ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভেজাল খাদ্যে বাজার সয়লাব, হুমকিতে ভবিষ্যত প্রজন্ম

প্রকাশিত: ২২:১১, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

ভেজাল খাদ্যে বাজার সয়লাব, হুমকিতে ভবিষ্যত প্রজন্ম

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ বগুড়া সদর উপজেলায় কলিন্স কসমেটিকস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কারখানায় ফেয়ার এ্যান্ড লেডি বডি লোশন, ফেয়ার এ্যান্ড লেডি ঘামাচি পাউডার, ফেয়ার এ্যান্ড লেডি মাল্টি ভিটামিন বডি মিল্ক পণ্যসহ বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী উৎপাদন করা হয়। কিন্তু এসব পণ্যের মোড়কে উৎপাদন তারিখ লেখা রয়েছে ২০২২ সালের ২ জানুয়ারি। মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ লেখা রয়েছে ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি। নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ এসব প্রসাধনী দেদারছে বাজারজাত করে আসছিল কলিন্স কসমেটিকস। গত বৃহস্পতিবার বগুড়া র‌্যাব ক্যাম্পের সহকারী কমিশনার সোহরাব হোসেন ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুপম দাস অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানের মালিক আব্দুল মমিনকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদ- প্রদান করেন। শুধু প্রসাধনী নয়; কিছু মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ী খাদ্য, মেডিক্যাল সামগ্রী, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী নকল করে মানহীন পণ্য উৎপাদন, মজুদ ও বিল্ডয় করছে। ক্ষতিকর কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি পণ্য ব্যবহারে বাড়ছে ক্যান্সারের ঝুঁকি। অনেক হোটেল ও রেস্টুরেন্টে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি ও পরিবেশন করা হচ্ছে। খাদ্য উৎপাদনকারী অনেক প্র্রতিষ্ঠান বা রেস্টুরেন্টে কোন ধরনের ফুড প্রসেসিং লাইসেন্স নেই। কোমলমতি শিশুদের খাদ্যও ভেজাল করা হচ্ছে। ক্ষতিকর নানা কেমিক্যাল, রং, পাউডার মিশিয়ে চাটনি, ম্যাংগো, লিচি ও অরেঞ্জসহ বিভিন্ন ধরনের শিশুখাদ্য তৈরি করা হচ্ছে। ভেজাল জাতীয় এসব খাবার খেয়ে লিভার, কিডনি, ক্যান্সারসহ নানান জটিল রোগের ঝুঁকি রয়েছে। মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে খাদ্য একটি প্রধান ও অন্যতম মৌলিক চাহিদা। জীবন ধারণের জন্য খাদ্যের কোন বিকল্প নেই। সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিটি মানুষের প্রয়োজন বিশুদ্ধ ও পুষ্টিকর খাদ্য। আর এ বিশুদ্ধ খাদ্য সুস্থ ও সমৃদ্ধশালী জাতি গঠনে একান্ত অপরিহার্য। কিন্তু বাংলাদেশে বিশুদ্ধ খাবার প্রাপ্তি কঠিন করে ফেলছে কিছু বিবেকহীন ব্যবসায়ী ও আড়তদার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও এদের নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছে। কৃষি তথ্য সার্ভিসের তথ্যানুযায়ী, মাছে ফরমালিন ও ফুলকাতে মেশানো হচ্ছে রঙ। মুড়িতে ব্যবহার করা হচ্ছে ইউরিয়া; চানাচুর ও জিলাপিতে পোড়া মবিল, ট্রান্সফর্মারের তেল ব্যবহার করা হচ্ছে; দুধে ফরমালিন, আটা, গুঁড়া দুধ, ময়দা, চালের গুঁড়া, পাম অয়েল, ঘি/মাখন ব্যবহার করা হয় বনস্পতি বা ডালডা; মিষ্টিতেও ব্যবহার করা হয় ফরমালিন; আখের গুড়ে হাইড্রোজ; কলায় কৃত্রিম হরমোন; বিভিন্ন ফলে ফরমালিন ও কার্বাইড; চালে ইউরিয়া; দই-এ টিস্যু পেপার; পটোল, আলুতে কৃত্রিম রঙ; শুঁটকি মাছে কীটনাশক; চিনিতে ফরমালিন/কেমিক্যাল; আনারসে কৃত্রিম হরমোন বৃদ্ধি সহায়ক, ক্যালসিয়াম কার্বাইড; ফুলকপি ব্লিচিং পাউডার স্প্রে করা হয়। প্রায় ৪ শতাধিক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ॥ ভেজাল, মানহীন ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত প্রায় চার শতাধিক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে র‌্যাব। গত বুধবার দেশব্যাপী ভেজাল, মানহীন খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযানে ওইদিনই দুই শতাধিক অসাধু ব্যবসায়ীর প্রায় কোটি টাকা জরিমানা করেছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। গত বৃহস্পতিবারও ১৩৯ জন অসাধু ব্যবসায়ীকে প্রায় কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। দু’দিনের অভিযানে বিপুল পরিমাণ নকল ও অবৈধ পণ্য ধ্বংস করা হয়েছে। দেশব্যাপী এই অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালাচ্ছি। খাদ্য ও পণ্য নকল করা অসাধু ব্যবসায়ীরা যত প্রভাবশালী হোক না কেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। রাজধানীতে হোটেল রেস্তরাঁ, বেকারি, মিষ্টান্ন, মিনারেল ওয়াটার ফ্যাক্টরি ভেজাল, মানহীন, নিম্নমানের, অপরিষ্কার, অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অহরহ খাবার বিক্রি হচ্ছে। সম্প্রতি বিমানবন্দরে একটি রেস্টুরেন্টে মরা মুরগি জব্দ করেছে এপিবিএন। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের অভিযান তেমন একটা চোখে পড়ছে না। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে সারাদেশে এক হাজার ৫৩০টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। মামলা হয়েছে দুই হাজার ৮৭০টি, দ-িত ব্যক্তির সংখ্যা দুই হাজার ১৯৯ জন এবং কারাদ- দেয়া হয়েছে ১৩১ জনকে।
×