ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ২১:৪৬, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

রাজধানীর সড়ক বিভাজকে টুকটাক গাছ লাগাতে দেখা যায়। ফুলের গাছ। পাতা বাহার। এই সব। কিন্তু সবজি বাগানও যে হতে পারে, কে জানত? অথচ তাই হয়েছে। হাতিরপুল কাঁচাবাজার সংলগ্ন সড়ক বিভাজকে চাষ করা হচ্ছে সবজির। সরু জায়গার মাটি প্রস্তুত করে সেখানে নানা জাতের চারা রোপণ করা হয়েছে। এরই মাঝে চোখে পড়ছে ডাঁটা, পুঁইশাক, লেটুসপাতাসহ শীতকালীন নানা সবজি। রাস্তা দিয়ে যাওয়া -আসার সময় অনেকেই কৌতূহল নিয়ে সেদিকে তাকাচ্ছেন। সত্যিই সবজি কিনা, বোঝার চেষ্টা করছেন। এবং অবাক হচ্ছেন শুধু। অভিনব এ উদ্যোগ কাদের? খোঁজ নিয়ে জানা গেল, হাতিরপুল কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীরাই নিয়েছেন এ উদ্যোগ। একজনকে বাগান পরিচর্যা করতেও দেখা গেল। নাম মিনার হোসেন। তিনি বলছিলেন, সড়ক বিভাজকে অনেকে ময়লা ফেলেন। পরিষ্কার করতে না করতেই আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়। দুর্গন্ধ ছড়ায়। তাই বিকল্প হিসেবে সবজি বাগান করার উদ্যোগ। বাজারের সমান্তরাল সড়ক বিভাজকের লম্বা অংশজুড়ে এই সবজি বাগান করা হয়েছে। এত বড় বাগান। একাই করেন? এমন প্রশ্নে তিনি জানান, বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী যে যার মতো করে বাগান করছেন। যার যে অংশ তিনি সে অংশের পরিচর্যা করছেন। এ সবজিও কি বিক্রি করা হবে? জানতে চাইলে তিনি বললেন, ‘দেখা যাক।’ অর্থাৎ, বিক্রি হতে পারে। না-ও হতে পারে। যারা হাতিরপুলে নিয়মিত বাজার করেন তারা খেয়াল রাখুন। অর্গানিক সবজি বলে কথা। বেশি টাকায় কিনলেও ক্ষতি নেই। হাতিরঝিলের মতো জলাধার হবে কল্যাণপুরেও ॥ আজকের ঘনবসতিপূর্ণ ঘিঞ্জি ঢাকায় হাতিরঝিল কত বড় আশীর্বাদ হয়ে ধরা দিয়েছে, প্রতিনিয়ত আমরা তা দেখছি। পুরনো এই ঝিলকে নতুন করে আবিষ্কার করা হয়েছিল। তার পর আজকের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য। বিশাল খোলা প্রাঙ্গণ। বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়ার দারুণ সুযোগ। এমন নির্মল পরিবেশে বার বার ফিরে যেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু হাতিরঝিল তো দুটি নেই। নেই বটে। হতে পারে। হাতিরঝিলের মতো আরেকটি জলাধার নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম। রাজধানীর কল্যাণপুরে দৃষ্টিনন্দন জলাধার নির্মাণ করা হবে বলে গত সোমবার জানিয়েছেন তিনি। গাবতলী বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এ্যাসফল্ট প্লান্টের জমি উদ্ধার ও অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে সিটি কর্পোরেশন। এ ক্ষেত্রে বিরাট সাফল্যও অর্জন করেছে। বিনা প্রতিবন্ধকতায় প্রায় ২০ বিঘা জমি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে শুধু জমি বা জলাভূমি উদ্ধার করা নয়, এগুলোকে রাজধানীবাসীর কাজে লাগাতে হবে। এবং সে চিন্তা নিয়েই সিটি কর্পোরেশন আগাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মেয়র আতিক। তিনি বলেছেন, কল্যাণপুরেও হাতিরঝিলের মতো একটি জলাধার নির্মাণ করা হবে। এতে ওয়াকওয়ে এবং সুইমিংপুল সংযুক্ত থাকবে। কল্যাণপুর জলাধারের জন্য নির্ধারিত ১৭৩ একর জমির মধ্যে ১৭০ একর এবং গাবতলী বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এ্যাসফল্ট প্লান্ট ও অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য নির্ধারিত ৫২ একর জমির মধ্যে অর্ধেকের বেশি অবৈধ দখলদারদের দখলে রয়েছে। বিনা নোটিসেই তাদেরকে উচ্ছেদ করা হবে। তার পর হাতিরঝিলের অনুরূপ জলাধার নির্মাণ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এর চেয়ে ভাল আর কী হতে পারে? এখন সবারই উচিত চমৎকার এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সিটি কর্পোরেশনকে সহায়তা করা। আমরা তা করব তো? ইউনিফর্ম পরা শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস ॥ স্কুল-কলেজ খুলল। শেষ পর্যন্ত খুলল স্কুল, কলেজ। নিঃসন্দেহে বড় খবর। এখনও তাই চলমান আছে আলোচনাটি। গত বছরের ১৬ মার্চ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল স্কুল, কলেজ। তার পর টানা ৫৪৪ দিন। শ্রেণীকক্ষে ফেরা হয়নি শিক্ষার্থীদের। এমন ঘটনা বিস্ময়কর বৈকি। করোনাকালে আরও অনেক কিছুই বন্ধ করা হয়েছে। খুলেও দেয়া হয়েছে মাঝে মধ্যে। স্কুল, কলেজের দ্বার আর খোলা হয়নি। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের জীবন ন্যূনতম শঙ্কার মধ্যে ফেলতে চায়নি সরকার। তাই এমন সিদ্ধান্ত। এ পর্যায়ে এসে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলে গত রবিবার খুলে দেয়া হয় স্কুল, কলেজ। রাজধানীর প্রতিপ্রান্তে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এতদিন খাঁ খাঁ করছিল। আর এখন দারুণ এক উচ্ছ্বাস। হাসিরাশি আনন্দ। গোটা শহরে ছড়িয়ে পড়েছে এই হাসিরাশি। করোনা সংক্রমণের শঙ্কা একেবারে দূর হয়ে গেছে, না, এমন নয়। তবে ঘরবন্দী জীবনও আর মেনে নিতে পারছিল না শিক্ষার্থীরা। তার চেয়ে বড় কথা, শিক্ষা জীবন বড় হুমকির মুখে পড়ে গিয়েছিল। স্কুল, কলেজ খুলে দেয়ায় সে শঙ্কা আপাতত দূর হয়েছে। তাতেই তারা খুশি। কতভাবে যে নিজেদের ভাললাগার কথা প্রকাশ করছে তারা। দেখতে বেশ লাগে। কচিকাঁচারা বলছে, বন্ধের সময় ইউনিফর্ম পরে অনলাইনে ক্লাস করলেও আমরা স্কুলে আসতে পারিনি। কী যে খারাপ লাগত! অটো পাস জুটেছে বটে। তাতে ভেতরে কোন অনুভূতি হয়নি। বরং একটা অস্বস্তি কাজ করছে এখনও। স্কুল, কলেজ খোলার পর পরীক্ষা দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে চায় শিক্ষার্থীরা। তাদের চোখ, মুখ দেখে, উজ্জীবন দেখে আমরাও আশাবাদী। এই আশা জেগে থাক।
×