ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানে অন্তত ২২ জঙ্গী প্রশিক্ষণ শিবির সক্রিয়

প্রকাশিত: ২১:৪৯, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

পাকিস্তানে অন্তত ২২ জঙ্গী প্রশিক্ষণ শিবির সক্রিয়

শংকর কুমার দে ॥ পাকিস্তানের জঙ্গী প্রশিক্ষণ শিবিরে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে বাংলাভাষী জঙ্গীরা। পাকিস্তানের মাটিতে অন্তত ২২টি জঙ্গী প্রশিক্ষণ শিবির সক্রিয়। এর মধ্যে একটি জঙ্গী প্রশিক্ষণ শিবিরেই অন্তত ১৫ জন বাংলাভাষী জঙ্গী প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। এই ধরনের তথ্য দিয়েছে দিল্লী পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া পাকিস্তানে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফেরত আসা জঙ্গীরা। বাংলাভাষী জঙ্গীরা কি বাংলাদেশী নাকি ভারতের বাংলাভাষী সেটি এখনও প্রশ্নবিদ্ধ। আফগানিস্তানে তালেবান উত্থানের পর বাংলাদেশের অন্তত ২০ যুবক ভারত হয়ে পাকিস্তানের ওপর দিয়ে আফগানিস্তানে গেছে এমন তথ্য হাতে রয়েছে ঢাকার পুলিশের। এখন পাকিস্তানের জঙ্গী প্রশিক্ষণ শিবিরে বাংলাভাষী জঙ্গীরা বাংলাদেশ থেকে যাওয়া যুবকরা কিনা তা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হওয়ার পর খোঁজ করছেন ঢাকার গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, দিল্লীতে অন্তত ৬ জন জঙ্গী গ্রেফতার হয়েছে, যার মধ্যে দুজন পাকিস্তানের জঙ্গী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফেরত এসেছে। পাকিস্তান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফেরত আসা দুই জঙ্গী জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, সম্প্রতি ওমান হয়ে পাকিস্তানে গিয়েছিল তারা। পাকিস্তানে ১৫ দিন জঙ্গী প্রশিক্ষণ নিয়ে দুবাই হয়ে দেশে ফিরেছে তারা। ধৃতরা জানিয়েছে, তাদের সঙ্গে ১৪-১৫ বাংলাভাষীও একই রকম প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকতে পারে। প্রশিক্ষণ শিবিরে ওরা বাংলায় কথা বলত, জানাল দিল্লী পুলিশের হাতে গ্রেফতার পাকিস্তান ফেরত জঙ্গীরা। দিল্লী পুলিশ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অভিযান পরিচালনা করে যে ৬ জঙ্গীকে গ্রেফতার করেছে তার মধ্যে দুজন দিন কয়েক আগে পাকিস্তান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরেছিল। প্রাথমিক তদন্তে গোয়েন্দাদের ধারণা, উৎসবের মৌসুমে নাশকতা ঘটানোর পরিকল্পনা ছিল এদের। দিল্লী পুলিশের তরফে মঙ্গলবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়, গোপনসূত্রে খবর পেয়ে দীর্ঘদিন ধরে এই জঙ্গীদের খুঁজছিল পুলিশ। মঙ্গলবার উত্তর প্রদেশ, দিল্লী ও রাজস্থানের বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেফতার করা হয় ৬ জনকে। ধৃত জঙ্গীরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, পাকিস্তানে ১৫ দিন জঙ্গী প্রশিক্ষণ নিয়ে দুবাই হয়ে দেশে ফিরেছে তারা। ধৃতরা জানিয়েছে, তাদের সঙ্গে ১৪-১৫ বাংলাভাষীও তাদের মতো একই রকম প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকতে পারে। তাদের সীমান্তের ওপার থেকে পরিচালনা করা হতো বলে মনে করা হচ্ছে। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক। ওদের লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদ করছেন ভারতের গোয়েন্দারা। কারা জঙ্গীদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ করাল তাও জানার চেষ্টা চলছে। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে বহুদিন ধরেই জঙ্গীদের বিষয়ে এই তথ্য ছিল। গোটা পাকিস্তান জুড়েই বহু জঙ্গী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। তালেবান, লস্কর-ই-তৈয়বা, জৈশ-ই-মহম্মদ ও হিজবুল মুজাহিদিন এদের মধ্যে মুখ্য। পাকিস্তানে সক্রিয় অন্তত ২২টি জঙ্গী ঘাঁটি, দাবি ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার। এর মধ্যে ন’টিই জইশ-ই-মহম্মদের। ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, আফগানিস্তানে তালেবান উত্থানে বাংলাদেশে সক্রিয় উগ্রপন্থীদের নিয়ে নতুন শঙ্কা তৈরি হয়েছে। গোষ্ঠীগুলোকে ঘিরে সতর্কতা-নজরদারি বাড়িয়েছেন গোয়েন্দারা। সীমান্ত এলাকায় নেয়া হয়েছে বাড়তি পদক্ষেপ। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে ২০ জনের মতো যুবক নিখোঁজ হয়ে গেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। নিখোঁজ যুবকদের পরিবারও তাদের খোঁজ পাচ্ছে না। এরা সবাই নব্য জেএমবির সঙ্গে সম্পৃক্ত। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর আশঙ্কা আফগানিস্তানে ‘জিহাদে’ অংশ নিতে চলে গিয়ে থাকতে পারে তারা। এসব ঘটনার পর নিখোঁজদের পরিবারের ওপরও নজরদারি করছে পুলিশ। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, গত আশির দশকে আফগান যুদ্ধে অংশ নিতে বাংলাদেশ থেকে একাধিক জঙ্গী গিয়েছিল। মিশন শেষ হওয়ার পর বেশিরভাগ জঙ্গী দেশে ফেরত এসেছে। তাদের মধ্যে ১০-১২ জন কারাগারে আটক থাকলেও বাকিদের হদিস নেই। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার হওয়া কয়েক জঙ্গীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারা জানায়, তাদের অনেক বন্ধু আফগানিস্তান গেছে। তাদের মধ্যে সিলেটের রাজ্জাকও রয়েছে। রাজ্জাকের ছবি দেখে তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেন। রাজ্জাকের গ্রামের বাড়ি সিলেট। গত ২৫ মার্চ থেকে রাজ্জাক নিখোঁজ ছিল। নিখোঁজ থাকায় ১ এপ্রিল সিলেটের কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তার বড় ভাই সালমান খান। জিডির সূত্র ধরে তদন্ত করা হয়। আমরা অনুসন্ধান করে নিশ্চিত হয়েছি রাজ্জাক আফগানিস্তানে চলে গেছে। তিনি আরও বলেন, রাজ্জাক সিলেট সীমান্ত দিয়ে প্রথমে ভারত যায়। পরে পাকিস্তান হয়ে আফগানিস্তান যায়। রাজ্জাকের পরিবারকে নজরদারি করা হচ্ছে। রাজ্জাক লামাবাজার এলাকায় একটি কলেজে এইচএসসিতে পড়ে। সে নিয়মিত নামাজ পড়ত বলে তার ভাই আমাদের জানিয়েছেন। তার কয়েক বন্ধুও আছে। আমরা ধারণা করছি, তারাও আফগানিস্তান চলে গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, দিল্লী পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া পাকিস্তানের জঙ্গী প্রশিক্ষণ শিবিরে প্রশিক্ষণ নেয়া দুই জঙ্গী জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, বাংলাভাষী অন্তত ১৫ জনকে তারা দেখেছে পাকিস্তানের জঙ্গী প্রশিক্ষণ শিবিরে। এসব বাংলাভাষী জঙ্গীরা কি বাংলাদেশী নাকি ভারতের বাংলাভাষী তার খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। দিল্লীর পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করছে ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থা। কূটনৈতিক চ্যানেলেও খোঁজখবর নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি।
×