ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

গণটিকা কর্মসূচী ১৪ আগস্ট থেকে

প্রকাশিত: ২২:৪৪, ৬ আগস্ট ২০২১

গণটিকা কর্মসূচী ১৪ আগস্ট থেকে

অপূর্ব কুমার ॥ ইউনিয়ন পর্যায়ে গ্রামাঞ্চলের মানুষের টিকাদানের উদ্যোগ শুরুর আগেই বাধার মুখে পড়েছে। ভ্যাকসিনের স্বল্পতার কারণে সরকার হঠাৎ করেই টিকাদান কর্মসূচীর সময়সীমা ছয় দিন থেকে কমিয়ে এক দিন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুধু ৭ আগস্ট দেশের ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের ১৫ হাজার ২৮৭টি ওয়ার্ডে এক সেশনে দেয়া হবে প্রথম ডোজ। পরবর্তীতে আগামী ১৪ আগস্ট থেকে এই কর্মসূচী পুনরায় শুরু হবে। জানা গেছে, সরকারের কাছে বর্তমানে টিকার মজুদ আছে ৮৯ লাখ ডোজ। এখান থেকেই ৭ আগস্ট প্রথম ডোজ হিসেবে প্রায় ৪৬ লাখ দেয়া হবে। বাকি টিকাগুলো বর্তমানে যেভাবে ও যেসব স্থানে দেয়া হচ্ছে সেখানে ব্যবহার করা হবে। এরপর নতুন করে টিকা আসলে কর্মসূচীর পরিধি আবার বাড়ানো হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার খুরশীদ আলম বলেছেন, গণটিকাদান কর্মসূচীর আওতায় আপাতত ৭ আগস্ট টিকা দেয়া হবে। তারপর সাতদিন বন্ধ থাকার পর আবার তা চালু হবে। তবে চলমান টিকাদান কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, আমাদের বাকি সব পরিকল্পনা ঠিক আছে। লকডাউনের কারণে পরিবহনে সমস্যা। তাই ৭ তারিখ রান টেস্ট, আর ১৪ তারিখ থেকে গণহারে টিকা কার্যক্রম শুরু হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রতিটি ওয়ার্ডে মোট ৩শ’ করে ৪৫ লাখ ৮৬ হাজার ১০০ টিকা দেয়া হবে। এসব কেন্দ্রের বিপরীতে আগাম নিবন্ধনের ভিত্তিতে বয়োবৃদ্ধ, অসুস্থ, নারী, প্রতিবন্ধীরা সুযোগ পাবেন। ১৪ আগস্ট থেকে প্রাপ্তি সাপেক্ষে সারাদেশে ৭ দিনের গণটিকা কর্মসূচী ফের শুরুর সম্ভাবনা আছে। বুধবার রাতে সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠকে অংশ নেয়া এক কর্মকর্তা জানান, টিকা দেয়ার ব্যাপক উদ্যোগ শুরু হওয়ার আগে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের কর্মীরা সরকারকে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বিষয়ে সহায়তা দেবে। কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্যসচিব ডাঃ মোঃ শামসুল হক জানান, টিকাদানের ব্যাপক উদ্যোগ চলাকালে প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে দৈনিক ৬০০ জনকে টিকা দেয়া হবে। ইউনিয়নের ডিজিটাল কেন্দ্রগুলোতে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে এবং এটি শনিবারের আগেই শুরু হবে। স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধিদের সহায়তায় টিকা গ্রহীতাদের এসব কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে। আগামী শনিবার থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে গণটিকা কর্মসূচীর আওতায় এক কোটি ডোজ টিকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও চূড়ান্ত করা হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই গণটিকাদান কর্মসূচীতে কিছুটা পরিবর্তন জনমনে আশঙ্কা বাড়াচ্ছে। কারণ গত মাসে চীনের কেনা টিকা ও কোভ্যাক্স থেকে টিকা পাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় জনগণকে আশাবাদী করে তুলেছিল। দেশব্যাপী করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বাড়ায় টিকা পাওয়াকে স্বস্তি হিসেবে বিবেচনা করছিলেন সবাই। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, গণটিকাদান কর্মসূচীর ব্যাপকতা নির্ভর করছে সময়মতো টিকা দেশে আসার ওপর। তিনি বলেন, আগামী শনিবার টিকা দেয়া হবে। এতে জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সংযুক্ত থাকবে। কর্মসূচীর মূল লক্ষ্য বয়স্কদের টিকার আওতায় আনা। মৃত্যুর হার কমাতে বয়স্কদের টিকা দেয়ার পরিমাণ বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, চীন, ভারত, কোভ্যাক্স এবং রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের টিকার বিষয়ে চুক্তি হয়েছে। এ মাসেই আরও টিকা আসবে। বর্তমানে চীন এবং কোভ্যাক্স থেকে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। এছাড়া ভারতের করোনা পরিস্থিতি আগের তুলনায় উন্নতি ঘটায় চলতি মাসেই সেরাম থেকে টিকা পাঠানোর ইঙ্গিত রয়েছে। আশা করছি, সেরামের চুক্তির টিকা প্রাপ্তিতে আর সমস্যা হবে না। সবকিছুই নির্ভর করছে ভারতের করোনা পরিস্থিতির ওপর। কারণ সেখানকার সরকার ভারতের করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটলে টিকার রফতানি বন্ধ রেখেছে। তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, টিকাদানের মাধ্যমে হার্ড ইমিউনিটি করতে কোন দেশের অন্তত ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে হবে। সেই অনুযায়ী আমাদের কাজ করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ৪ দিন এবং সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৬ দিন ধরে এ কর্মসূচী চালানোর কথা ছিল। এই কর্মসূচী সফল করতে ৫০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নেয়া হয়েছে। ইপিআই কর্মীরা টিকা দেবেন সে প্রস্তুতিও প্রায় চূড়ান্ত, তাদের প্রশিক্ষণও শেষ দিকে রয়েছে। কিন্তু টিকার স্বল্পতার কারণে ৭ দিনব্যাপী কর্মসূচীতে কিছুটা পরিবর্তন আসল। এমন সময় কর্মসূচীটি সীমিত করে শুধু শনিবার একদিন চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। এতে ইউনিয়ন পর্যায়ে ১৩ হাজার ৮০০ ওয়ার্ডে ৪ দিনে ৫৫ হাজার ২০০ সেশনে ২০০ ডোজ করে ১ কোটি ১০ লাখ ৪০ হাজার টিকা দেয়ার কথা ছিল তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। কর্মসূচীর পরিকল্পনা অনুসারে, দেশের পৌরসভাগুলোর ১০৫৪টি ওয়ার্ডে ৪ দিনে ৪২১৬টি সেশনে ২০০ ডোজ করে ৮ লাখ ৪৩ হাজার ২০০ ডোজ এবং সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৪৩৩টি ওয়ার্ডে ৬ দিনে ৭৭৯৪ সেশনে ২০০ ডোজ করে ১৫ লাখ ৫৮ হাজার ৮০০ ডোজ দেয়ার কথা ছিল। জানা গেছে, দেশে ১১ কোটি ৭৮ লাখ ৫৬ হাজার মানুষকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ মোট জনগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশ। এ পর্যন্ত নিবন্ধনের আওতায় এসেছেন ১৪ শতাংশ বা এক কোটি ৬৫ লাখ ২৩ হাজার ২৭০ জন। সারাদেশে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৯৩ লাখ ৯৮ হাজার ৭৭৩ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪৩ লাখ ৬৫ হাজার ৩৮৯ জন। অর্থাৎ প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৮ শতাংশ এবং দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন মাত্র ৪ শতাংশ। টিকা গ্রহীতার হার প্রথম ডোজপ্রতি ১০০ জনে ৫ দশমিক ৪৪ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ ২ দশমিক ৫২ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, অক্সফোর্ডের এ্যাস্ট্রাজেনেকার ফর্মুলায় ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি কোভিশিল্ড, চীনের তৈরি সিনোফার্মা, ফাইজার এবং মডার্নার টিকা এখন পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদফতর সারাদেশে ৩ লাখ ২২ হাজার ৪৪৩ ডোজ টিকা দিয়েছে। এদিন এ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১১ হাজার ৮৯৮ জন। এখন পর্যন্ত এ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৮ লাখ ২০ হাজার ৫৩ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪৩ লাখ ১৮ হাজার ৭৮৫ জন। ফাইজারের প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে প্রায় ৫৩ হাজার। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন এক হাজার ২৬ জন। সব মিলে ফাইজার দেয়া হয়েছে ৫৪ হাজার ৪৪৯ ডোজ। মডার্নার টিকা এখন পর্যন্ত দেয়া হয়েছে ৯ লাখ ২৬ হাজার ২৬৩ ডোজ, শুধু মঙ্গলবার দেয়া হয়েছে ৮২ হাজার ৫৪ ডোজ। সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, তারা অন-স্পট বা তাৎক্ষণিক নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করছেন। একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, মানুষ অন-স্পট নিবন্ধন করে তাৎক্ষণিকভাবে ভ্যাকসিনের ডোজ নিতে পারবে। বুধবারে রাতের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধিরা তাদের এলাকার মানুষের কাছে টোকেন দিতে পারবেন, যে টোকেনটি দেখিয়ে তারা নির্দিষ্ট দিনগুলোতে টিকা নিতে পারবেন। এই কর্মকর্তা আরও জানান, এ সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছে যাতে টিকা কেন্দ্রে কোন বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয়। ভ্যাকসিনের ডোজের স্বল্পতার কারণে গণটিকাদান কর্মসূচী প্রায় দুই মাসের জন্য স্থগিত ছিল। ২৬ এপ্রিল বাংলাদেশে প্রথম ডোজের টিকা দেয়া স্থগিত করা হয়। এর নয় দিন পরে নিবন্ধন প্রক্রিয়াও স্থগিত করে দেয়া হয়। ১৯ জুন থেকে সরকার সীমিত আকারে প্রথম ডোজের টিকা দেয়া শুরু করে এবং পর্যায়ক্রমে এর আওতা বাড়ানো হয়েছে।
×