ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

‘বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন উপেক্ষা করলে উন্নয়ন অর্থহীন হয়ে যাবে’

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ২৪ জুন ২০২১

‘বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন উপেক্ষা করলে উন্নয়ন অর্থহীন হয়ে যাবে’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আওয়ামী লীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার আয়োজিত এক ওয়েবিনারে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুরকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গতবার বছরে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। তবে উন্নয়নের মহাসড়কে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন তথা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উন্নয়ন দৃশ্যমান নয়। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন উপেক্ষা করলে আওয়ামী লীগ সরকারের এই উন্নয়ন অর্থহীন হয়ে যাবে। নির্মূল কমিটির কুমিল্লা জেলা শাখার আহŸায়ক অধ্যাপক দীলিপ মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই ওয়েবিনারের বিষয় ছিল : ‘আওয়ামী লীগের ৭২ বছর এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ঃ প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তি’। এ ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। প্রধান বক্তা ছিলেন নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। আলোচনায় অংশ নেন নির্মূল কমিটির আইন সহায়ক কমিটির সভাপতি বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, শহীদ ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের পৌত্রী সমাজকর্মী এ্যারোমা দত্ত, নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, নির্মূল কমিটি কুমিল্লা জেলা শাখার সদস্য সচিব এ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান শিকদার প্রমুখ। তোফায়েল আহমেদ বলেন, যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গঠিত হয়েছিল, স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জনের মাধ্যমে সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। ‘বঙ্গবন্ধু’, ‘বাংলাদেশ’ ও ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ প্রত্যেকটি শব্দ একে অন্যের সমর্থক। পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে একটি মামলায় সোহরাওয়ার্দী সাহেব কোর্টে বলেছিলেন, ‘ইফ মুজিব ইজ ডিজঅনেস্ট, দেন দ্য হোল ওয়ার্ল্ড ইজ ডিজঅনেস্ট’। বঙ্গবন্ধু ৬৬ সনে আওয়ামী লীগের সম্মেলন শুরু করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা’ গান দিয়ে- যা বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। আওয়ামী লীগের সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন বিভিন্ন সময়ে মৌলবাদীদের সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মতো অসাম্প্রদায়িক দল যেখানে ক্ষমতায়, সেখানে কিছুদিন আগে সুনামগঞ্জের শাল্লায় যে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমাদের কিছু ভুলত্রæটি আছে, যা থেকে আমাদের শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। ওয়েবিনারে শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, ‘প্রাপ্তি বা অর্জনের কথা যদি বলি আওয়ামী লীগের মতো সাফল্য বিশ্বের প্রথম দশটি রাজনৈতিক দলের অর্ধেকেরও নেই। আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির পিতা হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। প্রধানত বাঙালী মুসলমানদের ভোটে উপমহাদেশে ১৯৪৭ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্বে ধর্মীয় দ্বিজাতিতত্তে¡র ভিত্তিতে পাকিস্তান নামের যে কৃত্রিম মুসলিম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটেছিল, সেই পাকিস্তানে জিন্নাহ ও তার দল মুসলিম লীগকে চ্যালেঞ্জ করে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে তরুণ শেখ মুজিব কী কঠিন প্রতিক‚লতা মোকাবেলা করে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন মুসলিম লীগ ভেঙ্গে ঢাকায় আওয়ামী লীগ নামক একটি অসাম্প্রদায়িক দল গঠন করেছিলেন তার বস্তুনিষ্ঠ বিবরণ পাওয়া যাবে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে। আওয়ামী লীগের ইতিহাস ও বাংলাদেশের ইতিহাস একে অপরের সমার্থক। তবে এখন যারা আওয়ামী লীগের তরুণ নেতাকর্মী তারা আওয়ামী লীগের ত্যাগ ও সংগ্রামের ইতিহাস জানে না। একটানা এতবছর ক্ষমতায় থাকার কারণে হাল আমলের নেতাকর্মীরা দলের ইতিহাস, আদর্শ ইত্যাদি জানার চেয়ে দলের নাম ব্যবহার করে কীভাবে নিজেদের আখের গোছানো যায় তাতেই মত্ত থাকেন। আওয়ামী লীগের শতকরা এক ভাগ নেতাকর্মী বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ কিংবা বঙ্গবন্ধুর অন্যতম শ্রেষ্ঠ অবদান ’৭২-এর সংবিধান পড়েছেন কিনা সন্দেহ। বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, বঙ্গবন্ধুর দর্শন ছিল পৃথিবীর নির্যাতিত মানুষের দর্শন। বঙ্গবন্ধু শুধু বাঙালী জাতির মুক্তির জন্য নয় বরং ফিলিস্তিন, ভিয়েতনামের মতো নির্যাতিত দেশগুলোর মুক্তির জন্যও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা করেছেন। জোসেফ টিটো, ইন্দিরা গান্ধী, ফিদেল ক্যাস্ট্রোর মতো অনেক বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুকে পরম শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।
×