ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

পুনরায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের পথে চীন

প্রকাশিত: ২১:৫৩, ৩ আগস্ট ২০২১

পুনরায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের পথে চীন

জাহিদুল আলম জয় ॥ আবারও মার্কিন সাম্রাজ্য গুঁড়িয়ে দিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম ক্রীড়া আসর অলিম্পিকে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে চলেছে চীন। এশিয়ার এই গর্বের প্রতীক সোমবার দশম দিন শেষে গেমসের ইতিহাসের সেরা সাফল্যের দেশ যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে স্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে গেছে। এ ধারা ধরে রাখতে পারলে ২০০৮ বেজিং আসরের পর আবারও অলিম্পিকে এক নম্বর স্থান দখল করবে চাইনিজরা। নিজেদের মাঠে ১৩ বছর আগে প্রথমবারের মতো সেরা হয়েছিল চীন। কিন্তু পরের দুই আসর অর্থাৎ ২০১২ লন্ডন ও ২০১৬ রিও অলিম্পিকে আবারও শ্রেষ্ঠত্ব ফিরে পায় যুক্তরাষ্ট্র। পাঁচ বছর আগে ব্রাজিলের রিও আসরে প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে থেকে সবার সেরা হয়েছিল মার্কিনীরা। সেবার ৪৬ স্বর্ণ, ৩৭ রৌপ্য ও ৩৮ ব্রোঞ্জসহ মোট ১২১টি পদক জিতে এক নম্বর হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। পেলে-নেইমারদের দেশে দ্বিতীয়ও হতে পারেনি চীন। তৃতীয় স্থান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল। এ পথে চীনের ভান্ডারে জমা হয়েছিল ২৬ স্বর্ণ, ১৮ রৌপ্য, ২৬ ব্রোঞ্জসহ মোট ৭০টি পদক। সেবার ২৭ স্বর্ণ, ২৩ রৌপ্য, ১৭ ব্রোঞ্জসহ মোট ৬৭টি পদক জিতে দ্বিতীয় হয়েছিল গ্রেট ব্রিটেন। কিন্তু এবার টোকিও অলিম্পিকে আরেকবার সব হিসেব-নিকেশ পাল্টে দিচ্ছে চীন। গেমসের অর্ধেকেরও বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। আর বাকি আছে মাত্র ছয় দিন। এরই মধ্যে গতকাল এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ২৯ স্বর্ণ, ১৭ রৌপ্য ও ১৬ ব্রোঞ্জসহ মোট ৬২টি পদক জিতে এক নম্বরে অবস্থান করছে চীন। ২২ স্বর্ণ, ২৫ রৌপ্য ও ১৭ ব্রোঞ্জসহ মোট ৬৪টি পদক জিতে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র। বেশ কয়েকটি ইভেন্টে বিশেষ করে সাঁতারে আগের আসরের ৫টি স্বর্ণপদক হাতছাড়া করে এবার পিছিয়ে পড়েছে মার্কিনীরা। গতবার দ্বিতীয় হওয়া গ্রেট ব্রিটেনের অবস্থা এবার বেশ নাজুক। ১১ স্বর্ণ, ১২ রৌপ্য ও ১২ ব্রোঞ্জপদকসহ দেশটি এখন পর্যন্ত জিতেছে ৩৫টি পদক। আর স্বাগতিক জাপান ১৭ স্বর্ণ, ৬ রৌপ্য, ১০ ব্রোঞ্জসহ ৩৩টি পদক জিতে তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে। চীনের বেজিংয়ে অনুষ্ঠিত ২০০৮ সালের অলিম্পিকে মার্কিন সাম্রাজ্য গুঁড়িয়ে দিয়ে প্রথমবারের মতো শ্রেষ্ঠত্ব নিজেদের করে নিয়েছিল এশিয়ার গর্বের প্রতীক চীন। সেবার ৫১ স্বর্ণসহ ১০০টি পদক জিতে সবার সেরা হয়েছিল বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটি। মোট ১১০টি পদক জিতলেও স্বর্ণসংখ্যা (৩৬) কম হওয়ায় দ্বিতীয় হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। অর্থনীতি, রাজনীতি, ক্রীড়াঙ্গন সর্বক্ষেত্রে পরাশক্তি হয়ে ওঠা চীন অলিম্পিকে নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি সোনা জিতে বিশ্বকে বিমোহিত করে দিয়েছিল। অলিম্পিকের ইতিহাসে এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে পঞ্চাশটিরও বেশি স্বর্ণ জিতে চ্যাম্পিয়নের মর্যাদা পায় মাওসেতুংয়ের দেশ। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিন অলিম্পিকে রাজত্ব করা আমেরিকার আধিপত্যকে খর্র্ব করতে সক্ষম হয়েছিল চীন। মার্কিনীদের টুঁটি চেপে ধরে তাদের সমস্ত গৌরবকে ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছিল এশিয়ার সুপার পাওয়াররা। দীর্ঘদিন একটা আপ্তবাক্য সবাই মেনে নিয়েছিল-অলিম্পিক মানেই যুক্তরাষ্ট্রের নিরঙ্কুশ শ্রেষ্ঠত্ব। বেজিং অলিম্পিকের আগে এক যুগ অর্থাৎ টানা তিন আসরে এর প্রমাণও তারা রেখেছিল। মার্কিনীদের এই একতরফা আধিপত্যের কারণ ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন। ১৯৯২ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর বলতে গেলে ফাঁকা পোস্টেই গোল করে চলেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এই সময়ে তাদের সাথে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ার দুঃসাহসই কেউ দেখাতে পারেনি! অনেকদিন থেকেই সোভিয়েতদের শূন্য জায়গাটা দখলের জন্য মরিয়া হয়ে কাজ করছিল চীন। বিশ্ব রাজনীতির মাধ্যমে যার শুরু। ২০০৮ অলিম্পিকের দায়িত্বটা পাওয়ার পর থেকে এটি প্রসারিত হয়ে ক্রীড়াঙ্গনেও ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলাফল কি হয়েছে তা বিশ্বের সামনে উন্মোচিত হয়েছে। চীন এখন বিশ্বরাজনীতি কিংবা অলিম্পিক যাই বলুন না কেন, সর্বক্ষেত্রেই মার্কিনীদের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মোড়লীপনা থেকে রেহাই পেতে বিশ্বের শান্তিপ্রিয় জনগণ এমন একটি শক্তির প্রত্যাশা করছিল! অবশেষে তা পূর্ণতা পায় বেজিং অলিম্পিকে সাফল্যের মধ্য দিয়ে। কিন্তু পরের দুই আসরে সাফল্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারেনি দেশটি। তবে এবার প্রতিবেশী দেশ জাপানে মাঠ মাতিয়ে চলেছেন চাইনিজ এ্যাথলেটরা। যার ফলশ্রুতিতে আরেকবার মার্কিন রাজত্ব গুঁড়িয়ে দিয়ে শীর্ষস্থানও অর্জন করতে চলেছে এশিয়ার সুপার পাওয়াররা।
×