ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

চাঞ্চল্যকর সিনহা হত্যা

ওসি প্রদীপ ও লিয়াকত পরিকল্পিতভাবে গুলি করে সিনহাকে

প্রকাশিত: ২৩:২১, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

ওসি প্রদীপ ও লিয়াকত পরিকল্পিতভাবে গুলি করে সিনহাকে

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মেজর সিনহা হত্যা মামলার তৃতীয় দফায় তৃতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। সাক্ষীরা বলেছেন, ওসি প্রদীপ ও ইন্সপেক্টর লিয়াকত পরিকল্পিতভাবে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে মেজর সিনহাকে। সূত্র জানায়, সাক্ষী সার্জেন্ট আইয়ুব আলীকে দিয়ে বুধবার আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। তৃতীয় দিনে ৪ জন সাক্ষীর হাজিরা দিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। তারা হচ্ছেন ডাক্তার শাহীন আব্দুর রহমান, সার্জেন্ট আইয়ুব আলী, মোক্তার আহম্মেদ ও সালেহ আহম্মেদ। সিনহা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ওসি প্রদীপ কুমার দাশের আইনজীবী এ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত সাক্ষী সার্জেন্ট আইয়ুব আলীকে জেরা করতে আদালতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। আদালতে অন্য আইনজীবীর মাধ্যমে সাক্ষী সার্জেন্ট আইয়ুব আলীকে জেরা করতে রাজি আছেন কিনা ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে সুযোগ দেয়া হলে ওসি প্রদীপ জেরা করবেন না বলে আদালতের কাছে অস্বীকৃতি জানান। সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোঃ রাশেদ খান হত্যা মামলার তৃতীয় দফা সাক্ষ্যগ্রহণের তৃতীয় দিনেও ওসি প্রদীপ ও ইন্সপেক্টর লিয়াকত মেজর সিনহা হত্যার ছক তৈরি করেই এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন সাক্ষীরা। বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপসহ সিনহা হত্যা মামলার ১৫ আসামিকে জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে তোলা হয়। এ ছাড়াও মঙ্গলবার সাক্ষ্য নেয়া দুজনকে বুধবারও জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী ও পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম এ তথ্য জানিয়েছেন। মেজর সিনহা হত্যা মামলার প্রথম দফা সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ২৩, ২৪ ও ২৫ আগস্ট। দ্বিতীয় দফা সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে ৫,৬,৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর। সর্বশেষ তৃতীয় দফা সাক্ষ্যগ্রহণ ২০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে শেষ হয়েছে বুধবার। মেজর (অব) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার অন্যতম আসামি বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের পক্ষে একজন সাক্ষীকে জেরা করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন আসামির আইনজীবী। বুধবার ২২ সেপ্টেম্বর তৃতীয় দফায় সাক্ষ্যগ্রহণের শেষ দিনে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে সাক্ষী সার্জেন্ট আইয়ুব আলীর দেয়া জবানবন্দীর বিপক্ষে আসামি প্রদীপ কুমার দাশের পক্ষে জেরা করার জন্য বলা হলে তার নিয়োজিত আইনজীবী এ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত সেনা সদস্য সাক্ষী সার্জেন্ট আইয়ুুব আলীকে জেরা করতে এ অপারগতা প্রকাশ করেন। সাক্ষী সেনা সদস্য সার্জেন্ট আইয়ুব আলী হলেন চাঞ্চল্যকর মেজর সিনহা হত্যা মামলায় জবানবন্দী গ্রহণ করা ১২তম সাক্ষী। একপর্যায়ে আসামি প্রদীপ কুমার দাশ নিজে অথবা অন্য কোন আইনজীবী দিয়ে সাক্ষী আইয়ুব আলীকে জেরা করবেন কিনা জানতে চাইলে প্রদীপ কুমার দাশ জেরা করবেন না বলে আদালতের কাছে অস্বীকৃতি জানান। এর আগে বুধবার সকালে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে আসামি প্রদীপ কুমার দাশের নিয়োজিত আইনজীবী এ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত মেজর (অব) সিনহা মোহাম্মাদ রাশেদ খান হত্যা মামলার বিষয়ে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স ডিজিএফআই) তৈরি করা প্রতিবেদন ও ডকুমেন্টস তলব করে এনে মামলার মূল নথির সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য আদালতে আবেদন করেন। আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল আবেদনটি শুনানি করে বিষয়টি জুডিসিয়ালি বিষয় না হওয়ায় আবেদনটি নাকচ করে দেন। তবে সাক্ষী সার্জেন্ট আইয়ুব আলীকে অন্য আসামির আইনজীবীরা যথারীতি জেরা করেন। আবার মামলার ১৩তম সাক্ষী কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ শাহীন আবদুর রহমান চৌধুরীকে আসামি প্রদীপ কুমার দাশের পক্ষে তার আইনজীবী এ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত ডিক্লাইন্ট করেন। অর্থাৎ অন্য পূর্বতন আসামির পক্ষে সাক্ষী ডাক্তার শাহীন আবদুর রহমানকে যেসব জেরা করা হয়েছে, একই জেরা তার জন্য প্রযোজ্য বলে গণ্য করা হবে। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটির আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) এ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম, অতিরিক্ত পিপি এ্যাডভোকেট মোজাফফর আহমদ, এপিপি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমদ সাক্ষীদের জবানবন্দী গ্রহণ করেন।
×