ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজধানীর মোড়ে মোড়ে রীতিমতো যানজট

প্রকাশিত: ২৩:৩৬, ২৯ জুলাই ২০২১

রাজধানীর মোড়ে মোড়ে রীতিমতো যানজট

আজাদ সুলায়মান ॥ কঠোর বিধিনিষেধের সার্বিক পরিস্থিতি ঢিলে হয়ে পড়ছে। গত পাঁচ দিনের তুলনায় ষষ্ঠ দিনে সড়কে জনমানুষের চলাচল অনেকটাই বেড়েছে। আগের দিনগুলোর তুলনায় বেড়েছে ব্যক্তিগত যানবাহনের চলাচলও। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট দেখে লুকোচুরি করে রাজধানীতে বেশকিছু অটোরিক্সা চলাচল করতে দেখা যায়। পাড়া-মহল্লার ওলিগলিতে ব্যাপকহারে চলাচল করেছে রিক্সা ও অটোরিক্সা। কয়েকটি এলাকায় দেখা গেছে দোকানও খোলা। যাত্রাবাড়ীর সড়কে ছিল কয়েকটি বাসেরও চলাচল। কলা কেনা, টিভি মেরামত বা পাওনা টাকা আদায়ের অজুহাতে মানুষের বের হওয়ার যুক্তি দেখাতে দেখা যায়। মোড়ে মোড়ে যানজটও লেগে গেছে। এদিন বিধিনিষেধ অমান্য করায় ৫৬৬ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়- নানা কারণে মানুষজন একস্থান থেকে অন্যস্থানে চলাচল করছে। পাড়া-মহল্লায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে লুকোচুরি করেই দোকানপাট খুলেছেন অনেকে। পুলিশ, র‌্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কারও গাড়ি দেখলেই দোকানের শাটার ফেলে দিচ্ছেন দোকানিরা। চলে যাওয়ার পর আবার খুলছেন। বুধবার কঠোর লকডাউনের ষষ্ঠ দিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। এদিন বিভিন্ন চেকপোস্টগুলো ঘুরে দেখা গেছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সড়কে চলাচলকারী সবাইকে তল্লাশি ও জবাবদিহি করছেন। তাই অনেকে পাড়া-মহল্লার ভেতরের পথ দিয়ে একস্থান থকে অন্যস্থানে যাচ্ছেন। দেখা গেছে, লকডাউনের পরেও যেসব কাজ করলে চলবে এমন অনেক কাজ ও কারণ দেখিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে উপস্থাপন করছে মানুষজন। অনেকে টেলিভিশন মেরামত করতে যাচ্ছেন, কেউ আবার একাধিকজন নিয়ে ব্যাংকে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করেই বাইরে বের হচ্ছেন অনেকে। কেউ আবার কাঁচাবাজার কেনার জন্য নিজের মহল্লা ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে হাজির। ধরা পড়ার পর সব ফাঁস হয়। তবে বুধবারও দেখা গেছে র‌্যাব, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের তৎপরতা। মতিঝিল এলাকায় বাইরে বের হওয়া ও স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে মোট ১৮ জনকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে র‌্যাব প্িরচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, কঠোর লকডাউনে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ যানবাহন নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছে কিনা, প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে মানুষ রাস্তায় চলাচল করছেন কিনা, সেগুলো কঠোরভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। ঘর থেকে বের হওয়া মানুষের কাছে সন্তোষজনক জবাব না পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। দুপুরে দেখা যায়, হাতিরঝিল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যক্তিগত গাড়িগুলো। সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে হাতিরঝিলের গুলশান, বাড্ডা ও এফডিসি মোড়ের দিকে কিছুটা গাড়ির জটলাও দেখা গেছে। যদিও হাতিরঝিলে প্রবেশ ও বের হওয়ার প্রায় সব পয়েন্টে রয়েছে পুলিশের চেকপোস্ট। রাস্তায় পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও মোতায়েন রয়েছে। যদিও বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ প্রাইভেটকার থামিয়ে পরিচয়পত্র যাচাই করছিলেন। তবে সেখানে কোন গাড়িকে আটকে দিতে বা ফিরিয়ে দিতে দেখা যায়নি। হাতিরঝিলের রামপুরা পয়েন্টে দায়িত্বরত এক পুলিশ সার্জেন্ট বলেন, আমরা তো জনগণকে কতভাবে বোঝাচ্ছি। কিন্তু তারা কোন কথা শুনবে না। নানা অজুহাতে বের হবেই। মামলা করেও ব্যর্থ আমরা। এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় হাতিরঝিল থেকে বের হতে গুলশান পর্যন্ত যানজট ছিল। রামপুরা থেকে মহানগর ব্রিজ হয়ে নিকেতন পর্যন্ত গাড়ির চাপ ছিল বেশি। সেখানে প্রাইভেটকার ছাড়াও মোটরসাইকেল ও কয়েকটি সিএনজি দেখা যায়। এসব যানবাহন দেখে বোঝার উপায় নেই যে এখন কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। গুলশানের প্রবেশ পথে পুলিশের চেকপোস্টে গাড়ি আরোহীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন কয়েক পুলিশ ও আনসার সদস্য। ধীর গতির কারণে কিছুক্ষণ পরপরই ওই এলাকায় গাড়ির জটলা বেঁধে যাচ্ছে। একই অবস্থা এফডিসির মোড় ও বাড্ডা এলাকায়। তবে অফিস শুরুর পর হাতিরঝিলের ভেতরের রাস্তা এবং ব্রিজগুলো অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যায়। এ সময় অনেক পথচারী হেঁটে বিভিন্ন এলাকায় চলাচল করেন। হাতিরঝিলের এ চাপ আবার বাড়বে বিকেলে অফিস থেকে লোকজন ফিরতে শুরু করলে। এদিকে পাশের রামপুরা এলাকায় হাজীপাড়া পর্যন্ত গাড়ির চাপ বেশি দেখা গেছে। রামপুরা ডিআইটি রোডে অস্থায়ী স্পিড ব্রেকার বসিয়ে চেকপোস্ট তৈরি করা হলেও সেখানে কাউকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি। সেখানে থেমে থেমে গাড়ি ও রিক্সা চলায় তৈরি হচ্ছে যানবাহনের জটলা। বিধিনিষেধের শুরুতে এইসব এলাকার চেকপোস্টগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যে তৎপরতা ছিল সেটা এখন তেমন দেখা যায়নি। বেশিরভাগ গাড়ি তল্লাশি না করে চেকপোস্ট থেকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। মতিঝিলে আব্দুল কাদের নামে এক ব্যক্তি পল্টন থেকে ফিরছিলেন। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, কলা কিনতে বাইরে বের হয়েছেন। কারণ যৌক্তিক মনে না হওয়ায় তাকে দুইশ’ টাকা জরিমানা করা হয়। একই সময় দেখা যায়, সজীব আহমেদ নামে যাত্রাবাড়ীর এক বাসিন্দা রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকা থেকে টেলিভিশন মেরামত শেষে বাসায় ফিরছিলেন। ফেরার পথে র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হন তিনি। জরুরী কাজ ছাড়া বের হওয়ায় তাকে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা দেয়া সজীব আহমেদ বলেন, গতকাল হঠাৎ টেলিভিশনটি নষ্ট হয়ে যায়। লকডাউনে বাসায় টেলিভিশন ছাড়া সময় কাটে না। এ কারণে সকালে মেরামত করতে বের হয়েছিলাম। কিন্তু পথে র‌্যাব জরিমানা করল। এদিকে বিধিনিষেধের মধ্যে পরিচয়পত্র ছাড়া বের হওয়ায় পাঁচ শ’ টাকা জরিমানা গুনতে হয়েছে ই-কমার্স সাইটের কর্মী তানভীর সুমনকে। জরুরী নয়, এমন কাজে বের হওয়া এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানায় র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত ১৮ জনকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। অভিযান শেষে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, সরকারের নির্দেশনায় কঠোর লকডাউন চলছে। এ সময় অত্যাবশ্যক প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। সরকার যে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে, তা কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি জীবিকা নিশ্চিতের জন্য। লকডাউনের কারণে হয়ত সাময়িক সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু এর দীর্ঘমেয়াদি ফল রয়েছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে আমরা কঠোরভাবে সরকারী বিধিনিষেধ নিশ্চিতের চেষ্টা করছি। বেলা এগারোটার সময় সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়- যাত্রাবাড়ীর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বেশ ঢিলে অবস্থা। বিপুল সংখ্যক গাড়ির চলাচল। সকাল থেকে মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে বিপুল সংখ্যক প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, রিক্সা, যাত্রীবাহী ভ্যান চলাচল করতে দেখা গেছে। এতদিন ধরে চোখে না পড়লেও এখন এ মহাসড়কে দেখা মিলছে বাসেরও। যাত্রাবাড়ীর এ মহাসড়ক এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতাও ছিল ঢিলেঢালা। শনির আখড়া, রায়েরবাগসহ বিভিন্ন স্থানে থাকা চেকপোস্টগুলো সেভাবে সক্রিয় দেখা যায়নি। রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ডে রাইডারদের মোটরসাইকেল নিয়ে যাত্রীদের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। এই বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিলেন যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি দোকানের বিক্রয়কর্মী জাবেদ মিয়া। তিনি বলেন-আমাদের পাইকারি মুদি দোকান। দোকান খোলা। প্রতিদিন অনেক কষ্ট করে এটুকু পথ যেতে হচ্ছে। ভ্যানে করে যাই- পঞ্চাশ টাকা ভাড়া নেয়। পথে পুলিশ আটকে দেয়ায় কয়েকবার নেমেও গেছি। টিকা নিতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাবেন সারোয়ার হোসেন। তিনি বলেন-অটোরিক্সায় সানারপাড় থেকে রায়েরবাগ পর্যন্ত আসছি। পুলিশের ভয়ে অটোরিক্সা চালক আর সামনে যাবে না। তাই নেমে পড়েছি। রাস্তার অবস্থা দেখেন- বাস ছাড়া সবই আছে। সবই যখন চলছে বাস চালু করলেই হয়, তাতে মানুষের ভোগান্তি কিছুটা কমত। একটা মোটরসাইকেল চালকের সঙ্গে দামদর করলাম- দুশো টাকার নিচে ঢাকা মেডিক্যালে যাবে না। দেখেন মাত্র এইটুকু পথ। কি আর করা। এইত আমাদের নিয়তি।
×