ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদাকে দ্রæত বিদেশ পাঠানোর দাবি

প্রকাশিত: ২২:৪৭, ২৩ জুন ২০২১

উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদাকে দ্রæত বিদেশ পাঠানোর দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে দ্রæত বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা ও তাঁর মুক্তি দাবি করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি দলের পক্ষে এ দাবি জানান। ফখরুল বলেন, ২০ জুন বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিএনপি মনে করে খালেদা জিয়া শুধু একজন বয়স্ক রাজনীতিবিদ নন, তিনি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অতুলনীয় অবদান রেখেছেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে তাঁর ভূমিকা রয়েছে। তিনি জনগণের ভোটে ৩ বার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। তার পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা প্রয়োজন। সব রাজনৈতিক সংকীর্ণতা থেকে বের হয়ে তার সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেশের মানুষের প্রাণের দাবি। মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিসক বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ এএফএম সিদ্দিকী জানিয়েছেন, তিনি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মুক্ত হলেও করোনা পরবর্তী কয়েকটি জটিলতায় ভুগছেন। তাই তিনি কোন মতেই ঝুঁকিমুক্ত নন। এভারকেয়ার হাসপাতালে নন কোভিড এরিয়ায় কয়েকজন নার্স এবং চিকিৎসক ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হলে ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে রাখা সমীচীন মনে করেননি। সে কারণে বাসায় চিকিৎসার ব্যবস্থা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের আয়োজন করে বাসায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। তবে যে বিষয়টি তারা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে যা অবগত করেন তা হচ্ছে, তাঁর লিভার ও ফুসফুসসহ অন্য জটিলতার চিকিৎসা বিদেশে কোন উন্নত কেন্দ্রে করানো প্রয়োজন, দেশে যার সুযোগ তুলনামূলকভাবে কম। তাই খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার ব্যবস্থা ত্বরান্বিত করা এবং তাঁর মুক্তি প্রয়োজন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা আগে বলিনি, খালেদা জিয়ার পরিবার বিদেশে প্রেরণের কথা বলেছিল। তবে আমরা এবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রেজুলেশন নিয়েছি যে, তাঁর বিদেশে চিকিৎসা দরকার। এর জন্য যা কিছু সরকারের করা উচিত ইমিডিয়েটলি। তারপরের যে স্টেপগুলো আছে পরবর্তীতে আলাপ-আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। মির্জা ফখরুল বলেন, করোনার টিকার অপ্রতুলতা দেশের মানুষের জীবনকে অনিশ্চিত করে ফেলেছে। শতকরা ৭০ ভাগ মানুষকে টিকা প্রদান করতে হলেও ২৬ কোটি টিকা প্রয়োজন, যার শতকরা ৩ ভাগও সংগ্রহ করতে পারেনি সরকার। করোনা টেস্ট, হাসপাতালে বেড, অক্সিজেন, আইসিইউ, ভেন্টিলেটারের অভাবে জেলা হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবা দেয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আর সরকার আরোপিত প্রথমে সাধারণ ছুটি ও অপরিকল্পিত লকডাউনে পরিস্থিতি ক্রমশ নাগালের বাইরে চলে গেছে। ভোজ্যতেলের দাম গত ৬ মাসে প্রতি লিটারে ৩৮ টাকা বা ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। বাণিজ্যমন্ত্রীর উক্তি, ‘দাম কমার কোন সম্ভাবনা নেই’ কোন মতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতার জন্য বাণিজ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে করোনাকালীন লকডাউন পরিস্থিতিতে দলের বিভিন্ন কার্যক্রম ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়। ফখরুল বলেন, লকডাউনের নামে সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে। তিনি বলেন, ঢাকাতে লকডাউন আছে। কোথায় লকডাউন? কেউ কি লকডাউন কোথাও দেখতে পান? যে যেখানে খুশি যাচ্ছে, যা খুশি করছে, এমনকি লকডাউনে অনুষ্ঠান করে বিয়েও হচ্ছে। আমি পরশু দিন দেখলাম একটা হোটেলে বিয়ে হচ্ছে। এটা সরকারের উদাসীনতা এবং এটা লোক দেখানো একটা বিষয়। ফখরুল বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লকডাউন বাস্তবায়ন করার কথা, কিন্তু তাদের তা করতে দেখা যায় না আজকাল। ফখরুল বলেন, আমি আগে অনেকবার বলেছি, আর বলতে চাই না। একটি বিশেষ প্রাণী পানি খায় ঘোলা করে। আমরা সরকারকে সুনির্দিষ্টভাবে বলেছি, করোনা মোকাবেলায় কি কি ব্যবস্থা নেয়া দরকার, তারা নেয়নি। বহুদিন পরে তারা এখন লকডাউন দিচ্ছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কবেই পদত্যাগ করা উচিত ছিল। দুর্ভাগ্যজনক তারা ডিফেন্ড করছে সবাই সবাইকে। এতো ভাল স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাকি আর হয় না। অবিলম্বে দেশের মানুষকে টিকা দেয়ার রোড ম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়ে ফখরুল বলেন, দেশের জনগণ জানতে চায়, সরকার এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য কি ব্যবস্থা গ্রহণ করছে? বিএনপি মহাসচিব বলেন, এনআইডি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেয়া দুরভিসন্ধিমূলক। প্রকল্পের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন চিঠি দেয়ার পরেও সরকার সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে দুই লাইনের একটা চিঠি দিয়ে। সরকার জনগণের পরিচয় নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। আমরা এহেন সিদ্ধান্তের নিন্দা জানাচ্ছি এবং সরকারকে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহŸান জানাচ্ছি। মাহবুবুর রহমান করোনাক্রান্ত \ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দলের নিষ্ক্রিয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বড় বোন আনারকলি ফরহাদ বানু নাগিনা আমিন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, আমার বড় বোন ও দুলাভাই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সোমবার তাদের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দেশবাসীসহ বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে তাদের জন্য দোয়া চাই। উল্লেখ্য, ৮২ বছর বয়সী লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান অষ্টম জাতীয় সংসদে দিনাজপুর-২ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। রাজনীতিতে আসার আগে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন।
×