ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নতুন অবকাঠামো নির্মাণ নয়

চট্টগ্রামে পরীর পাহাড়ের সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশনা

প্রকাশিত: ২২:১২, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

চট্টগ্রামে পরীর পাহাড়ের সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশনা

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম আদালত ভবনখ্যাত পরীর পাহাড়ে অবৈধ স্থাপনার বিষয়ে হার্ডলাইনে সরকার। আইনজীবী সমিতির নতুন যে দুটি ভবন নির্মাণ নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছে তা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ পর্যন্ত গড়িয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কোর্ট বিল্ডিং এলাকার জমি দখল করে কোন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ যাতে না হয়, এ বিষয়ে নির্দেশনা এসেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো প্রতিবেদনে কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ দোকানপাট, খাবার হোটেল ও মুদির দোকান তৈরি করে ভাড়া আদায় এবং অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সংযোগ অধিশাখা সূত্রে জানা গেছে, নগরীর কোর্ট বিল্ডিং এর অবস্থা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ একটি প্রতিবেদন পাঠায়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি আবারও সরকারের কোন সংস্থার অনুমোদন ব্যতিরেকে সম্পূর্ণ অসৎ উদ্দেশ্যে ‘বঙ্গবন্ধু আইনজীবী ভবন’ ও ‘একুশে আইনজীবী ভবন’ নামে দুইটি ১২ তলা ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে এবং সেখানে ৬শ’টি চেম্বার বরাদ্দে আইনজীবীদের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা করে মোট ১২ কোটি টাকা আদায় করেছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রতিবেদনটিতে জানান হয়, সেখানে আইনজীবী সমিতি চারদিকেই অর্ধশতাধিক অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ দোকানসহ বিভিন্ন স্থাপনা করে ভাড়া দিয়েছে। এসব স্থাপনা অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য। এর কারণে অরাজকতার সুযোগ নেয় অপরাধীরা। এরই সুযোগে ২০১২ সালে কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় জঙ্গী হামলাও হয়েছে উল্লেখ করা হয়। ওই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, কোর্ট বিল্ডিংটি নগরীর কেন্দ্রস্থল পাহাড়ের চূড়ায়। সেখানে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা ও দায়রা জজ আদালতসহ মোট ৭১টি আদালত রয়েছে। জেলা প্রশাসকের নামে সেখানে সরকারের ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত ১১ দশমিক ৭২ একর জায়গায় রয়েছে। সরকারী ভবনের বাইরে ১ নম্বর খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত জায়গায় ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি পাহাড় এবং টিলা কেটে অবৈধভাবে ৫টি ঝুঁকিপূর্ণ বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে। এসব স্থাপনা পাহাড়ধস, ভূমিকম্প, অগ্নিকা- ঝুঁকিতে রয়েছে, যা ইতোমধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এছাড়াও সেখানে অর্ধশতাধিক অবৈধ স্থাপনার কারণে বিভিন্ন অরাজকতা হয়। এ বিষয়গুলোর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আরও আনা হয় সেখানে কিছুদিন আগে আইনজীবীদের বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সিসি ক্যামেরাও অপসারণের বিষয়টি, যার কারণে কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় অপরাধীরাও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ তাদের প্রতিবেদনে আরও জানায়, আইনজীবীদের স্থাপনাগুলোতে গ্যাস বিদ্যুত ও পানির সংযোগও অবৈধভাবে নেয়া হয়েছে। আইনজীবীদের কোন কাজে বাধা দিলে তারা সংঘবদ্ধ হয়ে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেন এবং তারা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ২টি কক্ষ দখলের কথাও জানানো হয়। এসব বিষয় উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ চট্টগ্রামের কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় সরকারী ১ নম্বর খতিয়ানভুক্ত পাহাড়ে থাকা অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ বহুতল স্থাপনা অপসারণ এবং চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি যেন আবারও অবৈধভাবে খাস জমিতে কোন স্থাপনা নির্মাণ করতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুমোদন চায়। প্রধানমন্ত্রীও এমন প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন। এছাড়াও এ বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আইন ও বিচার বিভাগকে নির্দেশনা দেয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও চট্টগ্রাম আদালতসংলগ্ন এলাকায় অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং বাস্তবায়ন অগ্রগতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অবহিত করতে জানানো হয়।
×