ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভারি বর্ষণে বিপর্যস্ত চট্টগ্রাম নগরী, লালখানে পাহাড় ধস

প্রকাশিত: ২৩:০৪, ৩০ জুলাই ২০২১

ভারি বর্ষণে বিপর্যস্ত চট্টগ্রাম নগরী, লালখানে পাহাড় ধস

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ শ্রাবণের ভারি বর্ষণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম। এর সঙ্গে রয়েছে সামুদ্রিক জোয়ার। ফলে নিমজ্জিত হয়েছে মহানগরীর অনেক এলাকা। পানির নিচে ডুবেছে সড়ক ও বহু বাড়ির নিচতলা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘরের আসবাবপত্র এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল। গত কয়েক দিনের ধারাবাহিক বৃষ্টিতে নাকাল অবস্থা। এর মধ্যে বৃহস্পতিবারের বৃষ্টিপাত ছিল মুষলধারে। ফলে বন্দরনগরীতে দুর্ভোগের মাত্রাও ছিল বেশি। এদিন আরও বেশি পানিতে ডুবেছে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল এবং নগরীর অলিগলি। কোথাও হাঁটু পানি, আবার কোথাও বা কোমর পানিতে সয়লাব। মহানগরীর লালখান বাজার এলাকায় হয়েছে পাহাড়ধস। তবে লোকালয় না থাকায় কোন প্রাণহানি ঘটেনি। সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে ক’দিন ধরে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তবে বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার দিনভর ছিল বর্ষণ। সূর্যের আলোর দেখা মেলেনি। থেমে থেমে এই বর্ষণের মাত্রা ছিল অতিভারি। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় অচলাবস্থা দেখা দেয়। প্রধান সড়কের নিচু অংশ এবং অলিগলি চলে যায় পানির নিচে। এতে করে রিক্সা চলাচলও কঠিন হয়ে পড়ে। লকডাউনের মধ্যেও যাদের কর্মস্থলে যেতে হয়, তাদের পড়তে হয়েছে সাংঘাতিক ভোগান্তিতে। একান্ত নিরুপায় অবস্থায় একটি রিক্সা পাওয়া গেলে তার জন্য ভাড়া গুনতে হয় স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত তিনগুণ। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ১৬৬ মিলিমিটার, যা ভারি বর্ষণ। পূর্বাভাস অনুযায়ী এদিন সারারাত এবং পরদিন শুক্রবারও একটানা বর্ষণ অব্যাহত থাকবে। মাঝেমধ্যে কিছুক্ষণের বিরতি থাকলেও এ বর্ষণ হবে মাঝারি থেকে ভারি। সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর এবং নদীবন্দরসমূহকে ২ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। অতি বর্ষণের কারণে মাটি নরম হয়ে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটতে পারে। একটানা বর্ষণের কারণে ডুবে গেছে নগরের নিচু এলাকাগুলো। এর মধ্যে আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, ছোটপুল, হালিশহর, শুলকবহর, ষোলশহর, মুরাদপুর, চকবাজার, খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই, বহদ্দারহাট, কাতালগঞ্জসহ কিছু এলাকায় দুর্ভোগ হয়েছে ভয়াবহ। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম পরিচালনায় ভোগান্তি যেন অতীতের সকল মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। নিচতলায় সেবা কাজ চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। আশপাশের সড়কগুলো কোমর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় রোগী এবং স্বজনদের কষ্ট অবর্ণনীয়। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে চাক্তাই খাতুনগঞ্জের একটি বড় এলাকা। অনেক গুদাম ও আড়তে পানি ঢুকে পড়ায় বিনষ্ট হয় ভোগ্যপণ্য। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এমন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া তাদের নিয়তিতে পরিণত হয়েছে। প্রতিবছরই আশ^াসবাণী শুনলেও এ বাণিজ্য পাড়ার দুঃখ যেন নিত্যসঙ্গী। খালগুলো পরিষ্কার না থাকায় এবং খালের মুখে সুইসগেট না হওয়ায় বৃষ্টি এবং জোয়ার উভয় কারণেই পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ। এদিকে একটানা বৃষ্টিপাতে মাটি নরম হয়ে লালখান বাজার এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে অবস্থিত জমিয়তুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসা (লালখান বাজার মাদ্রাসা) সংলগ্ন বায়তুল আমান হাউজিংয়ের পাশে একটি পাহড়ের একাংশ ধসে পড়ে। খবর পেয়ে দ্রæত ছুটে যায় ফায়ার সার্ভিসের টিম। তবে সেখানে লোকালয় বা বসতি না থাকায় প্রাণহানির আশঙ্কা নেই। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছিল। খালের মুখে সুইসগেটই সমাধান ॥ চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে শুধু খাল সম্প্রসারণ, খনন বা সংস্কারই প্রধান কাজ নয়। এর পাশাপাশি সাগরের জোয়ারের পানি প্রবেশ ঠেকানো জরুরী। কারণ বর্ষাকালে বৃষ্টির সঙ্গে জোয়ার মিলে পরিস্থিতি হয় ভয়াবহ। বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের আওতাধীন ১৭টি সুইসগেট এখনও বসেনি। ফলে খাল দিয়ে কোন রকমে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশিত হলেও জোয়ারের পানি ঠেকানো যাচ্ছে না। প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জলাবদ্ধতা নিরসনে যে কাজ চলছে তাতে ১৭টি সুইসগেট বসবে। অত্যাধুনিক বিশেষায়িত এই সুইসগেটগুলো আসবে নেদারল্যান্ডস থেকে। কিন্তু করোনার কারণে তা পেতে বিলম্ব হচ্ছে। এর মধ্যে আগামী নবেম্বরের মধ্যে ৫টি গেট বসানো সম্ভব হবে বলে আশা করছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) কর্মকর্তারা। বাকি ১২টি সুইসগেট বসতে সময় জানুয়ারি মাস পর্যন্ত গড়াতে পারে। সুইসগেটগুলো যদি স্থাপিত হয়ে যায় তাহলে চট্টগ্রাম আর এভাবে ডুববে না। চলমান ৫ হাজার ৬শ’ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ শেষ না হলেও মহানগরীর খালগুলো পরিষ্কার না থাকার জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে দুষছেন নাগরিকরা। প্রায় প্রতিটি খালই পলিথিনসহ আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। অতিবর্ষণ হলে এসব খাল উপচে পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। জলাবদ্ধতার জন্য সিটি মেয়র খালের মুখের বাঁধকে দায়ী করলেও সেগুলো পরিষ্কার নয় কেন, এ প্রশ্নের কোন উত্তর মিলছে না। চউকের প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাল পরিষ্কার রাখা কর্পোরেশনের কাজ। সমন্বিত কার্যক্রম না হলে যত বড় প্রকল্পই বাস্তবায়িত হোক না কেন, জলাবদ্ধতা থেকে নিস্তার পাওয়া সহজ হবে না। উখিয়া রাজাপালং-রত্নাপালং সংযোগ সড়ক বিচ্ছিন্ন ॥ সংবাদদাতা, উখিয়া, থেকে জানান, টানা বৃষ্টিতে উখিয়া ডাকবাংলো গরুবাজার হয়ে কোর্টবাজার মরিচ্যা প্রধান হাইওয়ের সংযোগ সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছে উখিয়াগামী পূর্বাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ ও বৃহত্তর রত্নাপালং গয়ালমারা, চাকবৈঠা ও ভালুকিয়াবাসী। জানা যায়, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের অর্থায়নে দুটি প্যাকেজে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে উখিয়ায় অতি জনগুরুত্বপূর্ণ ১০টি ব্রিজের কাজ শুরু হয়। তার মধ্যে রাজাপালং ও রতœাপালংয়ের মাঝামাঝি ডাকবাংলো সড়কের গয়ালমারা কালভার্টও রয়েছে। কালভার্টি নির্মাণ করতে টিকাদার তৎসময়ে যাতায়াত কালভার্টটিতে কাজ শুরু করেন। এতে যাতায়াত ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেলে কোনমতে মানুষ পারাপারের জন্য ছোট একটি বাঁশের সাঁকো বানিয়ে দেন তিনি। সোমবার থেকে টানা ভারি বর্ষণে সেই বাঁশের সাঁকোটিও তলিয়ে যায়। মরিচ্যা হতে টেকনাফ মেইন রোড়ের বিকল্প সড়ক হিসেবেও এটি ব্যবহার করা হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, বিকল্প কোন যাতায়াত ব্যবস্থা না করে ঠিকাদার অপরিকল্পিতভাবে কালভার্ট নির্মাণ করতে পারাপার ব্যবস্থা বন্ধ করে জনদুর্ভোগে ফেলে দিয়েছে। বর্তমানে কাজ বন্ধ থাকায় ঠিকাদারও চলাচলকারী সাধারণের খবর নিচ্ছে না বলে জানা গেছে।
×