্র আশ্বিন মাসে দেশের নানা প্রান্তে প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করতে দেখা যায়। সে অনুযায়ী, আশ্বিনে নৌকাবাইচের আয়োজন করে বিআইডবিøউটিএ। কিন্তু শেখ হাসিনার জন্মদিন উদ্যাপনে নৌকাবাইচ কেন? উত্তর জানতে হলে ইতিহাসের কাছে ফিরতে হবে। ইতিহাস বলছে, ৭০’র নির্বাচনে নৌকা প্রতীকেই বিপুল জয়লাভ করেছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। এ জয়ের মধ্য দিয়ে বাঙালী নিজস্ব জাতি রাষ্ট্র গঠনের পথে বিপুল এগিয়ে গিয়েছিল। স্বাধীন বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফেরাতে, এগিয়ে নিতে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়েছেন বর্তমান আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাও। জনগণও নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে আগামীর বাংলাদেশ গড়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এই সমস্ত আবেগ উচ্ছ¡াসও জুড়ে গিয়েছিল বুড়িগঙ্গার নৌকাবাইচের সঙ্গে। বরিশুর লঞ্চঘাটে বিকেলে এ নৌকা বাইচের উদ্বোধন করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সুলতান আব্দুল হামিদ, বিআইডবিøউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক প্রমুখ। তবে তারও আগে থেকে দুই সুসজ্জিত নৌকায় মহড়া শুরু হয়ে যায়। উৎসুক মানুষ ভীড় করে নদীর দুই তীরে। নানা শোরগোলে মুখরিত করে রাখে গোটা এলাকা। মূল প্রতিযোগিতা শুরু হলে এ উচ্ছ¡াস বেড়ে কয়েকগুণ হয়ে যায়। প্রতিযোগিতাটিকে দুটি ভাগে ভাগ করে নেয়া হয়। একটি ৬০ মাঝি নৌকাবাইচ। অপরটি ১২ মাঝি নৌকাবাইচ। অর্থাৎ কোন নৌকায় বৈঠা হাতে ছিলেন ৬০ জন। কোনটিতে ১২ জন। মোট ১১টি দল নৌকাবাইচে অংশ নেয়। তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় দলগুলোকে। ৬০ মাঝি নৌকাবাইচে শেখবাড়ী দল প্রথম, সোনারতরী দল দ্বিতীয় এবং জয় বাংলা দল তৃতীয় হয়। ১২ মাঝি নৌকাবাইচে মারুফ খানের দল প্রথম, হামিদ আলীর দল দ্বিতীয় এবং খায়রুল ইসলামের দল তৃতীয় হয়। জন্মদিনের আয়োজনে আরও ছিল লেজার শো। ওড়ানো হয় অসংখ্য ফানুস। সব মিলিয়ে দারুণ রঙিন একটি আয়োজন। বিআইডবিøউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক এমন আয়োজনে বেশ সন্তুষ্ট। প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমাদের আশা ভরসার কেন্দ্রে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এই দেশ নদী জল নৌকা ভালবাসেন। তাই ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচের মাধ্যমে আমরা প্রধানমন্ত্রীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছি। আয়োজনটির মধ্য দিয়ে যে আবেগ উচ্ছ¡াস প্রকাশিত হয়েছে তা জন্মদিনের আনন্দকেই তুলে ধরেছে। অনেক আয়োজনের ভিড়ে এ আয়োজনটি ঢাকাবাসী মনে রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
×