ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গড়ে উঠছে উত্তরের শিল্পনগরী ‘দীপ্তিমান নীলফামারী’

মঙ্গার ভূত আজ ইতিহাস

প্রকাশিত: ২২:২৪, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

মঙ্গার ভূত আজ ইতিহাস

তাহমিন হক ববী, নীলফামারী ॥ দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা নদী বিধৌত ভারত সীমান্ত ঘেঁষা একটি প্রাচীন জনপদ নীলফামারী জেলা। মঙ্গা বা অভাবের সেদিন আর এখন নেই। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন ধারাবাহিকতায় দৃশপট পাল্টে গেছে। এ জেলার অর্থনীতি আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার পাশাপাশি হাজারো ছোটবড় শিল্প কারখানায় গড়ে উঠেছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে মানুষজনের আয়-রোজগার বেড়েছে। ফলে মঙ্গার ভূূূূূূূত এখন আর তাড়িয়ে বেড়ায় না। প্রয়াত কবি সৈয়দ শামসুল হকের সাড়া জাগানো নূরলদীনের সারাজীবন কবিতাটির সেই গভীর উচ্চারণ “জাগো বাহে কোনঠে সবায়”। যার কণ্ঠে কবিতাটি আজও সমাদৃত সেই বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নুর বর্তমানে নীলফামারী জেলা সদর আসনের একাধারের ৫ বারের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নে সেই মঙ্গা দূর করে নীলফামারী জেগে উঠেছে। সংস্কৃতি ও খেলাধুলায় এগিয়ে গেছে। তৈরি হয়েছে ৩৫ হাজার খুদে কবি। গড়ে তোলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ৩০ হাজার দর্শকের ধারণ ক্ষমতার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম, শিশুদের খেলাধুলার জন্য শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম। ফলে সংস্কৃতি ও খেলাধুলার ঐতিহ্য ও ভূসংস্থান বেশ সমৃদ্ধ যা অন্যান্য জেলা থেকে এই জেলাকে কিছুটা হলেও আলাদা করেছে। ধান, পাট, গম, ভুট্টা, আলুসহ মসলা জাতীয় ফসল উৎপাদন অন্যতম। বর্তমানে যোগ হয়েছে বাণিজ্যিক কৃষি হিসাবে কফি, চা, ড্রাগন, মাল্টা, লিচু, থাই পেয়ারা ও লেবু বাগান। স্বাক্ষরতার হারে নীলফামারী জেলা ৭৬ শতাংশে পৌঁছে গেছে। শেখ মসজিদ ॥ নীলফামারীতে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত শেখ জামে মসজিদ। নীলফামারীর প্রবীণ আইনজীবী জোনাব আলী জানালেন, ৬ দফা দাবি বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু ১৯৭০ সালের ২৩ অক্টোবর নীলফামারী এসেছিলেন এক জনসভায়। নীলফামারীর ইতিহাসে যা আজ ঐতিহাসিক। সেদিন ছিল শুক্রবার। জুমার নামাজ আদায় করেছিলেন একটি খড়ের ছাউনি মসজিদে। নীলফামারী সদরের চড়াইখোলা ইউনিয়নের পশ্চিম কুচিয়ার মোড় ফকিরপাড়া গ্রামে ওই মসজিদ ঘরটি দেখে পকেট থেকে ৫০০ টাকা খরচ করে মসজিদের বুনিয়াদী স্থাপন করে দিয়ে গিয়েছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিব। এলাকাবাসী তার নাম অনুসারে ওই মসজিদের নামকরণ করেন ‘শেখ জামে মসজিদ’। উন্নয়ন ॥ নীলফামারীর উন্নয়নে রয়েছে বিমানবন্দর, উত্তরা ইপিজেড, বিসিক শিল্পনগরী, ঝুট কাপড়ের শতশত কারখানা, টাইলস ও সিরামিক কারখানা, দেশের বৃহত্তম রেল কারখানা, সেচ কার্যক্রমের দেশের বৃহত্তম তিস্তা ব্যারাজ কমান্ড এলাকা, বাঁশ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, টিটিসি ও যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। আরও রয়েছে নীলফামারীর চিলাহাটি ও ভারতের হলদিবাড়ি হয়ে ব্রডগেজ রেলপথের স্থলবন্দর ছাড়াও বিরাটরাজার বিন্যা দিঘির নীলসাগর, চিনি মসজিদ, গড়, ধর্মপালের রাজধানীসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত নীলফামারী মেডিক্যাল কলেজ, ১১টি সরকারী কলেজ, ৮টি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়। শিল্পনগরী ॥ নীলফামারীর সমৃদ্ধির পথ এখন মসৃণ। ২০ লাখ মানুষের বসবাস জেলাটি এখন অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। চাষাবাদের পাশাপাশি বর্তমান শিল্পে সমৃদ্ধি লাভের অগ্রসরমান ব্র্যান্ডিং অভিযাত্রায় এই জেলা ‘উত্তরের শিল্পনগরী-দীপ্তিমান নীলফামারী’ হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে; যার মূল চালিকাশক্তি হিসেবে জেলাবাসী বর্তমানে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাণভরে দোয়া করেন। স্বাস্থ্য খাত ॥ বর্তমান সরকারের সময়ে নীলফামারীর চিকিৎসা খাত উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নয়ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত ৭ তলা বিশিষ্ট আধুনিক ভবন নির্মাণে বদলে গেছে জেলা সদরের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের চিত্র। গণপূর্ত বিভাগ ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণপূর্ত বিভাগের আওতাধীনে নীলফামারী জেলার যে সকল উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ছিল না যেমন ডিমলা, কিশোরীগঞ্জ, জলঢাকা ও ডোমারের চিলাহাটি স্থলবন্দরে ফায়ার সার্ভিস স্থাপন করে দিয়েছেন। ২০১৫ সালে নীলফামারী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র(টিটিসি), নীলফামারী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের হোস্টেল নির্মাণ, নীলফামারী জেলা সার্ভার স্টেশন ভবন, জেলার ৬ উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, নীলফামারী পুলিশ লাইন্সের বিদ্যমান ৩০০ ফোর্সের ব্যারাক ভবনের চতুর্থ তলার উর্ধমুখী সম্প্রসারণ নির্মাণ কাজ, পুলিশ লাইন্সের মহিলা পুলিশ ব্যারাক ভবন নির্মাণ, সৈয়দপুর রেলওয়ে পুলিশের ব্যারাক ভবন নির্মাণ, নীলফামারী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিদ্যমান দ্বিতীয়তলা থেকে চতুর্থতলা উর্ধমুখী সম্প্রসারণ কাজ, ডিমলা কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার ভবন নির্মাণ, ডিমলা, জলঢাকা, সৈয়দপুর ও নীলফামারীতে কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, নীলফামারী শিল্পকলা একাডেমির নবায়ন, সংস্কার ও মেরামত কাজ, এ জেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করেছেন এবং এই প্রকল্প চলমান রয়েছে। যোগাযোগ খাত ॥ যোগাযোগ খাতের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নীলফামারীর কালিতলা বাসটার্মিনাল থেকে বাদিয়ারমোড় হয়ে পুলিশ লাইন্স পর্যন্ত ৭ দশমিক ৬৪ কিলোমিটার বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া গোটা জেলার ইউনিয়ন থেকে উপজেলা ও উপজেলা থেকে জেলা শহর এবং বিভিন্ন জেলার সঙ্গে সড়ক নেটওয়ার্কের আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। নীলফামারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনজুরুল করিম জানান, ২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বর্তমান সরকারের সময় নীলফামারী জেলার সড়ক, ব্রিজ ও কালভার্ট তৈরি করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয় ৪৮০ কোটি টাকা। এরমধ্যে রয়েছে ৪৪৬.৫৬ মিটার ব্রিজ নির্মাণে ব্যয় হয় ৭৫ কোটি টাকা, ২২৬ মিটার বেশ কয়েকটি কালভার্ট নির্মাণে ব্যয় হয় ৩৭ কোটি টাকা। ২৩৯.১৩ কিলোমিটার নতুন সড়ক ও সংস্কারে ব্যয় হয় ৩৪৮ কোটি টাকা। বর্তমানে নির্মাণ কাজ চলছে ৪১ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়কের। এরমধ্যে সড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতকরণে সৈয়দপুর থেকে নীলফামারী পর্যন্ত ২৭৭ কোটি টাকা ও সড়ক পুনর্বাসন ও মজবুতকরণে নীলফামারী থেকে ডোমার হয়ে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ সীমানা পর্যন্ত ২২০ কোটি টাকা। এ ছাড়া ডোমার-জলঢাকা-নীলফামারী-জলঢাকার সড়ক নির্মাণ সমাপ্ত হয়েছে। এলজিইডি ॥ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) অধীনে জেলাব্যাপী ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৮১৬ কোটি ৯১ লাখ টাকার রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্টসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুজন কুমার কর জানান, গ্রামীণ অবকাঠামো ও রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ ও সম্প্রসারণের কাজ চলমান রয়েছে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার। শিক্ষা খাত ॥ বর্তমান সরকার শিক্ষা ব্যবস্থায় নজিরবিহীন সাফল্য এনেছে। নীলফামারী সরকারী কলেজের ৫ তলা বিজ্ঞান ভবন, ৫তলা ছাত্রী নিবাস, ৫ তলা বিশিষ্ট পরীক্ষার হল রুম, নীলফামারী সরকারী মহিলা কলেজ, নীলফামারী সরকারী বালক ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০ তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। নীলফামারী শিক্ষা প্রকৌশলী দফতরের সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আবু তাহের জানান, বর্তমান সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় একের পর এক নতুন ভবন নির্মাণে বরাদ্দ প্রদান করে যাচ্ছে। এতে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর নীলফামারী জেলায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৪০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় চারতলা ভবন, ৪০টি বিদ্যমান ভবনের চতুর্থ তলা সম্প্রসারণ, ৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চারতলা ভিতসহ একতলা ভবন, ২২টি মাদ্রাসার চারতলা ভিতসহ এক তলা ভবন- ২৪টি মাদ্রাসা চার তলা ভবন, ৬টি বিজ্ঞান শিক্ষা কলেজ ছয়তলা ভবন, ৭টি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজের ৫তলা, টিএসসি ভবন-৬টি, সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫ তলা ভবনসহ মোট প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৯৮ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩৮৯ কোটি ৪৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকার নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। ৭৩ কোটি ২১ লাখ ৯৬ হাজার টাকায় ১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় চারতলা ভবন, ১১টি বিদ্যমান ভবনের সম্প্রসারণ চারতলা ভবন, ১০টি মাদ্রাসার চারতলা ভিতসহ একতলা ভবন, ৫টি মাদ্রাসা চারতলা ভিতসহ একতলা ভবন, ১টিমাদ্রাসা চারতলা ভবন, ২টি সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৫টি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ, ৫টি ৫তলা টিএসসি ভবন সহ ৩৭টি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া চলমান রয়েছে ৩১৬ কোটি ২৮ লাখ ১ হাজার টাকায় ১৬১টি বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ। মেডিক্যাল কলেজ ॥ নীলফামারী জেলা শহরে মেডিক্যাল কলেজ হবে, এটি নীলফামারীবাসীর স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্নটি বাস্তবায়ন করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৮ সালে নীলফামারী মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের ঘোষণা করা হয়। ওই বছরের ডিসেম্বরে ভর্তির কার্যক্রম শেষে ২০১৯ সালের ১০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লাস শুরু করা হয়। জেলা শহর থেকে ৪ কিলোমিটার উত্তরে নীলফামারী-ডোমার সড়কের পাশে ডায়াবেটিক হাসপাতালের দ্বিতল ভবনে চলছে কলেজের শিক্ষার্থীদের পাঠদান। বাঁশ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ॥ মঙ্গা দূরীকরণে বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্যে গ্রামবাংলার বাঁশ শিল্পকেও জাগিয়ে তুলেছে বর্তমান সরকার। আমরা জানি বাঁশের তৈরি পণ্যের কদর কমে গেছে। ঐতিহ্য হারাতে বসেছে বাঁশ নিয়ে তৈরি পণ্য। শিল্পটি রক্ষার পদক্ষেপে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আঞ্চলিক বাঁশ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলা বন বিভাগ চত্বর এলাকায় ২০২০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। উত্তরা ইপিজেড ॥ প্রচ- অভাব ও মঙ্গা চলছিল নীলফামারীতে। মানুষের হাতে নেই কোন কাজকর্ম। বেকারত্ব বাড়ছে। চারদিকে হাহাকার । অনাহার-অর্ধাহারে কচুঘেঁচু খেয়ে মানুষজনের জীবনরক্ষার চেষ্টা। মঙ্গা দূরীকরণে নেই কোন পদক্ষেপ। বিগত সরকারগুলোর মঙ্গা দূরীকরণে কোন পদক্ষেপ না থাকলেও ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। নীলফামারীর মঙ্গা দূরীকরণের পরিকল্পনায় জেলা সদরের সোনারায় ইউনিয়নে ২৩০ একর পতিত জমিকে কাজে লাগিয়ে ফেলা হয়। শুরু হয় ইপিজেড নির্মাণের কর্মযজ্ঞ। এরপর ২০০১ সালের ১ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নীলফামারী এসে এই ইপিজেডের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছিলেন। শুরুতে ইপিজেডে হংকংভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানে চীনারা অর্থ বিনিয়োগ করে। ২০০১ সালের অক্টোবরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন ঘটলে এই ইপিজেডে অন্ধকার নেমে আসে। উত্তরা ইপিজেডকে বন্ধ রাখা হয়। মঙ্গা ও অভাব আবারও মাথা চারা দিয়ে ওঠে। কিন্তু কালের প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা সরকার ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পুনরায় সরকার গঠন করলে ধীরে ধীরে উত্তরা ইপিজেড প্রাণ পেতে থাকে। বর্তমানে উত্তরাঞ্চলের একমাত্র এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডকে নতুন আঙ্গিকে আরও সমৃদ্ধ (সমুন্নত) করতে আরও কিছু প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। টাইলস ও সিরামিক ফ্যাক্টরি ॥ ব্যাংক ঋণের সহায়তায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে ইতালিয়ান ও ভারতীয় ব্র্যান্ডের নীলফামারীতে গড়ে উঠেছে তিনটি সিরামিক ও টাইলস ফ্যাক্টরি। নীলফামারী শহরের নিউ বাবুপাড়ায় রয়েছে সানিটা সিরামিক, রামগঞ্জ নামক স্থানে সানিটা টাইলস ও দারোয়ানী নামক স্থানে গ্লোরি সিরামিক ফ্যাক্টরি। বিমান বন্দর ॥ বর্তমানে ভুটান ও নেপাল নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। এই বিমানবন্দরের মাধ্যমে পণ্য আনা-নেয়ায় আগ্রহী ওই দুটি দেশের ব্যবসায়ীরা। আকাশ পথে সৈয়দপুর থেকে নেপাল ও ভুটান যেতে সময় নেবে মাত্র ১২ থেকে ১৫ মিনিট। অপরদিকে ভারতের দার্জিলিং জেলার বাগডোগরা বিমানবন্দরে যেতে সময় লাগবে ১০ মিনিট। সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তোলার নক্সা তৈরি করা হয়েছে। তিস্তা ব্যারাজ ॥ ১৯৫৩ সালে তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের পরিকল্পনা নেয়া হয়। ১৯৬০ সালে প্রাথমিক এবং ১৯৬৮-৭০ সালে দ্বিতীয় সম্ভাব্য প্রতিবেদন তৈরি করে। পরবর্তী সময়ে নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলায় সেচ সুবিধার স্বার্থে ১৯৭৯ সালে ব্যারাজ এবং ১৯৮৪ সাল থেকে সেচ খালের খনন কাজ শুরু হয়। নীলফামারীর ডিমলা ও লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলা সীমানা বরাবরে তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়) আওতায় নির্মিত হয় সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজ। এর সেচের আওতায় আনা হয় এক লাখ হেক্টর জমি। চিলাহাটি স্থলবন্দর ॥ নীলফামারীর উন্নয়নে সস্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও একটি মাইল ফলক স্থাপন করেছেন। দীর্ঘ ৫৬ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া চিলাহাটি ও ভারতের হলদিবাড়ি স্থলবন্দরের রেলপথ চালু করেছেন। নীলফামারীর মানুষ এটি চালু হওয়ায় আনন্দে আতœহারা। চলতি বছরের ১ আগস্ট হতে এই রেলপথে ভারত থেকে পণ্য আমদানি শুরু হয়েছে। পণ্য পরিবহনে এই আন্তঃদেশীয় রেলপথটি আমদানি ও রফতানিকারকদের কাছে শুরুতেই গুরুত্ব পেয়েছে। রেলওয়ে কারখানা ॥ নীলফামারীর সৈয়দপুরে রয়েছে দেশের বৃহৎ রেলওয়ে কারখানা। এই রেলওয়ে কারখানাটি বর্তমান সরকার আধুনিকায়নের পাশাপাশি আরও একটি রেলওয়ে কারখানা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। ওই কারখানাটিতে তৈরি হবে নতুন রেলওয়ে ক্যারেজ বা কোচ। এরই মধ্যে এর সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হয়েছে। টিটিসি ॥ বেকারদের স্বপ্ন পূরণের সারথি হয়ে উঠছে নীলফামারী সরকারী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি)। প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ও বিদেশে চাকরির সুযোগ পাচ্ছে।
×