ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

রামপালে বিলুপ্তপ্রায় রাজ কাঁকড়ার সন্ধান

প্রকাশিত: ২২:১৯, ৬ আগস্ট ২০২১

রামপালে বিলুপ্তপ্রায় রাজ কাঁকড়ার সন্ধান

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ রামপাল উপজেলার একটি মৎস্য ঘেরে বিলুপ্তপ্রায় রাজ কাঁকড়া পাওয়া গেছে। উপজেলার কালিগঞ্জ গ্রামের আমানুল্লাহ নামের এক ব্যক্তির মৎস্য ঘেরে গত ৩১ আগস্ট এ কাঁকড়াটি পাওয়া যায়। কাঁকড়াটি জোয়ারের পানিতে সাগর থেকে ভেসে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সঙ্কটাপন্ন প্রজাতির কাঁকড়াটিকে ফরমালিন দিয়ে বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে সংরক্ষণ করা হবে বলে বৃহস্পতিবার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল জানান। তিনি আরও বলেন, রাজ কাঁকড়া সাধারণত আমাদের এলাকায় পাওয়া যায় না। কালেভদ্রে যৌন সঙ্গমের জন্য সমুদ্র থেকে এদের ডাঙ্গায় আসতে দেখা যায়। গত ৩১ আগস্ট রামপাল উপজেলার কালিগঞ্জ গ্রামের আমানুল্লাহ নামের এক ব্যক্তির মৎস্য ঘেরে কাঁকড়াটি পাওয়া যায়। খবর পেয়ে আমরা কাঁকড়াটি সংগ্রহ করি। এটি এখন মৃতপ্রায় অবস্থায় রয়েছে। এটি মারা গেলে আমরা ফরমালিন দিয়ে সংরক্ষণ করে রাখব। কাঁকড়াটি সমুদ্র থেকে জোয়ারের পানিতে ভেসে এসেছে বলে ধারণা করছি। এ কাঁকড়াকে জীবন্ত জীবাশ্মও বলা হয়। কারণ ৪৪ কোটি ৫০ লাখ বছর আগেও পৃথিবীতে এদের অস্তিত্ব ছিল। ডাইনোসরের চেয়েও প্রায় ২০ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে এসেছিল এ লিমিউলাস। তাই এ জলজ প্রাণীটি বিজ্ঞানীদের কাছে আজও বিস্ময়ের। অশ্বক্ষুরের মতো দেখতে উপবৃত্তাকার কাঁকড়াটির ইংরেজী নাম Mangrove Horseshoe Crab। এর বৈজ্ঞানিক নাম Carcinoscorpius Rotundicauda। আমাদের দেশে এটি রাজ কাঁকড়া হিসেবে বেশি পরিচিত। এটিকে কাঁকড়া বলা হলেও প্রজাতিগত দিক থেকে মাকড়সার সঙ্গে বেশি মিল রয়েছে এটির। এরা লিমুলিডি গোত্রের অন্তর্গত সামুদ্রিক সন্ধিপদী প্রাণী। এরা প্রধানত অগভীর সমুদ্র ও নরম বালু বা কাদাসমৃদ্ধ সমুদ্রতলে বাস করে। কালেভদ্রে যৌন সঙ্গমের জন্য এদের ডাঙ্গায় আসতে দেখা যায়। জন্মের সময় সাত থেকে আট সেন্টিমিটার এ প্রাণিটি প্রায় আট বছর কাদামাটি বা নরম বালুর নিচে থাকে। ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা হলে তারা অগভীর সমুদ্রে চলে যায়। পরিপক্ব অবস্থায় এটি ৪০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এর মাথায় একটি শুঁড়ের মতো রয়েছে। এর খোলস বেশ শক্ত। এটি সার তৈরির কাজেও ব্যবহৃত হতো এক সময়। এ কাঁকড়ার নীল রক্ত অতন্ত মূল্যবান। এ রক্তের অসাধারণ ক্ষমতাবলে লিমিউলাস বা অশ্বক্ষুরাকৃতি কাঁকড়ারা যে কোন ধরনের ব্যাকটেরিয়া এবং বিষাক্ত পদার্থ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে। তাই চিকিৎসা বিজ্ঞানে এদের গুরুত্ব অপরিসীম।
×